মেজবাউল হক : বন্ধুরা, তোমরা তো অনেক ফুলের নাম জানো, তাই না? বিজয় ফুলের নাম কি জানো? ভাবছ এটা আবার কেমন ফুল! হ্যাঁ ছোট্ট বন্ধুরা, এবার বিজয়ের মাসে আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা হবে ‘বিজয় ফুল’। ফুলে থাকবে ৬টি পাপড়ি ও একটি কলি। বিজয় দিবসে শহিদ বীর সেনানি ও সাধারণ মানুষকে স্মরণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
বন্ধুরা, প্রতিবছর বিজয় দিবসের এই দিনটিকে উদযাপন করো স্কুলে নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে। হৃদয়ে ধারণ করো আমাদের মহান এই অর্জনকে। কিন্তু এবারের বিজয় দিবসে নতুন প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উপলব্ধি এবং সংগ্রামী ইতিহাস জানাবার জন্য নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হবে ‘বিজয় ফুল’ তৈরি প্রতিযোগিতা ও ‘বিজয় ফুল’ উৎসব। এবার শাপলা দিয়ে বিজয় ফুল বানাবে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি শিক্ষার্থী। শিশু থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তৈরি করবে কোটি কোটি ‘বিজয় ফুল’। এছাড়াও শিশুদের তৈরি এই বিজয় ফুল শুভেচ্ছা মূল্যে বিক্রি করাও হবে। ফুল বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ও বিশেষ শিশুদের কল্যাণে ব্যবহার করা হবে।
জাতীয় ফুল হিসেবে শাপলাকে ‘বিজয় ফুল’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এই বিজয় ফুল তৈরি করা হবে কাগজ, কাপড়, প্লাস্টিক শিটসহ অন্য যে-কোনো সামগ্রী ব্যবহার করে। সবুজ জমিনে সাদা রং-এর ম্যাটেরিয়ালে তৈরি হবে বিজয় ফুল। এর দৈর্ঘ্য ছয় সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ আনুপাতিক হারে। ছয় দফা বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল বীজ বপন করেছিল। এ কারণে বিজয় ফুলে পাপড়ি হবে ছয়টি। আর কলিটি হবে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চ নিয়ে। মনে হবে, বঙ্গবন্ধু ফুলের কলি হয়ে ফুটে আছেন। নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে এই বিজয় ফুল। বিজয় ফুল তৈরির পাশাপাশি স্কুল পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলা ও শুদ্ধভাবে জাতীয় সংগীত গাওয়ার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে একটি পতাকা ও একটি মানচিত্রের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন তাঁরা কোটি কোটি জনতার মাঝে বিজয়ীবেশে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে আছেন। জাগ্রত আছেন আমাদের চেতনা ও মননে। তাদেরকে শ্রদ্ধার একটু বহিঃপ্রকাশ এ বিজয় ফুল। বিজয় ফুল প্রবাসে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধাদের ও তাঁদের বীরত্বের কথা নতুন প্রজন্মকে বলার সুযোগ করে দিয়েছে। বিজয় ফুল একটি স্মারক, যেটি বুকে পরা হয় (১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর)। বিজয় ফুলের প্রধান লক্ষ্য মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করা।
বিজয় ফুল তৈরির প্রতিযোগিতা ১৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এই ফুল তৈরি করে তাদের বন্ধুবান্ধব ও সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করবে। উপজেলা, জেলা ও বিভাগ পর্যায়ের প্রতিযোগিতা শেষে ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয়ভাবে ঘোষণা করা হবে চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ। আগামী ১৫ ডিসেম্বর দেশসেরা শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সফল হোক এ প্রতিযোগিতা।
৩০.১০.২০১৮
লেখক : কলামিস্ট