দেহের সাথে ঈমান-আমল ও সেইফ রাখুন
মুহাম্মদ আইয়ূব ❑ ‘কোন পাগলের দেশে থাকিরে ভাই, আওয়ামীলীগে সব ছাগল ভরা। করোনা ভাইরাসের চেয়েও তাগো শক্তি বেশি। আল্লার ঠেলা এখনো খাও নাই। একটা বাঁশ আমরা তিনজন মিইল্যা উঠাইতে পারি না; আরেক পাগল কয় রানা প্লাজা নাকি বিএনপির পুলাপাইন ধাক্কায়া ভাঙছে। সারা দেশে হাজার হাজার মানুষ মরতাছে আর টিভিতে দেহাই দুই/তিন জন। সব মীর জাফরের দল সবাই নিজেরে বেইচ্যা লাইছে।’
পুকুর থেকে তাড়াতাড়ি গোসল সেরে চলে আসলাম। এখানে যতক্ষণ থাকব ততক্ষনি ফালতু বকোয়াস শুনতে হবে। গীবত করা যেমন পাপ শুনাও তেমন পাপ।
সাবধান! শুধু শরীর নয়, আসুন নিজের ঈমান আমলকেও সেইফ করি।
পাঠক! কি ভাবছেন, আমি কট্টর আওয়ামীলীগার? মোটেও নয়! আমি সত্যের পক্ষে অন্যায় আর মিথ্যার বিপক্ষে। মুসলিম হিসেবে আমি আমার ধর্ম থেকে এটাই শিক্ষা পেয়েছি। আসলে আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া তথা ফেসবুক, ইউটিউবের কল্যাণে সবাই এখন জ্ঞানী মহাজ্ঞানী। গুজবের ডাল পালা ছড়ানোর মোক্ষম বাগান এখন সোশ্যাল মিডিয়া। সত্য মিথ্যার বাছ বিচার এখন একশভাগের পঁচানব্বই ভাগ মানুষই করেনা। অনেককেই দেখেছি সোশ্যাল মিডিয়ার খবর ওহীর চেয়েও বেশী গুরুত্ব দিতে। সবার কাছে ঢালাওভাবে বলে বেড়াতে। একজন মুসলিম হিসেবে বিনা বিশ্লেষণে এধরনের খবর ছড়িয়ে আমি কিন্তু মস্ত বড় অন্যায় করে চলছি। নিজের অজান্তেই আপনা টুটা ফাটা আমলগুলোকে নিজ পায়ে মাড়াচ্ছি।
সাবধান! শুধু শরীর নয়, আসুন নিজের ঈমান আমলকেও সেইফ করি। এক্ষেত্রে কুরআন ও হাদিসের দিক নির্দেশনা সামনে রাখি। উম্মতের এই মহা ক্রান্তিলগ্নে নিম্নে আমি আমার পাঠকদের জন্য কুরআন ও হাদিস থেকে গুজব ও গীবত বিষয়ে একজন কুরআন ও হাদিসের শিক্ষার্থী হিসেবে কয়েকটি দলিল পেশ করার প্রয়োজন অনুভব করছি।
১। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা তা পরিক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত; তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।’ (সূরা হুজুরাত,আয়াত -৬)
২। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘হে মুমিনগণ! , তোমরা অনেক ধারণা হতে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গুনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারোও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ (সূরা হুজুরাত,আয়াত নং-১২)
৩। হযরত হাফস ইবনে আসেম রাঃ হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য ইহাই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তা-ই বলে বেড়ায়।’ (মুসলিম শরীফ, মুক্বাদ্দমা (অধ্যায় ৩) হাদিস নং ৫)
প্রিয় পাঠক! আশা করি গুজব ও গীবতের কদর্য দিকটি এতক্ষণে আপনাদের কাছে কিছুটা হলেও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গুজব ও গীবতের এ মহামারী থেকে বাঁচতে যারা বা যে সংগঠন বিভিন্ন ভাবে জাতীকে মূল্যবান দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন তাদের অন্যতম ‘আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ফোরাম’। তাদের একটি সতর্কবার্তা আমার দিল কেড়েছে তাই তাদের সে সতর্কবার্তাটাও আমার প্রিয় পাঠকদের উপকারার্থে নিম্নে তুলে ধরছি।
আল্লাহর দেয়া বুদ্ধী দিয়ে যেভাবে গুজব যাচাই করবেন!
ফেসবুক লাইভ: এটা ২০২০সাল। সবার হাতে হাতে মোবাইল। মানুষ মুহূর্তেই লাইভে চলে আসে। অথচ হাসপাতাল ভর্তি অসংখ্য মানুষ; কারো চোখেই পড়লনা? কিভাবে সম্ভব?
যে বলছে তার পরিচয় কি? এই যে আপনি শেয়ার করছেন, আপনার তো ঠিকই নাম- পরিচয় আছে। আপনি তো গোপন করার প্রয়োজন অনুভব করছেন না।তাহলে যে লোক চেহারা ঢেকে ভিডিও বা নাম- পরিচয়হীন অডিও ছাড়ছে,সে নিজেকে কেন গোপন করছে?
মূলধারার মিডিয়ায় এসেছে কিনা? প্রতিদিন সরকার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে শত শত রিপোর্ট মূলধারার গণমাধ্যমে আসছে।মন্ত্রী, আমলা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবার বিরুদ্ধেই সাংবাদিকরা স্বনামে লিখছেন। সেখানে এতো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ মিডিয়ায় কেন আসবে না?
ফেসবুক- ইউটিউবে পাওয়া যে কোন সংবাদ শুরুতেই অবিশ্বাস করুন। চোখ রাখুন মূলধারার সংবাদ মাধ্যমে। ফেসবুক ম্যাসেজ বা পোস্ট দিতে অর্থ ব্যয় হয়না। মূলধারার একটি পত্রিকা বা চ্যানেল চালাতে অর্থ ব্যয় হয়,সেই সাথে তাদের সেবা নিতেও গ্রাহককে অর্থ ব্যয় করতে হয়। তাই বিনামূল্য সেবায় অবিশ্বাস করুন। মূলধারার সংবাদ মাধ্যমের সেবা আপনার হাতের নাগালেই রয়েছে,অপেক্ষা করুন। সত্য প্রকাশিত হবেই। আর মিথ্যা; ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলেই হারিয়ে যাবে।
সুতরাং প্রিয় পাঠক! গুজবে কান দিবেন না। নিজে ভাল থাকুন, অপরকে ভাল রাখুন। ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন। দেশ ও দশকে নিরাপদ রাখুন। ধন্যবাদ।
লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক