পদ্মা সেতু জাতীয় সম্পদ

পদ্মা সেতু জাতীয় সম্পদ

  • আমিনুল ইসলাম কাসেমী

পদ্মা সেতু আমাদের জাতীয় সম্পদ। এটা বাংলাদেশের ১৬ কোটি জনতার। এটা কারো ব্যক্তিগত সম্পদ নয়। পদ্মা সেতু এদেশের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সব মানুষের সম্পদ। সুতরাং এর রক্ষাণা-বেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের। প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব এ সম্পদ রক্ষা করা। আমরা যেমন নিজেদের মাল-সামানা অত্যন্ত যতন করে রাখি, তদ্রুপ এই জাতীয় সম্পদকে অনেক যত্নের সাথে রাখা উচিত।

বড় পরিতাপের বিষয়, এমন এক সম্পদের প্রতি কিছু মানুষের অনিহা ভাব। কেউ এটাকে নিয়ে যেন তামাশা শুরু করেছেন। কেউ এবিষয়টাকে নিয়ে ছেলে খেলায় মেতে ওঠেছেন। কেউ এটা নিয়ে হাসি-তামাশায় ব্যস্ত। কেউ কেউ এটার প্রতি রাজনৈতিক দৃষ্টি ফেলাচ্ছেন। যার কারণে এত্ত বড় এক গর্বের বস্তু হওয়ার পরেও পদ্মা সেতুর সাথে তাদের যেন দুশমুনি।

প্রথমতঃ দেশের উন্নয়নের সাথে রাজনৈতিক প্রতি হিংসা রাখা ঠিক নয়। একটা ছোট্ট দেশের সরকার অসাধ্য সাধন করেছেন। দেশের সকল কিছু ঠিক রেখে উন্নয়নের স্রোত বিদ্যমান রাখা সাধারণ বিষয় নয়। তারপরেও নিজের দেশের টাকায় এক বড় সম্পদ দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে আমাদের সরকার। যেখানে পার্শ্ববর্তি অনেক দেশ দেওলিয়াপনায় ভুগছে, নিজেদের কোমর সোজা করে দাঁড়ানোর শক্তি নেই, সেই মুহুর্তে আমাদের বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এরমত আনন্দের বিষয় হতে পারেনা।

সরকারের যে কিছু ভুলত্রুটি নেই তা নয়। এটা ক্ষমতাসীন সকল দলের থাকে। তারপরেও এই সরকার আপন গতিতে উন্নয়ন মুলক কাজ দেখাতে পারছে, সেটা প্রশংসনীয়। এজন্য পদ্মা সেতু এ সরকারের উন্নয়নের এক মাইলফলক। অনেক দৃঢ়তার সাথে মহান কাজটি তার দ্বারা সম্ভব হয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ সরকারের ভালো কাজের ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া উচিত। সরকারের সমালোচনা গঠনমুলক হওয়া চাই। কোনো ভাল কাজকে পজেটিভ ভাবে দেখা চাই। কিন্তু সেখানে যদি রাষ্ট্রীয় সম্পদকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, সেটার অবমাননা করা, সেটাকে অযতন করা বড় নিন্দনীয় কাজ।

আমরা বিভিন্ন ভিডিও এর মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি, পদ্মা সেতৃর উপরে গিয়ে নাট-বল্টু খুলছেন, কেউ সেখানে মলমুত্র ত্যাগ করছেন, কেউ সেতুটির অমঙ্গল কামনা করছেন, যেটা খুবই গর্হিত কাজ। দেশের সম্পদের উপরে সকলের ভালবাসা থাকা উচিত। “হুব্বুল ওয়াতনে মিনাল ঈমান” দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। দেশের প্রতি টান, দেশের সম্পদের প্রতি সকলের টান থাকা উচিত। তার প্রতি প্রেম- ভালবাসা থাকা চাই।

একজন দেশের সুনাগরিক তো রাষ্ট্রের সম্পদকে যত্ন করে রাখবে। দেশের সম্পদের অকল্যাণ চাবে না কখনো। দেশ কিভাবে এগিয়ে যায়, সেই কোশেশ থাকবে সব সময়। শুধু আমাদের এই বাংলাদেশে দেখা যায়, কিছু হলে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করা। মিছিল-মিটিংএ গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে দেশের সম্পদ নষ্ট করা। এরকম আর কোন দেশে এধরনের অবান্তর কাজ হতে দেখা যায় না। এদেশে হরতাল-বিক্ষোভ এর মাধ্যমে পেট্রল বোমা দিয়ে দেশের সম্পদ নষ্ট করা হয়, মানুষের জান-মালের ক্ষতি করা হয়, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধব্বংস করার পায়তারা করা হয়, যেটা বিশ্বের আর কোনো দেশে নেই। সুতরাং এটা অনেক নিন্দনীয় কাজ।

আমাদের রাজনীতিবিদদের এব্যাপারে হুশিয়ার হতে হবে সবার আগে। কেননা রাজনীতিবিদদের কারণে জনগণ বেশী আশকারা পায়। তারা যদি ঠিক থাকে, তাহলে সাধারণ জনতা এতটা সাহস পায় না। অপজিশনে থেকে সরকারের গঠন মুলক সমালোচনা করা উচিত। কিন্তু উন্নয়নমুলক কোনো কাজে বাঁধা দেওয়া বা সেটার অবান্তর সমালোচনা কাম্য নয়।

তাই আসুন! পদ্মা সেতু আমাদের জাতীয় সম্পদ। এর রক্ষণা-বেক্ষণ আমাদের দায়িত্ব। এই মহামুল্যবান সম্পদের যতন করি। তার মঙ্গল কামনা করি। আল্লাহুম্মা আমিন।

  • লেখক: শিক্ষক ও কলামিষ্ট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *