বর্ষার দিনে পড়ুন বৃষ্টি নিয়ে বিখ্যাত তিনটি কবিতা

বর্ষার দিনে পড়ুন বৃষ্টি নিয়ে বিখ্যাত তিনটি কবিতা

বর্ষার দিনে

  • – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায় –
এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়।।

সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারি ধার।
দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার –
জগতে কেহ যেন নাহি আর।।

সমাজ সংসার মিছে সব,
মিছে এ জীবনের কলরব।
কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি-অনুভব –
আঁধারে মিশে গেছে আর সব।।

বলিতে ব্যথিবে না নিজ কান,
চমকি উঠিবে না নিজ প্রাণ।
সে কথা আঁখিনীরে মিশিয়া যাবে ধীরে,
বাদলবায়ে তার অবসান –
সে কথা ছেয়ে দিবে দুটি প্রাণ।।

তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার
নামাতে পারি যদি মনোভার!
শ্রাবণবরিষনে একদা গৃহকোণে
দু কথা বলি যদি কাছে তার
তাহাতে আসে যাবে কিবা কার।।

আছে তো তার পরে বারো মাস –
উঠিবে কত কথা, কত হাস।
আসিবে কত লোক, কত-না দুখশোক,
সে কথা কোনখানে পাবে নাশ –
জগৎ চলে যাবে বারো মাস।।

বৃষ্টির ছড়া

  • – ফররুখ আহমদ

বিষ্টি এল কাশ বনে
জাগল সাড়া ঘাস বনে,
বকের সারি কোথা রে
লুকিয়ে গেল বাঁশ বনে৷

নদীতে নাই খেয়া যে,
ডাকল দূরে দেয়া যে,
কোন সে বনের আড়ালে
ফুটল আবার কেয়া যে৷

গাঁয়ের নামটি হাটখোলা,
বিষ্টি বাদল দেয় দোলা,
রাখাল ছেলে মেঘ দেশে,
যায় দাঁড়িয়ে পথ-ভোলা৷

মেঘের আঁধার মন টানে,
যায় সে ছুটে কোন খানে,
আউশ ধানের মাঠ ছেড়ে
আমন ধানের দেশ পানে৷

বৃষ্টি বুঝি এল

  • – জীবনানন্দ দাশ

এল- বৃষ্টি বুঝি এল-
পায়রাগুলো উড়ে যায় কার্নিশের দিকে এলোমেলো
এল- বৃষ্টি বুঝি এল-
ছেলেদের খেলা মাঠে মুহূর্তেই সাঙ্গ হয়ে গেল
এল- বৃষ্টি বুঝি এল-
ছিপ ফেলে বাথানের দিকে ঐ চ’লে যায় কেলো
এল- বৃষ্টি বুঝি এল-
‘জল ধ’রে গেলে মাসি তার পর কাঁথাগুলো মেলো’
এল- বৃষ্টি বুঝি এল-
‘গেল- গেল আমসত্ত্ব- পোড়ামুখো বৃষ্টি সব খেল’
এল- বৃষ্টি বুঝি এল-
‘হরির মা কতকগুলো ভাঁটো আম পেল?’
এল- বৃষ্টি বুঝি এল-
(সে ঘুমায় মাঠে) সমাধির ‘পরে তার পাতা শুধু ওড়ে এলোমেলো।

Related Articles