- মুফতী মুহাম্মাদ আইয়ুব
মশারী টানিয়ে শুয়ে পড়ছি। অনেক চেষ্টা করেও ঘুম আসছে না চোখে। এবার সারাদিন কি করলাম সেই হিসাবে চলে গেলাম। কাজের হিসাব নিতে গিয়ে বারবার নবীজীর সেই বিখ্যাত হাদিসটির কথা মনে পড়তে লাগলো, প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
‘অন্ধকার রাতের মত ফিতনা আসার আগেই তোমরা নেক আমলের প্রভি অগ্রসর হও। সে সময় সকালে একজন মুমিন হলে বিকালে কাফির হয়ে যাবে। বিকালে মুমিন হলে সকালে কাফির হয়ে যাবে। দুনিয়ার সামগ্রীর বিনিময়ে সে তার দ্বীন বিক্রি করে বসবে।’ (সহীহ মুসলিম ২১৪)
বিবেককে এবার নিতান্ত অপারগ হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কিরে বারবার রাসূলের এই হাদিস কেন সামনে আসছে? পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আদালত তাচ্ছিল্যের সূরে বলে উঠলো, ‘মানুষ হ অমানুষ!’ বিবেকের সম্বোধনে সম্বিৎ ফিরে পেলাম। আসলেই তো, আজও আমি অমানুষ রয়ে গেলাম, কারণে অকারণে হড়হড় করে মিথ্যা বলছি দিনরাত! আমার কাছে মানুষ আমানত রাখতে ভয় পায়, ওয়াদা করি ভঙ্গ করার নিয়তেই।
জাহান্নামের তলদেশে যেতে যখন এই তিন মন্দ কাজই যথেষ্ট তারপরও আমি ক্ষান্ত হই না। সুদ খেয়ে আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বসেছি সেই কবে থেকে। নেশা করা মহাপাপ তারপরও ইয়াবা মদ গাঁজা হিরোইন ফেন্সি বাংলা এই তো আমার জানে জিগার। এতিম মিসকিনের মাল খেয়ে পেটে ভরছি আগুন, আবার অন্যের জমি দখল করে সাত তবক জমিন নিয়ে ঘুরছি গলায়। মোবাইল হাতে হারিয়ে যাই অন্ধকার জগতে, যে জগত আমাকে বলে বেরিয়ে যাও এখান থেকে, নইলে চক্ষু দুটো সীসাঢালাই করে দেয়া হবে কাল কেয়ামতে।
জুয়া খেলা হারাম আমি কিন্তু কম জানি না তারপরও ঐ যে লোভ! হারামে আরাম নাই আর লোভে পাপ পাপে মৃত্যু তাতে কি! মুখে মাটি না যাওয়া পর্যন্ত নফস থেকে পরিত্রাণ সুদূর পরাহত মনে হয়। মনের ভুলে টুকটাক যদি নেক করি তাও গীবতের মাধ্যমে দান করে দিচ্ছি অন্যকে। জুলুম করা মহাপাপ জানি তা ভালো করেই অথচ তা’ই করি দিন রাত দেদারসে। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে বঞ্চিত হচ্ছি জান্নাতের সুঘ্রাণ থেকে।
শুনছিলাম মা বাবা’র পায়ের নিচে আমার জান্নাত রক্ষিত, দূর ছাই বুড়ো-বুড়ি হালের বোঝা ভাব করে আজ আমি অপদস্ত। জীবন চলছে জাহান্নামে, আমি চলছি তারও আগে। অহংকার পতনের মূল জেনেও আমি ভীষণ অহংকারী! আচ্ছা, আমার কি আছে আর দাম্ভিকতা প্রদর্শনের আমিই বা কোন ছার? বিবেকের দংশন খেতে খেতে এখন আর কাজ করতে চায় না। বড্ড হতভাগা হয়ে গেছি।
নাহ, এভাবে তো চলতে পারে না, আল্লাহর মহা আমানত জীবন। তাহলে মুক্তি চাই এবার কি করা যায়? এবার মনে পড়লো নবীজীর আরো একটি সুন্দর পরিত্রাণের হাদিস, আল্লাহর রাসূল (সা.) শেষ জামানায় ফিতনার ভয়াবহ বিস্তার সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন-
‘শিগগিরই ফিতনা রাশি রাশি আসতে থাকবে। ওই সময় উপবিষ্ট ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির চেয়ে উত্তম (নিরাপদ), দাঁড়ানো ব্যক্তি ভ্রাম্যমাণ ব্যক্তি থেকে বেশি রক্ষিত। আর ভ্রাম্যমাণ ব্যক্তি ধাবমান ব্যক্তির চেয়ে বেশি বিপদমুক্ত। যে ব্যক্তি ফিতনার দিকে চোখ তুলে তাকাবে, ফিতনা তাকে গ্রাস করবে। তখন যদি কোনো ব্যক্তি তার দ্বীন রক্ষার জন্য কোনো ঠিকানা অথবা নিরাপদ আশ্রয় পায়, তাহলে সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করাই উচিত হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৬০১)
তাই ভাবছি বেঘোরে জীবনটা না দিয়ে তাকওয়াময় জীবনচর্চা শুরু করা দরকার এই এক্ষুনি। ভালো কাজে মনোনিবেশ করা ভীষণ প্রয়োজন বাঁচতে হলে। বিচ্ছিন্নতাবাদ পরিহার করে হানাফি মাজহাব শক্ত করে আঁকড়ে থাকবো। কারণ আমার ব্রেইন, চিন্তাশক্তি, বুঝ এখনো তলানিতেই আছে, সুতরাং মাজহাব নিয়ে অত বেশি মাতুব্বরি নিষ্প্রয়োজন।
উভয় জগতে বাঁচার জন্য পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর বিধান আঁকড়ে ধরার বিকল্প নেই ভেবেও কিছুটা আশ্বস্ত হলাম। সবার শেষে আমার বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ফিতনা থেকে আশ্রয় চাওয়া দরকার, মাশাআল্লাহ দোয়া পড়তেই চোখের পাতা বুজতে শুরু করলো।
- মুহতামিম: জামিয়া আবু বকর সিদ্দীক রা. মাদ্রাসা ও এতিমখানা, বলাকইড়, গোপালগঞ্জ