জীবনের গল্প
জীবন এক অনির্বাণ প্রদীপ
জ্বলছে আবহমান কাল থেকে দুখি হৃদয়ের মত নিশ্চুপ নিরালা
শুষ্ক তুষের মতো অবিরাম জ্বলতে থাকাই যেন তার চিরকালীন নিয়তি।
সুখ দুখের অনেক পথ পাড়ি দিলাম জীবনজোড়া
ইতিহাসের অন্তহীন সব বাঁক ঘুরে এলাম।
কই?
আমি তো কোন বৈচিত্র্য পেলাম না!
দেখলাম না বিত্ত বৈভবে কারো সামান্য কমেছে দুঃখ
চরম দারিদ্র্যও প্রিয় মুখের হাসিটি মুছতে পারেনি।
কালবোশেখির ঝড় কেড়ে নিতে পারেনি প্রকৃতির প্রসন্নতা
কাজলের কালো রঙ বঙ্কিম কৃষ্ণ ভ্রুর সংস্পর্শে থেকেও নষ্ট হয়নি একটুকু।
আবর্জনার ভেতর স্বর্ণকে দেখলাম স্বর্ণ হয়েই আছে সহস্রাব্দের পরও
রাজপ্রাসাদে উঠেও আবর্জনার বাড়েনি সামান্য সম্মান।
জীবনের মহিমা দেখে সবসময় বিস্মিত হতে হয়
জড়জগতে কত বিপ্লব হয়ে যায়
পৃথিবীতে ধেয়ে আসে কত ভয়াবহ তুফান
হাজার বছর পরও প্রেয়সীর গালের তিল বিক্রি হয় লক্ষ পৃথিবীর বিনিময়ে
স্থির অনড় এক নিয়মে সবেগে ছুটছে মানব সভ্যতার নানান রূপ
প্রেমের তরে ঘর ছাড়া মানুষগুলো আজও ঘরে ফেরেনি।
আজও ছেঁড়া রক্তাক্ত হৃদপিণ্ড হাতে ছুটছি অতীন্দ্রিয় রহস্যপুরীর মায়াবী প্রান্তরে।
অনেক অন্তরের স্পর্শ অনুভব করি আমার ক্লান্ত পায়ে
এ মাটির সবখানে হয়ত আরো বহু ক্ষত বিক্ষত অন্তর ছড়িয়ে আছে।
কাটায় বাঁধার মতো সহসা মনের সঙ্গে মন জড়িয়ে যায় অজান্তে
অন্তরের গহীনে বসে অনুভব করি নিঃশব্দ কান্না।
সেই আগের মতই কোন এক চোখের তারায় আমি খুঁজছি মুগ্ধ সবুজ প্রেম।
তোমার ভরাট বুকে আজও রয়ে গেছে অদ্ভূত উষ্ণতা।
আমি সমস্ত হৃদয়ে আজও মনপ্রাণ উজাড় করে তালাশ করছি পুরনো স্পন্দন।
সারা পৃথিবী তন্ন তন্ন করে
আমি সংগ্রহ করছি
বিন্দু বিন্দু ভালবাসা
কয়েকটি গোলাপ পাপড়ি
সামান্য চন্দনচূর্ণ
মেহেদির মতো রাঙামন
এক ফোটা নীল অনুরাগ
বুকপকেটে আধখানা সবুজ কোমলতা
রোদের মতো এক পেয়ালা দিলখোলা হাসি
প্রশান্ত অরুণ করুণ হরিন চোখ
পলকেই মন হরণ করা মোহন দৃষ্টি।
আরেক হেমন্ত
বহতা পদ্মার মত বয়ে যায় প্রমত্ত সময়
সময়ের কাঁধে চড়ে ছুটি দূর গন্তব্য পানে
প্রিয়তমার নিখুত সৌন্দর্য ছোঁব বলেই কি অনন্ত এই পথযাত্রা
গভীর জীবন বোধ নিঃশাসে নিঃশাসে তাড়া করে বেড়ায়।
হৃদয়ের খোলা পাতায় আঁকা আছে কিছু দৃশ্যপট
ভাবনাহীন এক উঠোনের গল্প
এক পৃথিবী হেঁটে আসার পর আমি দেখলাম সেই আগের মতই বীজ পড়ে আছে
কৃষকরা মাঠের আইলে বসে আছে নীরব ধ্যানে
এরই ভেতর বাংলাদেশ হয়ে ওঠে পৃথিবীর সমান
তোমার সৌন্দর্য ছাড়িয়ে যায় স্বর্গের রমণীদের সব রূপ লাবন্যে
আমার বুভুক্ষু চোখের কোটরে শুভ্র সপ্নের বিভোরতা
সময়গুলো আমাকে অমর করে রাখতে স্থির হয়ে যায়
আবার যখন চোখ তুলে তাকাই আমার দিগন্তে
দেখি কতগুলো রাজহাসের ডানা
বাতাসে ওড়ে হেমন্তের শুকনো পাতা
অতলান্ত আদর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চারপাশ
অবহেলার চোখ মুখ শুকিয়ে আরেকটি হিম হেমন্ত যেন।