কওমির তাদাখুল পদ্ধতি খুবই হাস্যকর
খসড়া প্রস্তাব | লাবীব আবদুল্লাহ
কওমী মাদরাসার মারহালার নামগুলো কিতাবভিত্তিক৷ কোথাও আবার বর্ষভিত্তিক৷ তিন দশক আগে খুসুসী জামাত নামে কোনো শ্রেণির নাম ছিলো না৷ এখন অনেক মাদরাসায় আছে৷ দরসে নেজামি ছিলো বাংলাদেশের কওমী ও আলিয়া মাদারাসাগুলোতে৷ আলিয়া উর্দু-ফার্সি বাদ দিয়েছে৷ বাদ দিয়েছে দরসে নিজামের অনেক কিতাবপত্র৷ আলিয়া মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড আরবী ও আরবী ব্যাকারণের কিতাবপত্র সংকলন করেছে৷ পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য নোট, গাইড ও সাজেশনের কারণে আলিয়া মাদরাসায় ইলমচর্চা অবক্ষয়ের শিকার৷ তবে ফাযেল. ও কামেল শ্রেণিতে কিছু কিছু আলিয়া মাদরাসায় মূল আরবী কিতাবের দরস হয়৷
বর্তমানে কওমী মাদরাসাগুলো সেই আলিয়ার পথে হাঁটছে৷ অনেক মাদরাসা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে উর্দু কিতাব৷ বাদ দেওয়া হয়েছে ফার্সি কিতাবও৷ কওমী মাদরাসা বিশেষ করে কওমী মহিলা মাদরাসায় বাংলা নোট গাইডের আগ্রাসনে আরবীও প্রায় বিদায় নেওয়ার পথে৷ বিশেষ করে উলূমে আলিয়া ( علوم آلیہ) এর কিতাবগুলো পড়ানো হচ্ছে বাংলায় অনুবাদ করে৷ তবে চট্টগ্রাম, সিলেটে এখনও উর্দু, ফার্সি কিতাব পড়ানো হয়৷
বিষয়টি উর্দু, ফার্সি ভাষা নিয়ে নয়; বরং কওমীর জন্য পাঠ উপযোগী কিতাব রচনা না করে উর্দু বা ফার্সির কিতাবগুলোর অনুবাদ করে পড়ানো হচ্ছে, এক সময় যা ছিলো কল্পনাতীত৷ কওমী মাদরাসায় আগে তাদাখুল পদ্ধতি ছিলো না৷ এখন কাফিয়া+ শরহেসজামী জামাতের তাদাখুল৷ তাদাখুল হেদায়া + জালালাইন জামাতেও৷ এটি একটি সংকোচনপদ্ধতি যা অনেক ক্ষেত্রে হাস্যকর৷ বেফায়দা৷
কারোর যুক্তিতে হয়তো এটিই ভালো৷ যাক কঠিন কিতাব বাদ দেওয়া, আরবী- ফার্সি উর্দু কিতাব বাংলায় অনুবাদ করে পড়ানো এটি অযোগ্য মাওলানা তৈয়রির কারখানা হতে পারে; কিন্তু যোগ্য আলেম তৈয়ার হবে না৷ স্বীকৃত সনদ নিতে আরও অনেক কিছু দেখার অপেক্ষা করতে হবে৷ সময় ইনহিতাত ও অবক্ষয়ের৷ কিন্তু নিজেরাই এই অবক্ষয়ের পথ রচনা করছে৷ এইসব বিষয় নিয়ে কথা বললে বা লিখলেও আবার কওমীবিরোধী বলা হয়৷ নানা লকব দেওয়া হয়৷ চেতনা জেগে ওঠে অনেকের৷ কিন্তু তিনি যে কওমীর সিলেবাস খুন করছেন তাতে সমস্যা নেই৷ তিনি যে যোগ্য আলেম হবার পথ রুদ্ধ করছেন তাতে কোনো কথা নেই৷
দরসে নেজামি পরীক্ষিত একটি সিলেবাস৷ কিছু সংযোজন, বিয়োজন ও পরিমার্জন করতে হবে কিন্তু যেভাবে অপরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে তা সঠিক পথ নয়৷
শিক্ষাবিদ আলেমগণ সম্মিলিত উদ্যোগ নিয়ে তা করলে ফলদায়ক হতে পারে৷ অন্যথা যে যার মতো সিলেবাসে যোগ ও বিয়োগ করলে তা হবে আত্মঘাতি পথ৷ যাক আমি আজ এ বিষয়ে কথা না বলে নতুন একটি বিষয়ে প্রস্তাব করছি৷
ফনভিত্তিক সাজানো যেতে পারে
উলূমে আলিয়া (علوم آلیہ)
ধাপ -১
প্রথমে আরবী ভাষার ভিত্তি তৈরিতে একটি এক বছরের কোর্স থাকবে৷ আরবী ভাষার আধুনিক পদ্ধতিতে ভাষা কোর্স করণে হবে তালেবে ইলমদের৷ অডিও ভিডিও শিক্ষাপদ্ধতিতে শিখানো হবে আরবী ভাষা৷
ধাপ-২
আরবী ভাষার ভিত্তি তৈরির পর নাহু পড়ানো হবে৷
ধাপ-৩
সরফ পড়ানো হবে
ধাপ- ৪
বালাগাত
ধাপ- ৫
উসূল হাদীস
ধাপ-৬
উসূলুত তাফসীর
ধাপ -৭
উসূলুল ফিকহ
ধাপ-৮
ইলমুত্তাজবীদ
ধাপ-৯
সাধারণ জ্ঞান ও ইসলামী জ্ঞান
ধাপ- ১০
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য৷
তবে আরবী ভাষার পর বাংলা ভাষার ধাপটি রাখা যেতে পারে৷
ধাপ – ১১ ইংরেজি ভাষা বা দাওয়াহর নিয়তে উন্নত একটি ভাষায় দক্ষতা অর্জন
ধাপ – ১২ অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং একুশ শতকের চাহিদা অনুযায়ী দুই বা তিন বছর অধ্যয়ন৷
এই দশটি ফনের দক্ষ হবার সময় সীমা সবার জন্য হয়তো সমান হবে না৷ ধীরে ধীরে সকল ধাপ অতিক্রম করলে তাকে উচ্চতর ইসলামী শিক্ষার অনুমতি দেওয়া হবে এবং দশ ধাপে তাকে উত্তীর্ণ হতে হবে ভালোভাবে৷ কোন ধাপে কী কিতাব থাকবে তার জন্য গবেষণা করে কিতাব নির্বাচন করতে হবে৷ জাদীদ ও কাদীম কিতাবের সমন্বয় হতে পারে৷
এই দশ ধাপের জন্য বর্ষ নির্ধারণ না করে সেমিস্টার পদ্ধতি হতে পারে৷ এরপর সম্পন্ন আরবী মাধ্যমে উলুমে আলিয়াعلوم عالیہ এর জন্য কমপক্ষে চার বছর৷ এই উচ্চ শিক্ষা তাফসীর হাদীস ও ফিকহ৷ শিক্ষার মাধ্যম সম্পন্ন আরবী৷ প্রয়োজনীয় ফনের একটি কিতাব হিফজ করানো যেতে পারে৷
লেখক : কওমি মাদরাসার শিক্ষক ও গবেষক
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়