‘এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছেন আলেমসমাজ’

‘এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছেন আলেমসমাজ’

‘বৈষয়িকভাবে স্বাধীন হয়েছি, কিন্তু আত্মা স্বাধীন হয়নি’

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিয়েছে ইসলামী যুব আন্দোলন। মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাব ঢাকার আব্দুল সালাম হলে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম, প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম, ফিদায়ে মিল্লাত আসআদ মাদানী (রহ.) এর খলীফা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, সভাপতিত্ব করেন ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ নেছার উদ্দীন।

ইসলামের সাথে স্বাধীনতাযুদ্ধের কোনো বিরোধ নেই উল্লেখ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, আল্লাহ তাআলা সবাইকে স্বাধীন করেই সৃষ্টি করেছেন। মানুষ স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করবে এটাই তিনি চান। তাই তো পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্য, বঞ্চনা, শোষণ ও আক্রমণের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ-সংগ্রাম তথা মুক্তিযুদ্ধের আলেমসমাজও অংশ নিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা বৈষয়িকভাবে স্বাধীন হয়েছি। আমাদের দৈহিক সত্তা স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু আমাদের আত্মা এখনো স্বাধীন হয়নি। আত্মার স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজন নির্মোহ অবস্থা, শয়তানের ধোকা থেকে বেঁচে থাকা ও ইবাদত করা। যতক্ষণ না আমাদের আত্মা স্বাধীন হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা প্রকৃত অর্থে স্বাধীন নয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান, তারা নিজের জীবন বাজি রেখে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য লাল সবুজের পতাকা ছিনিয়ে এনেছিল। কিন্তু স্বাধীনতা ৫০ বছর অতিক্রম করলেও এখনো মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক দাবি পূরণ হয়নি। মানুষের ভোটাধিকার ও ভাতের অধিকারের জন্য আমরা পাকিস্তানিদের থেকে স্বাধীন হয়েছি কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সংবিধান স্বীকৃত নির্বাচন কমিশন আইন গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছি। যার ফলে বারবার দলীয় মদদপুষ্ট মেরুদন্ডহীন নির্বাচন কমিশন গঠন হয়।

তিনি আরও বলেন, এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছেন আলেমসমাজ, তাদের অবদান পাস কাটিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অসম্ভব। অতএব তাদেরকে বাদ দিয়ে অথবা তাদের চেতনার বিরোধী কোনো বিষয়ক মুক্তিযুদ্ধের সাথে যুক্ত করার প্রবণতা সুফল হবে না।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর বলেন, ১৯৭১ সালে দেশের মানুষ স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইনশাআল্লাহ বলে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন, তখনই দেশের মানুষ মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং লাল সবুজের পতাকা ছিনিয়ে আনে। তাই একথা স্পষ্ট প্রমাণিত ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য নয়; ব্যক্তি স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা নেছার উদ্দিন বলেন, আজকের এই প্রোগ্রাম প্রমাণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দেশের ইসলাম নামধারী সংগঠন স্বাধীনতা বিরোধী ছিল, কিন্তু তারা এদেশের বৃহত্তর আলেম সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না। অতএব তাদের দায়ভার কোনভাবেই এদেশের আলেম সমাজ গ্রহণ করবে না। মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর, মাওলানা সৈয়দ ইসহাক ও মাওলানা কাজী মুতাসিম বিল্লাহসহ অনেক প্রতিনিধিত্বশীল আলেমরা মুক্তিযুদ্ধে পক্ষের শক্তি ছিলেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা রুহুল আমীন খান উজানভী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী আল আজহারী, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আবুল কাশেম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা উবায়দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্বারী আলতাফ হোসেন রাঢ়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা শওকত আমিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফেজ শওকত আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা কাবীরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফেজ মাওলানা মুহাম্মাদ আলী প্রমুখ।

আরও পড়ুন: আলেম মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিলো ‘আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ফোরাম’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *