এবিসি জাবেরঃ উদ্যোক্তা ও সমাজকর্মী
দ্বিতীয়ত, আমাদের এমন সামর্থ্য নেই যে, আমরা চিকিৎসা ব্যয় বহন করবো। এরচেয়ে বড় কথা হল, আমরা ততোটা সচেতন নই বরং সচেতনতার এই ধারাকে এক প্রকার অতিরঞ্জিত বলে আমরা মনে করে থাকি।তৃতীয়ত, আবাসিক প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা দরকার যৌক্তিকভাবে, কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা বলে যৌক্তিক অনেক কিছুই এই সিস্টেমে উপেক্ষিত।
চতুর্থত, নৈতিকভাবে এই চিকিৎসা দেওয়ার আগে ব্যাপারটার সিরিয়াসনেস বোঝা জরুরী। নইলে ওয়াজে কাজ নেই।
সবশেষে, অনেক সচেতন কওমী মাদরাসা আছে যেখানে এই উদ্যোগ নেয়া হবে হয়তো কমিটি ও কমিউনিটির সহায়তায়, তবে শিক্ষাবোর্ডগুলো থেকে নির্দেশনা আকারে উদ্যোগ গ্রহণ এবং কঠোর নিরীক্ষণ এক্ষেত্রে নিকট অতীতের লকডাউন কালীন লাগামহীন বক্তব্যের কাজা-কাফফারা হিসেবে বিবেচনায় নেবে সাধারণ মুসলমানরা।
হাছিব আর রহমানঃ নির্বাহী সম্পাদক, পাবলিক ভয়েস
আমি একটু ভিন্নভাবে উত্তর দিতে চাই। ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে নয়।
প্রথমত, যাদের হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট – এধরণের বড় কোন রোগ নেই, তাদের ক্ষেত্রে আমি করোনা চিকিৎসা মোটেও ব্যায়বহুল বা দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা বলে মনে করি না। করোনা আক্রান্ত হলে কিছু সতর্কতা ও নিয়ম মেনে চললেই এ থেকে উত্তরণ সম্ভব। আমার এ মনে করাটা বিভিন্ন মেডিকেল টার্মস অনুসারেই।
দ্বিতীয়ত, কওমী মাদরাসা খুলে দেয়ার পর কোন মাদরাসায় কেউ আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ বা এ ক্ষেত্রে করণীয় কী হবে? এ বিষয়ে আমার মতামত হলো, যদি দেশের কওমী মাদরাসাগুলো সম্মিলিত পরামর্শের আলোকে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়, তখন এ বিষয়েও একটি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা যে, যদি কোনো ছাত্র-ছাত্রী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তখন তার ব্যাপারে মাদরাসাগুলোর করণীয় কী হবে।
তবে আমি মনে করি না একজন ছাত্রের চিকিৎসা ব্যয় মাদরাসার বহন করা উচিত। কারণ দেশের এই পরিস্থিতিতেও যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হবে, তারা নিজস্ব দায় থেকেই উপস্থিত হবে। অতএব রোগাক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসা ব্যয় মাদরাসা কর্তৃপক্ষের বহন করার কোন যুক্তি আমার দৃষ্টিতে নেই। কিন্তু মাদরাসাগুলো যদি খুলে দেয়ার সম্মিলিত সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে অবশ্যই করোনা সতর্কতা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশেষত করোনা ভাইরাসের কোনো উপসর্গ কারো মাঝে দেখা দিলে তাকে দ্রুত বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া অথবা কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
এছাড়া সম্মিলিত সিদ্ধান্তের বাইরে ব্যক্তিগত বা একক সিদ্ধান্তে প্রাতিষ্ঠানিক দায় থেকে যদি কোন প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয় এবং ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিত হতে নির্দেশ প্রদান বা বাধ্য করা হয়, সেক্ষেত্রে ঐ প্রতিষ্ঠানে কোন ছাত্র-ছাত্রী করোনা আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসা ব্যয় থেকে শুরু করে সবকিছুই উক্ত প্রতিষ্ঠানের বহন করা উচিত বলে আমি মনে করি।
আব্দুস সালামঃ সাবেক মুহাদ্দিস, জামি’আ ইকরা বাংলাদেশ
মাদরাসা একজন ছাত্রের চিকিৎসা ব্যয় কেন বহন করবে? এটি তো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান৷ আমরা জানি, শিক্ষা এবং চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। একটি পূরণ করছে মাদরাসাগুলো অপরটি করবে সমাজের সংশ্লিষ্ট অঙ্গ অথবা সরকার।
তবে সরকার ও প্রশাসনের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মাদরাসা খুললে বিষয়টা সহজতর হবে, মাদরাসা কর্তৃপক্ষের ততোটা চিন্তার প্রয়োজন পড়বে না এবং কোন দূর্ঘটনার দায়ও হয়ত নিতে হবে না।
মু’আযুল হক চৌধুরীঃ ইমাম, বিএম টাওয়ার জামে মসজিদ
মাদরাসাগুলো ছাত্রদের করোনা চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। কিছু প্রাইভেট মাদরাসা ছাড়া অধিকাংশ মাদরাসাগুলোই ধনাঢ্য ব্যক্তিদের আর্থিক সহযোগিতায় পরিচালিত হয়। দাতাদের যাকাত, সদকা ইত্যাদি নির্দিষ্ট ফান্ডে চলে যায়। কথা হচ্ছে, মাদরাসার তো এমন কোন আলাদা ফান্ড নেই, যা দিয়ে ছাত্রদের করোনার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করবে। অধিকাংশ মাদ্রাসাগুলোর আর্থিক অবস্থা খুব দুর্বল। তাদের শিক্ষকমন্ডলি, সটাফদের বেতন দেয়াও অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। তাই দীর্ঘদিন ধরে এই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে যেখানে কমবেশি সবার আর্থিক অবস্থাই খারাপ, সেখানে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত একটি খাতে অর্থব্যয় করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।
তবে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া ও অন্যান্য শিক্ষাবোর্ডগুলোর উচিৎ এবিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া, যেহেতু বেফাকসহ অন্যান্য বোর্ডগুলো এই ছাত্রদের টাকায় পরিচালিত হয়। বিশেষত বেফাকের আর্থিক অবস্থাও বেশ ভালো, যা বেফাকের কর্মকর্তাদের বিলাসি জীবনযাপন ও বেফাকের কোটি কোটি টাকার ভূসম্পত্তির দিকে তাকালেই আমরা বুঝতে পারি। তাই এই বিশেষ পরিস্থিতিতে, মাদরাসার ছাত্রদের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করতে আমি বেফাকের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। ছাত্রদের কষ্টার্জিত টাকা ছাত্রদের জন্যই খরচ করা হোক।