পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: সংঘাত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের ৩৩০ জন নাগরিককে আজ বৃহস্পতিবার ফেরত পাঠানো হচ্ছে। আজ সকাল ৮টায় এ প্রক্রিয়া শুরু হবে। ওই ৩৩০ জনের মধ্যে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি, সেনা, কাস্টমস সদস্য ছাড়াও বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন।
বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ওই ৩৩০ সদস্যকে আজ সকালে মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানীর বঙ্গোপসাগর উপকূলের নৌবাহিনীর জেটি ঘাট দিয়ে তাঁদের মিয়ানমারে পাঠানো হবে।
এদিকে আজ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় বসছে বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত এলাকার ৪৬১ পরীক্ষার্থী। নিরাপত্তার কারণে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্থানান্তরিত ১ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তারা পরীক্ষা দেবে।
বান্দরবানের ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় ভবন থেকে আশ্রিত সব শেষ ১৫৮ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে স্থানীয় প্রশাসন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি। জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী কয়েক দিনে ওই ৩৩০ সদস্য প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। বাংলাদেশে প্রবেশের আগে তাঁরা বিজিবির কাছে অস্ত্র জমা দেন। বাংলাদেশে প্রবেশের সময় তাঁদের অনেকেই আহত ছিলেন। তাঁদের বিজিবির অধীনে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মিয়ানমার নৌবাহিনীর একটি জাহাজ গভীর সাগরে আসবে। এরপর ইনানীতে নৌবাহিনীর জেটি থেকে আলাদা নৌযানে করে তাঁদের মিয়ানমারের জাহাজে পৌঁছে দেওয়া হবে।
সীমান্তে মর্টার ও গুলির শব্দ থেমেছে
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের মর্টার শেল ও গোলাগুলির শব্দ আর শোনা যাচ্ছে না। গতকাল বুধবার সারা দিন সীমান্ত ছিল শান্ত। এ নিয়ে টানা চার দিন ওই সীমান্ত শান্ত আছে।
এর আগে গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে ও গত সপ্তাহে মিয়ানমারের আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘাতে সীমান্তের এপারে তুমব্রু ও ঘুমধুমে মর্টার শেল ও গুলি পড়ে ছিল। ঘুমধুমের জলপাইতলীতে মর্টারের গোলায় এক বাংলাদেশি এবং আশ্রিত এক রোহিঙ্গা নিহত হন।
ভয় ছাপিয়ে গতকাল বুধবার তুমব্রু সীমান্তে সরস্বতী পূজা উদযাপন করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা। তুমব্রু বাজারসংলগ্ন শ্রীশ্রী সর্বজনীন দূর্গা মন্দিরে এ পূজা উদযাপন করা হয়। মন্দির কমিটির সভাপতি ও স্কুল শিক্ষক রূপলা ধর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা এর আগেও ২০২২ সালে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতের সময় মর্টার ও গোলাগুলির শব্দের মধ্যে দুর্গাপূজা পালন করেছিলাম। এবার সরস্বতী পূজা হয়েছে। এলাকার মুসলিম লোকজন আমাদের সহযোগিতা করেছেন।’
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী জানান, দুই দিন আগে সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় মিয়ানমারের মর্টার ও গুলির শব্দ শোনা গেছে। গতকাল সারা দিন মর্টার ও গুলির শব্দ শোনা যায়নি। তবে মিয়ানমারের ওপারে সংঘাত এখনো চলছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন।