পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : সারা দেশে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। পৌষের প্রথম ভাগে শীত কম থাকলেও দ্বিতীয় ভাগে বেশ বেড়েছে। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা হিমেল বাতাস নিয়ে এসেছে কনকনে ঠাণ্ডা। এতে কাঁপছে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষ।
তিন জেলায় শৈত্যপ্রবাহমধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে প্রায় সব জেলা। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসায় উত্তরের তিন জেলার ওপর দিয়ে বইছে শৈত্যপ্রবাহ, যা আরো দু-এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী কিছুদিন শীতের তীব্রতা খুব বেশি বাড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। আগামীকাল শুক্রবার থেকে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক গতকাল রাতে বলেন, ‘তাপমাত্রা সামনের দিনে সামান্য বাড়তে পারে। তবে দু-এক জায়গায় শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে। বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা দেখছি না এখনই।
গতকাল ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার তাপমাত্রাও আগামী কিছুদিন ১৪ ডিগ্রির নিচে নামার সম্ভাবনা নেই।’
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, ৫ জানুয়ারির পর থেকে দেশব্যাপী চলমান কুয়াশা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। গতকাল মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, ৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
উত্তরের এই জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি) শৈত্যপ্রবাহ। দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দিনাজপুরে গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৫ ডিগ্রি ও নীলফামারীর ডিমলায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, আগের দিনের তুলনায় গতকাল সারা দেশে তাপমাত্রা কমেছে ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গতকাল আবহাওয়া অফিসের দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে অতি ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে কুয়াশা। এতে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হতে পারে। সারা দেশে আজ দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে সামান্য বাড়তে পারে রাতের তাপমাত্রা।
শনিবারের দিকে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে, অর্থাৎ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে কিছুটা মেঘলা আবহাওয়া থাকতে পারে। দু-এক জায়গায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।
শীতে কাবু উত্তরের মানুষ
উত্তরের জেলাগুলোতে গতকাল শীতের তীব্রতা কিছুটা বেশি ছিল। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭ থেকে ১২ ডিগ্রির মধ্যে। ঘন কুয়াশা আর ঠাণ্ডা বাতাসে উত্তরের জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ।
জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এবার জেলায় শীতবস্ত্র এসেছে প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার। তবে শীতবস্ত্র বিতরণে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না বলে জানায় স্থানীয় লোকজন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শীতার্তদের সংখ্যায় তুলনায় শীতবস্ত্রের বরাদ্দ অনেক কম।
শীতবস্ত্র বরাদ্দ ও বিতরণের বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার আমি রাইট পারসন না। বক্তব্য দেবেন জেলা প্রশাসক।’
পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি জানান, উপজেলায় গত মাসে সরকারিভাবে তিন হাজার ৬৯০টি কম্বল পাঠানো হয়। এসব কম্বলের থেকে ৯টি ইউনিয়নে ১৫০টি করে কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলার তাম্বুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রশিদ মুকুল বলেন, ‘শীতার্ত দরিদ্র মানুষের জন্য ১৫০টি কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। খানা জরিপ অনুযায়ী আমার ইউনিয়নে পাঁচ হাজার দরিদ্র পরিবার রয়েছে। সে হিসেবে বরাদ্দের পরিমাণ আরো বাড়ানো উচিত।’
গত মঙ্গলবার গভীর রাতে পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশনে ছিন্নমূল মানুষের মাঝে কম্বল পৌঁছে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হক সুমন। একই দিন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল আজিজের উপস্থিতিতে ছাওলা ইউনিয়নে কম্বল বিতরণ করা হয়।
ইউএনও নাজমুল হক সুমন বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যানদের মাঝে কম্বল ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা নির্বাচনের পর বিতরণ করতে চাইছেন। তবে শীত জেঁকে বসায় আমি দ্রুত বিতরণ করতে বলেছি।’