জনস্বার্থকে সামনে রেখে সংস্কার করতে হবে; প্রধান উপদেষ্টা

জনস্বার্থকে সামনে রেখে সংস্কার করতে হবে; প্রধান উপদেষ্টা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : জনস্বার্থকে সামনে রেখে রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে সংস্কার পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এজন্য মন্ত্রণালয়গুলোর সচিবদের নিজ পরিকল্পনা এক পাতার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠাতে বলেছেন তিনি। সরকার গঠনের পর প্রথমবারের মতো সচিবদের সাথে বৈঠকে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে বেলা ১১ টায় অনুষ্ঠিত সচিব সভায় সরকারের সচিবদের উদ্দেশ্যে তিনি এ সব কথা বলেন। বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক সচিবের সাথে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে। সভায় ৬৮ জন সিনিয়র সচিব ও সচিব অংশ নেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো: মাহবুব হোসেনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সরকারের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। সচিবদের মধ্যে ১০ জন সভায় বক্তব্য রাখেন।
সভায় সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সচিবদের বলেন, সৃষ্টিশীল ও নাগরিকবান্ধব মানসিকতা নিয়ে প্রতিটি মন্ত্রণালয়-বিভাগ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কর্মসূচির কর্মপরিকল্পনা মাত্র এক পাতায় দাখিল করতে হবে। অধিক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে কী কী সমস্যায় পড়ছেন, তা চিহ্নিত করে সেগুলো সংস্কার করুন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান শাসনামল এবং বাংলাদেশের আমলের দীর্ঘ অর্ধশতাব্দী পার হয়ে গেল। অথচ আমরা এখনো সেই ব্রিটিশ আমলের চিন্তা এবং ধ্যান-ধারণা নিয়েই পড়ে আছি। নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য গৎবাঁধা চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে চিন্তার সংস্কার করে সৃজনশীল উপায়ে জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

স্বাধীনভাবে নব উদ্যোমে অধিক্ষেত্রে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। দুর্নীতি কঠোর হাতে দমন করতে হবে। সাহসের সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারো কোনো কথায় কান না দিয়ে বিবেকের ওপর আস্থা-বিশ্বাস রেখে সততার সাথে সরকারি দায়িত্ব সম্পন্ন করতে হবে। সরকারের সব কাজ হবে মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণে ও জনস্বার্থে। চাহিদা অনুসারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা বৈষম্যহীন মানবিক দেশ গড়ার যে প্রত্যয়, যে ভয়হীন চিত্ত উপহার দিয়েছে, তার ওপর দাঁড়িয়ে বিবেক ও ন্যায়বোধে উজ্জীবিত হয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠা ও জবাবদিহি নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সৃষ্ট নতুন বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে আগ্রহ, ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে, দেশের স্বার্থে তা সর্বোত্তম উপায়ে কাজে লাগাতে হবে। দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। সরকারি অফিসে সেবা নিতে গিয়ে মানুষকে হয়রানি শিকার হতে হয়। সুবিধা না দিলে সেবা মেলে না। এ সব আর চলবে না। সরকারি অফিস হবে মানুষের ভরসাস্থল। সেখানে উল্টো জনগণকে তুচ্ছজ্ঞান করা হয়। আপনাদের সবাইকে কাজের, স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা এবং ভাবনার সুযোগ দেয়া হলো।

নিজেদের মতো করে ভেবেচিন্তে জনস্বার্থ ও মানুষের অধিকার সমুন্ন রেখে নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করুন। কেউ বাধা দিতে এলে পাত্তা দেবেন না। এত সব স্বাধীনতা দেয়ার পরও যদি কেউ ফেল করেন কিংবা ব্যর্থ হন, তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

তিনি আরো বলেন, দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে সেবা সহজ করার মাধ্যমে জনগণের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। সরকারি অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি কেনাকাটায় যথার্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে হবে। যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রেখে জনগণের নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর, বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিতে হবে। কথায় নয়, জনগণ এখন কাজে বিশ^াস করেন। কাজের মাধ্যমে তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে সরকার তাদের স্বার্থে কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জনগণের কাজে গভীর মনোযোগী হতে হবে। জনগণ যাতে অতীত এবং বর্তমান সরকারের কাজের পার্থক্যটা অনুধাবন করেন। এ পার্থক্য তো তাদের সেবা দিয়ে বোঝাতে হবে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এটিই প্রথম সচিবসভা। এর আগে নিজের অধীন থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সাথে বৈঠক করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা।

 

Related Articles