দেশে গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি

দেশে গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : দেশের ঘরে ঘরে রয়েছে গ্যাস্টিকে আক্রান্ত রোগী। এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যেখানে একের অধিক সদস্য গ্যাসের সমস্যায় ভুগে ওষুধ সেবন করছেন না। দিনে দিনে গ্যাস্টিক হয়ে উঠেছে মানুষের নিত্য দিনের সমস্যা। আমাদের এমন কোনো বাসা বাড়ি পাওয়া যাবে না যেখানে অন্তত গ্যাসের এক পাতা ওষুধ নেই। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন ও ফাস্টফুড কালচারে অভ্যস্ততা, ঘুমের সময়ে পরিবর্তন ও অনিয়মিত ঘুম, মানসিক চাপ, ধূমপান ও অ্যালকোহল পানসহ নানা কারণে গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যুরো পরিচালিত গৃহস্থালির আয় এবং ব্যয় সমীক্ষা পরিচালিত হয় ২০২২ সালে, যার প্রতিবেদন প্রকাশ হয় ২০২৩। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোগের দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে গ্যাস্ট্রিক ও আলসার। দেশে রোগে আক্রান্ত নারী ও পুরুষের মধ্যে সর্বাধিক ২০.৮ শতাংশ মানুষ গ্যাস্ট্রিক আলসারে ভুগছেন। তালিকায় এরপরের স্থানে রয়েছে রক্তচাপ। ১২.১৬ শতাংশ মানুষ উচ্চ/নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় রয়েছেন। রক্তচাপকে বলা হয় নীরব ঘাতক। অধিকাংশ মানুষ মনের অজান্তেই এই সমস্যা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। রক্তচাপের সমস্যা থেকে পরবর্তীতে ডায়াবেটিস, স্ট্রোকসহ নানা রোগের জন্ম হয়। দেশের ১২.১৬ শতাংশ মানুষ বাতের অসুখে ভুগছেন। হাঁপানি ও শ্বাসজনিত রোগে ভুগছেন ৮.৪৫ ও দীর্ঘস্থায়ী হৃদরোগে আক্রান্ত মানুষ ৭.৬৩ শতাংশ।

গ্যাস্ট্রিক আলসারে সাধারণত নাভির ওপরে পেটে ব্যথা হয় যা খালি পেটে অথবা ভোররাতের দিকে তীব্র হয়, সঙ্গে গলা-বুক-পেট জ্বলে ও টক ঢেঁকুর ওঠে। ঝাল-তেল-মসলাজাতীয় খাবারে এই সমস্যা আরও বেশি হয়।

বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হিসাবে দেখা যায়, দেশে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। যার অধিকাংশই বিক্রি হয় কোনো ধরনের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই। সাধারণ মানুষের ধারণা গ্যাস্টিকের ওষুধ খেলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না, তারা বাড়ির পাশের ওষুধের দোকান বা ফার্মেসি থেকে ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন। কিছুদিন আগেও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনের তালিকায় অ্যান্টিবায়োটিক শীর্ষস্থানে থাকলেও বর্তমান অ্যান্টিবায়োটিকের জায়গা দখল করেছে গ্যাস্টিকের ওষুধ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকদের এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ওষুধ হচ্ছে ‘গ্যাসের ওষুধ’। এটি এখন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া ওষুধের তালিকায় শীর্ষে। তারা জানান, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে ডায়রিয়া পর্যন্ত পেটের যে কোনো রোগের জন্য সাধারণত মানুষ গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে থাকেন। দীর্ঘদিন এর ব্যবহার শরীরে অপূরণীয় ক্ষতি করতে পারে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেটের ব্যাথা হলেই তা গ্যাস্ট্রিক নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনোভাবেই ওষুধ খাওয়া যাবে না। তারা বলেন, কেবল সাধারণ মানুষ নয় চিকিৎসকরাও ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, বিভিন্ন ধরনের ব্যথার মতো সাধারণ সমস্যাগুলোকে গ্যাস্ট্রিকের সঙ্গে এক করে ফেলেন এবং গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ লিখে দেন। এটা ঠিক নয়, নির্বিচারে গ্যাসের ওষুধ খেলে অপুষ্টি, ডিমেনশিয়া, ক্যানসারসহ অন্যান্য অনেক স্বাস্থ্য জটিলতার কারণ হতে পারে।

তারা বলেন, আয়রনের অভাবে যেসব রোগী রক্তশূন্যতায় ভোগেন তাদের বেশীরভাগের ক্ষেত্রেই দেখা যায় দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের ওষুধ সেবন করার ইতিহাস আছে। এই রোগীরা হয়তোবা নিজেরাও জানেন না তাদের আয়রনের অভাব হওয়ার বড় কারণ গ্যাসের ওষুধ সেবন। কোনো অবস্থাতেই দুই মাসের বেশি সময় ধরে কোনো গ্যাসের ওষুধ সেবন করা উচিত নয়।

Related Articles