- আমিনুল ইসলাম কাসেমী
১৬ কোটি বাঙালীর স্বপ্নপূরণের দিন আজ। যুগ যুগ ধরে অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে। প্রমত্তা পদ্মার বুকের উপর দিয়ে সেতু নির্মাণ যেটা বাংলদেশের মানুষের গর্বের। একটা ছোট্ট বাংলাদেশের জন্য বড় পাওনা। স্বাধীনতা উত্তর এই দেশের মহাকাব্য রচনা হতে যাচ্ছে। পদ্মার উত্তাল ঢেউ আর খর স্রোতে ভেসে যাওয়া নয়। নদী পার হওয়ার জন্য দিনের পর দিন বসে থাকা নয়। শীতকালিন কুয়াশা আর তীব্র স্রোতে স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্নতা ঘটবেনা। মানুষ নিমিষেই চলে যাবে তার কাংখিত জায়গায়।
পদ্মা সেতু মহামিলনের এক বন্ধন। যেটা আর্থ সামাজিক উন্নয়নে প্রভাব ফেলবে। জাতির অর্থনৈতিক মেরুদন্ড মজবুত হবে। সময়ের বিবর্তনে দেশের উন্নয়নের চাকা ঘুরবে আরো ক্ষিপ্র গতিতে। জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বহুদুর। এক সময় পদ্মার পাড়ে মানুষের সময় কেটেছে। দিনের পর দিন অর্ধাহারে- অনাহারে কেটেছে। এদেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেতাগণ এবং দেশের কর্ণধরগণ পদ্মার খরস্রোতে কাবু হয়ে সেই বিখ্যাত গোয়ালন্দ ঘাটে সময় পার করেছেন। কখনো বা মাওয়া কাঁঠালাড়ি ঘাটে। তীব্র স্রোতের কারণে যথা সময়ে নদী পার হতে পারেনি। অনেক তুখোড় নেতা-নেত্রী পদ্মার পাড়ের মানুষের সাথে সখ্য গড়েছে শুধু নদী পার হওয়ার অপেক্ষায়। কখনো সেখানকার স্থানীয় নেতাদের আলিঙ্গন করে দেশের উন্নয়নে সস্পৃক্ত করেছেন।
স্বাধীনতার স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি এসব নেতাগণ পদ্মার পাড়ের মানুষের সাথে বিশাল সখ্য গড়ে তুলে ছিলেন। পদ্মা পার হওয়ার সময় গোয়ালন্দ/ফরিদপুর এই সমস্ত এলাকাতে স্বাধীনতা আন্দোলনের সুবাতাস ছড়িয়ে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সে সকল যাত্রা বিরতির কারণে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি দানা বেঁধে ওঠেছিল। মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল হাজার হাজার মানুষ।
আমরা আরো অবাক হবো, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অগ্রনায়ক, কুতুবুল আলম সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানী (রহ.) এই গোয়ালন্দ পদ্মা নদী দিয়ে পার হয়ে চাঁদপুর থেকে ট্রেনে চট্রগ্রামের পাহাড়তলী ষ্টেশনে পৌছান। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে জাহাজে করে হজব্রত পালন করতে জেদ্দার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। সেটা অবশ্য ১৮৯৮ সনের কথা। তবে বহু মহারথীর আগমন ঘটেছে এই পদ্মার কারনে। যাদের যাত্রা বিরতিতে এখানকার মানুষের সাথে ভালবাসা জন্মেছে। মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.) তিনিও পদ্মা পার হয়ে ঢাকা যেতেন। তাঁরও যাত্রা বিরতিতে বহু মুরিদ-মুতায়াল্লেক গড়ে ওঠেছিল এই নদীর কুল ঘেঁষে। যাদের সুত্রপরম্পরা এখনো চলছে। আজো হাজারো ভক্তকুল স্মরণ করে তাঁকে।
মোটকথা পদ্মা নদী এবং তার পারাপারে একটা ইতিহাস, একটা সংগ্রাম। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাইলফলক। যে পদ্মার পাড়ে সেই স্বাধীনতা আন্দোলনের বহু স্মৃতি বিজড়িত। সেই সাথে আরো স্মৃতি আছে পদ্মার ভয়াল করাল গ্রাসের কথা। মোটামুটি সব স্মৃতি মাড়িয়ে পদ্মার বুক চিরে এবার গড়ে ওঠেছে বিশাল সেতু।
ছোট্ট বাংলাদেশের জন্য পদ্মা সেতু একটা চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে অবশ্য জয় হলেন এদেশের সরকার প্রধান। এ কারণে সরকার ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। সরকারের দৃঢ়তার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। সরকার নড়বড়ে হলে এই সেতু চালু করা সম্ভব ছিলনা। বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ সেটা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। আজ পুরণ হচ্ছে স্বপ্ন।
তবে যে যাই বলুক, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনে আরো একধাপ সামনে বাড়ল বাংলাদেশ। হিংসুকরা যতই হিংসা করুব, সমালোচনাকারিরা যতই সমালোচনা করুক,দেশের উন্নয়নে সেসব বিষয় আর স্থান পাবে না। হিংসার অনলে দাহ হয়ে আর লাভ হবে না। নিশ্চয়ই এজাতির কল্যাণকামী যারা, দেশের উন্নয়নের সুফল দেখতে চায় যারা, কভু জবানদারাজ হবে না তাদের। কেননা পদ্মা সেতু সবার। পুরো ১৬ কোটি জনতার স্বপ্নের সেতু। সুতরাং এর মঙ্গল হোক সেই কামনা-বাসনা রইল। আল্লাহুম্মা আমিন।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিষ্ট