ফেনীতে ৭৪ গ্রাম প্লাবিত, ২৮ হাজার পরিবার পানিবন্ধী

ফেনীতে ৭৪ গ্রাম প্লাবিত, ২৮ হাজার পরিবার পানিবন্ধী

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম জেলার মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৫টি স্থান ভেঙে ৭৪ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ২৮ হাজার পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে।

শনিবার (৩ আগস্ট) বিকালে নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় ৬৪ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া ভূঁইয়া জানান, ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলাবাসী গত ১ জুলাই প্রথম বন্যার কবলে পড়েছিল। শুক্রবার (২ আগস্ট) দ্বিতীয় দফায় ফেনীর ‍মুহুরী নদী, কহুয়া নদী ও ছিলনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে আবারও বন্যার কবলে পড়েছে এ দুই উপজেলার বাসিন্দা। টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে এসব নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মুহুরী, সিলোনিয়া, কহুয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফুলগাজী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন প্লাবিত করেছে।

এতে ফুলগাজী ইউনিয়নের নিলক্ষী, গাবতলা, মনতলা, গোসাইপুর, শ্রীপুর, বাসুরা, দেড়পারা, উত্তর দৌলতপুর , মুন্সিরহাট ইউনিয়নের বদরপুর, মান্দারপুর, করইয়া, কালিকাপুর, কামালা, নোয়াপুর, পৈথারা, জাম্মুরা, ফকিরের খিল, কমুয়া, বালুয়া, চানপুর, দক্ষিণ তাড়ালিয়া, দক্ষিণ শ্রীপুর, কুতুবপুর, ফতেহপুর, উত্তর আনন্দপুর,দরবারপুর ইউনিয়নের জগৎপুর, বসন্তপুর, ধলীয়া, চকবস্তা, উত্তর শ্রীপুর, বড়ইয়া, পশ্চিম দরবারপুর, পূর্ব দরবারপুর, আমজাদহাট ইউনিয়নের তালবারিয়া, উত্তরধর্মপুর, দক্ষিণ ধর্মপুর, মনিপুর, ইসলামিয়া বাজার, আনন্দপুর ইউনিয়নের বন্দুয়া, দৌলতপুর, তালপুকুরিয়া, জিএম হাট ইউনিয়নের মধ্যম শ্রীচন্দ্রপুরসহ ৪৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী পরিবার সংখ্যা প্রায় ২৮ আট হাজার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফেনী বিলোনিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কটি ফুলগাজী এবং পরশুরাম অংশে প্লাবিত হওয়ায় কার্যত জেলা হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে উপজেলার সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখনো পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা হাবিব শাপলা জানান, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে পরশুরাম উপজেলায় বন্যায় পৌরসভার বেড়াবাড়ি এবং বাউরখুমা দুইটি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়। এতে করে বাউরখুমা, বাউরপাথর, বিলোনিয়া, দুবলাচাঁদ, বেড়াবাড়িয়া, উত্তর গুথুমা, কোলাপাড়া এবং বাসপদুয়া গ্রামে প্রায় ৭ হাজার পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম মির্জানগর এবং কাউতলী দু’টি স্থানে ভাঙনের ফলে উত্তর মনিপুর, দক্ষিণ মণিপুর, কালী কৃষ্ণনগর, গদানগর, উত্তর কাউতলী, দক্ষিণ কাউতলী, দাসপাড়া, চম্পকনগর, মেলাঘর, গ্রামের প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দী রয়েছে।

চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শালধর, মালীপাথর,পশ্চিম অলকার দু’টিসহ ৪ স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে পূর্ব অলকা, পশ্চিম অলকা, নোয়াপুর, ধনীকুন্ডা, দক্ষিণ শালধর, জংঙ্গলঘোনা,কুন্ডেরপাড়, মালীপাথর ও পাগলীরকুল গ্রামে প্রায় ৯ হাজার পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের টেটেশ্বর এবং সাতকুচিয়া নামক দু’টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এত করে সাতকুচিয়া জমিয়ারগাঁও, বাঘমারা, চারিগ্রাম টেটেশ্বর, কহুয়া, তালবাড়িয়া গ্রামে প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দী রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ১৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

এদিকে ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩০০ পরিবারকে শুকনো খাবার বিতরণ ও আরও ২৫০ প্যাকেট খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ১৩ মেট্রিক টন চাল বিতরণ ও ৫ মেট্রিক টন মজুদ রাখা হয়েছে। পরশুরাম উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

পরশুরামে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে শনিবার স্থানীয় সংসদ সদস্য আলা উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূইয়াসহ জনপ্রতিনিধিরা ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করেছে।

মির্জানগর এলাকার বাসিন্দা আবু আব্দুল্লাহ বলেন, এত প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ করতে এর আগে কখনো দেখিনি। বাড়িতে পানি উঠে গেছে। খুব কষ্টে রাত পার করছি আমরা।

মো. খলিল উল্লাহ নামে আরেকজন বলেন, এই দিকের এলাকা উঁচু হওয়ায় সাধারণত বন্যার পানি প্রবেশ করে না। কিন্তু এবার ভারী বর্ষণে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিত তলিয়ে গেছে। পানি আরও বাড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। খুব খারাপ অবস্থা যাচ্ছে আমাদের।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে হাইকোর্টের ৯ বিচারপতির শ্রদ্ধা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে হাইকোর্টের ৯ বিচারপতির শ্রদ্ধা
মির্জানগর ইউনিয়নের মেম্বার ফজলুল বারী বলেন, ১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০১৮ সালের বন্যা নিজ চোখে দেখেছি। কখনো বাড়িতে পানি উঠেনি। এবারই প্রথম আমার বাড়িতে পানি উঠেছে। পুরো এলাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। নদীর পানি না কমলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বারবার লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। একমাস আগে ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কারে গড়িমসি করার কারণে আবারও একই স্থানে ভাঙনের দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, জুলাই মাসে প্রতিরক্ষা বাঁধের ১১৫ মিটার অংশ ভেঙেছে। এটি মেরামতে তাদের ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, পরশুরামের যে অংশ ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামত করা হয়েছে, এবার বন্যায় সবার আগে সে অংশটি ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। পরিকল্পিতভাবে কাজ না করে এমন ভাঙা-গড়ার খেলা চলতে থাকলে তারা কোনো দিন এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে না।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অ. দা.) মো. আবুল কাশেম বলেন, এর আগে কখনো এত পানি দেখা যায়নি। গত দুইদিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের পানিতে মুহুরী ও কহুয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ২২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৫টি স্থানে ভাঙনের তথ্য পেয়েছি।

বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বাঁধের আরও কয়েকটি অংশে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা। তবে বৃষ্টিপাত কমে গেলে নতুন করে আর ভাঙনের শঙ্কা নেই।

সূত্র: দেশ রূপান্তর

Related Articles