চাল-তেলে ঊর্ধ্বমুখী, সবজিতে স্বস্তি
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম :: কিছুদিন যাবত চাল-তেলের দাম লাগামহীন। চালের দাম আরও বেড়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে নাজিরশাইল ও মিনিকেট দুই ধরনের চিকন চালের দামই বেড়েছে। যে চালের দাম ছিল ৬৪ টাকা কেজি, আজ সেই চাল ৬৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় চিকন চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২ টাকা। এছাড়ার রাজধানীর বাজারগুলোয় গত সপ্তাহে যে চালের দাম ছিল ৫৮ টাকা কেজি।
শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হলে তবেই চালের দাম কমবে। এ প্রসঙ্গে কাওরান বাজারের চাল ব্যবসায়ী আবদুল হাকিম বলেন, মোকাম থেকেই চালের দাম বাড়তি। সে কারণে খুচরা বাজারে চালের দাম কমছে না। তারা প্রতি কেজিতে ২০-৩০ পয়সা লাভে চাল বিক্রি করছেন। বেশ কিছুদন ধরে বাড়ছে এই চালের দাম। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি’র হিসাবে গত বছরের এই সময়ে যে চাল ৫০ টাকা কেজিতে পাওয়া যেত এখন সেই চালের কেজি ৬০ টাকা। টিসিবি’র তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে চিকন চালের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩৭ শতাংশ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোটা চালের দাম এখন ৪৮-৫০ টাকা কেজি। মাঝারি ধরনের চালের দাম ৫৮-৬০ টাকা কেজি এবং চিকন চালের দাম প্রতি কেজি ৬৫-৬৬ টাকা।
বাজার করতে আসা অনেকে বলছেন, দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে লাগামহীনভাবে বাড়ছে চালের দাম। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী খালপাড় এলাকার বাসিন্দা আবদুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘এভাবে চালের দাম বাড়তে থাকলে মানুষ ভাত খাওয়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে। চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষদের চরম কষ্ট হচ্ছে।’ তবে কয়েক মাস ধরেই সব ধরনের সবজির দাম কম। অধিকাংশ সবজি ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে মিলছে। সবজিতে স্বস্তি থাকলেও মাংস ও মাছের বাজার চড়া। মূলত শীতের মৌসুম শুরুর পর থেকেই সবজির দাম যথেষ্ট কম। শীত শেষ হয়েছে বেশি কিছুদিন। তারপরও বাজারে অধিক পরিমাণে রয়েছে শীতকাল সবজি। অধিকাংশ সবজির কেজি ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। শুক্রবার রায়ের বাজার, ঝিগাতলা কাঁচাবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেগুনের কজি ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা, গাজরের কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, শিমের কেজি ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা, টমেটোর কেজি ২০ টাকা, কাঁচা মরিচের কেজি ৪০ টাকা থেকে ৫০, পেঁপের কেজি ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা, প্রতিটি লাউ ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, ফুলকপি ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা, বাঁধা কপি ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা, শালগম ২০ টাকা, করোলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, সজনেডাঁটা ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা। হলান্ডের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা কেজি। আলুর কেজি ১৫ টাকা। ইন্ডিয়ান মসুর ডাল ৮০ টাকা কেজি, দেশি মসুর ডাল ১১০ টাকা কেজি। রসুন ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা কেজি, আদা ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর বড় বাজারগুলোর থেকে পাড়া-মহল্লার দোকানে দাম কিছুটা বেশি লক্ষ্য করা যায়। বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত তেল ১৩৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। যদিও গায়ের মূল্য ১৩৫ টাকার বেশি। খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা কেজি। ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দা। নির্ধারণ করে দিয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সংক্রান্ত দর নির্ধারণ কমিটি। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খোলা সয়াবিন প্রতিলিটার খুচরা ১১৫ টাকা, বোতলজাত ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
রায়েরবাজারের মুদি-দোকানি আরমান বলেন, তেলের দাম কয়েক দফা বৃদ্ধির পর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। বোতলজাত তেলের গায়ের মূল্য বেশি থাকলেও সরকারের বেধে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকার প্রতিলিটার খোঁলা তেলের ১১৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে, আমরা ১২৫ টাকা কেজি বিক্রি করছি। লিটার হিসাবে সরকারের দামই পরে। বয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, কক মুরগি ২০০ টাকা কেজি, গরুর মাংস ৫৮০ টাকা, খাসির মাংস ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি মুরগীর জোড়া বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। ডিমের ডজন ৮২ থেকে ৮৫ টাকা। মাছের বাজারও বেশ চড়া। বড় সাইজের কতলা ও রুই ৩৫০ টাকা, মাঝামাঝি সাইজের ২৭০ ও ছোট সাইজের কেজি ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।সবজির দরে স্বস্তির পর্যায়ে থাকলেও ক্রেতাদের ভোগাচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মাসের ব্যবধানে বাজার ভেদে বেড়েছে ৩০ টাকা পর্যন্ত। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকার মধ্যে। আর মাসখানেক আগে ব্রয়লারের কেজি ছিল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা।