পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ডলারের দাম আরও ৫০ পয়সা বেড়েছে। মঙ্গলবার আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে প্রতি ডলার বেচাকেনা হয়েছে ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা দরে, যা আগের দিন ছিল ৯২ টাকা ৯৫ পয়সা।
মঙ্গলবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমদানির জন্য প্রতি ডলার বিক্রি করেছে ৯৩ টাকা ৫০ পয়সা দরে। আগের দিন এ খাতে প্রতি ডলার বিক্রি করেছিল ৯৩ টাকা করে। দুই খাতেই গড়ে ডলারের দাম ৫০ পয়সা বেড়েছে। ফলে ওই হারে টাকার মান কমেছে।
সূত্র জানায়, বাজারে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। যে কারণে ডলারের দাম বেড়েই চলেছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে ব্যাংকগুলো আমদানির জন্য প্রতি ডলার ৯৩ টাকা করে বিক্রি করে আসছিল। মঙ্গলবার তা ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ৯৩ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি শুরু হয়।
এদিকে বাজারের চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৪ কোটি ২০ লাখ ডলার জোগান দিয়েছে ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা দরে। ফলে চলতি অর্থবছরের এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে বাজারে ছেড়েছে ৭২০ কোটি ডলার। ওই সময়ে বাজার থেকে কোনো ডলার কিনেনি। অথচ আগের অর্থবছরে বাজারে ছেড়েছিল কম। বাজার থেকে কিনেছিল বেশি। কেননা ব্যাংকগুলোর কাছে কোটার অতিরিক্ত ডলার থাকলে তা অন্য ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে হয়। অন্য ব্যাংক না কিনলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে হয়।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪ হাজার ১৬০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। গত আগস্টে রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। রেমিটেন্স প্রবাহ কমায় ও আমদানি ব্যয় বাড়ায় রিজার্ভ বাড়ছে না। অথচ গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত রিজার্ভ বেড়েই চলেছিল।
গত বছরের ৩০ জুন আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা। আলোচ্য সময়ে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে ৯ টাকা ৪৫ পয়সা।
ব্যাংকগুলো রপ্তানি বিল কিনছে ৯২ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ৯২ টাকা ৫০ পয়সা দরে। রেমিটেন্স কিনছে ৯২ টাকা ৪০ থেকে ৭০ পয়সা দরে। তবে কোনো কোনো ব্যাংক রপ্তানি বিল ও রেমিটেন্স আরও বেশি দামে কিনছে। এ ছাড়া আমদানির দেনা পরিশোধে আগাম ডলার বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি দামে। তিন মাস মেয়াদে ৯৫ থেকে ৯৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে ৯৬ থেকে ৯৭ টাকা দরে। কেননা নগদ ডলারের তীব্র সংকট রয়েছে। অপরদিকে কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার গড়ে ৯৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ডলার মিলছে না। করোনা পরবর্তীতে হঠাৎ করে চাহিদা বাড়ার কারণে ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। এর ফলে আমদানি ব্যয়ও বেড়েছে। কিন্তু যে হারে আমদানি ব্যয় বেড়েছে সে হারে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বাড়েনি। এ ছাড়া করোনার সময়ে বৈদেশিক ঋণ ও এলসির স্থগিত দেনা এখন শোধ করতে হচ্ছে যে কারণে ডলারের চাহিদা বেশি।
চলতি অর্থবছরের জুলাই এপ্রিলে রেমিটেন্স কমেছে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। আমদানি বেড়েছে ৫০ শতাংশ। রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। দেশের মোট আমদানি ব্যয়ের ৬০ শতাংশ রপ্তানি আয় দিয়ে মেটানো হয়। বাকি ৪০ শতাংশ রেমিটেন্স দিয়ে। গত নভেম্বর থেকে রেমিটেন্স কমছে। এতে এখন আর রেমিটেন্স দিয়ে ঘাটতি মেটানো যাচ্ছে না। ফলে সংকট বেড়েই চলেছে।