বিপজ্জনক ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে ঢাকাসহ একাধিক জেলা

বিপজ্জনক ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে ঢাকাসহ একাধিক জেলা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বিপজ্জনক ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকাসহ একাধিক জেলা। দ্রত নগরায়ন, নির্মাণ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং নৈতিকতার অভাবজনিত কারণে ঢাকা চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি জেলা শহরে এই ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাবে শহরের উন্মুক্ত এলাকা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে রাজউক আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

‘ইন্টারন্যাশনাল সেমিনার অন আরবান আর্থকোয়েক রেজিলিয়েন্স’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সেমিনারের প্রথম দিনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের পরিচালক ড. আবদুল লতিফ হেলালী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নবীরুল ইসলাম, রাজউকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) সিদ্দিকুর রহমান সরকার, আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের আন্তর্জাতিক দলনেতা ড. এস কে ঘোষ, জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কিমিরিও মেগুরো, বুয়েটের অধ্যাপক মেহেদী আহমদ আনসারী এবং রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ প্রমুখ।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে। বিদ্যমান দুর্বলতাকে কাটিয়ে সরকার দুর্যোগ ঝুঁকি এড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। ভবনের তদারকির সাথে সাথে নিয়ম চাপিয়ে না দিয়ে জনগণকে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, দ্রত নগরায়ন, নির্মাণ নিয়ন্ত্রণের অভাবে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি জেলা শহর অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, ঢাকার দ্রুত বৃদ্ধি এবং অভিবাসনের ফলে ভূমিকম্প ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপদের ঝুঁকি ক্রমাগত বাড়ছে। ঝুঁকি-সংবেদনশীল ভূমি ব্যবহারের পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন নীতি ও কৌশলগুলো প্রয়োগের মাধ্যমে বিদ্যামান দুর্বলতাকে কাটিয়ে একটি স্থায়ী ও ঝুঁকিমুক্ত শহর গড়ে তোলা যেতে পারে।

সেমিনারের গেস্ট অব অনার প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বর্তমানের দূরদর্শী পরিকল্পনাই ভবিষ্যতের ঢাকাকে গড়ে তুলবে। ১২৫ বছর ধরে বড় কোনো ভূমিকম্প হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিগগিরই একটি বড় ভূমিকম্প হতে পারে। তাই এ বিষয়ে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করছে সরকার। যত দ্রুত সম্ভব এ কাজটি করতে হবে।

সেমিনারে আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের পরিচালক ড. আবদুল লতিফ হেলালী বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বলেন, বিগত ১০ বছরের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কারিগরি ও দক্ষ জনবল এবং সংগ্রহকৃত আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং ল্যাবরেটরি পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ভূমিকম্প ও দুর্যোগ থেকে দেশের সম্পদ ও জনগনের জান-মালের সুরক্ষা দেয়ার জন্য যে বিপুল সামর্থ্য সৃষ্টি হয়েছে, তা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংরক্ষণ প্রয়োগ ও পরিচালনা করা প্রয়োজন। উল্লিখিত সামর্থ্য টেকসইভাবে প্রয়োগের জন্য একটি বিশেষায়িত কারিগরি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা আবশ্যক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনো সংস্থায় ভবনগুলোর ঝুঁকি নিরূপণ করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন প্রক্রিয়ার কোনো অনুসন্ধান ও পরীক্ষার সুযোগ-সুবিধা নেই।

বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন আনুযায়ী, রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বাংলাদেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি শহর যেমন- সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার প্রভৃতি ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। সুতরাং উক্ত নগরগুলোয় ভূমিকম্প দুর্যোগ সক্ষমতার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি। প্রস্তাবিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের সুফল পাওয়ার জন্য এর কার্যক্রম শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ না রেখে সমগ্র দেশব্যাপী বিশেষ করে উল্লিখিত বড় বড় শহরগুলোতে পরিচালনা করাই যুক্তিযুক্ত।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ বিল্ডিং কোড ২০২০ সালের নামে গেজেট হলেও তা আসলে ১৪ বছরের পুরনো। যার ফলে হাই-স্ট্রেন্থ গ্রেড রিবার (যেমন ৮০ বা ১০০ গ্রেড রিবার) থেকে শুরু করে অনেক উন্নত নির্মাণ পণ্য ব্যবহার থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। এসব পণ্য টেকসই উন্নয়ন এর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই বিল্ডিং কোড আপডেটিংয়ের বিষয়টি প্রতি পাঁচ-ছয় বছর পর পর যেন প্রফেশনালদের মাধ্যমে করা হয় সে বিষয়ে জোর দেয়া হয়।

Related Articles