একটা প্রবাদ বাক্য—হাজারো প্রশ্নের উত্তর আছে এ বাক্যে। একসময় এ বাক্যের রহস্য বুঝতে অক্ষম ছিলাম। দিন যত যাচ্ছে তত এর মর্ম বুঝতে পারছি। জীবনে চলতে শত শত বন্ধু থাকার চেয়ে একজন সৎ মানুষ অনেক অনেক শ্রেয়। এ পৃথিবী নশ্বর। এ পৃথিবীর যাত্রার শেষ আছে। একটা সময় এসে এ পৃথিবীর বিলুপ্তি ঘটবে। সব কিছু শেষ হয়ে যাবে। শুধু রয়ে যাবে মানুষের সততা-আদর্শ, নীতি-নৈতিকতা। আজ ভালো কিছু করা মানে কাল কবরে বসে তার সুফল ভোগ করা। এদুনিয়ায় ভালো কিছু করতে হলে, ভালো কিছু হতে হলে, সৎসঙ্গের তুলনা হয়না।
সৎসঙ্গ অতুলনীয়। একজন নেককার পরহেজগার সাথি জান্নাত পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে একজন মানুষকে। এমনকি আল্লাহর দীদারও হাসিল করা সম্ভব।
এযুগে মানুষ মুসলমান হয়েও হেদায়েতভ্রষ্ট, সরলপথ বিচ্যুত। অনেকগুলো কারণ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—সৎসঙ্গের অভাব অন্যতম কারণ। আজকাল মানুষ হতাশাগ্রস্ত, পেরেশানিতে অস্থির আদরের সন্তানকে নিয়ে—কোন প্রতিষ্ঠানে এডমিশন নিবে, কোথায় বাসা নিলে ভালো হয়, কোন পরিবেশে থাকলে আদরের দুলাল সোনা মানুষে রূপ নিবে। এমন অনেক কথা আমাদের সামনে আসে।
আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। কোমলমতি শিশুদের চাই নিরাপদ সঙ্গ, সৎসঙ্গ। শুধু শিশু নয় নবীন প্রবীণ সবার প্রয়োজন সৎসঙ্গ। এ অল্প জীবনে অনেক নবীন প্রবীণকেও দেখেছি অসৎসঙ্গে জীবনকে নাশ করে দিতে। জীবনকে তিলে তিলে শেষ করে দিতে।
খুব কাছের এক বড় ভাই এক জীবনে তিনি খুব সৎ ছিলেন। কিন্তু এক অসতের সঙ্গে মিশে দুনিয়াও আখিরাত বরবাদ করার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন। মা-বাবার দোয়ায় হয়তো আল্লাহ তাআলা তাকে বাঁচিয়েছেন। এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে।
আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। কোমলমতি শিশুদের চাই নিরাপদ সঙ্গ, সৎসঙ্গ। শুধু শিশু নয় নবীন প্রবীণ সবার প্রয়োজন সৎসঙ্গ। এ অল্প জীবনে অনেক নবীন প্রবীণকেও দেখেছি অসৎসঙ্গে জীবনকে নাশ করে দিতে। জীবনকে তিলে তিলে শেষ করে দিতে।
এদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ তাআলা বলেন—হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো এবং নেককারদের সাথে থাকো। (সুরা তাওবা, আয়াত, ১১৯)
অর্থাৎ সৎ ব্যক্তিদের সাহচর্যে আল্লাহর ভয় অটো চলে আসবে। আর আল্লাহর ভয় অর্জন হলে মানুষ কামেল ইনসানে পরিণত হয়ে যায়।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো—হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম সাথী কে? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—যার দর্শন লাভে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং যার কথায় তোমাদের ইলম বৃদ্ধি পায় এবং যার আমল তোমাদেরকে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
বুঝা যায়, সৎ মানুষ একজন মানুষকে তিনটি জিনিস উপহার দিতে পারে।
এক. আল্লাহর কথার স্মরণ। দুই. জ্ঞান-মেধার বৃদ্ধি। তিন. পরকালের কথার স্মরণ। এ তিনটি জিনিস যখন মানুষের ভিতর থাকে তখন মানুষের দ্বারা অন্যায়-অনাচার, ব্যাভিচার, জুলুম-নির্যাতন এহেন কোন গর্হিত কাজ নেই যা বন্ধ হওয়া সম্ভব নয়। সবই বন্ধ হয়ে যাবে।
এ জন্যই আগেকার মুরুব্বিরা বলতেন—’সঙ্গগুণে লোহা জলে ভাসে’। তাই প্রত্যেক মানুষের উচিৎ সঙ্গী যাচাইয়ের ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক থাকা। আমার এক বড় ভাই বলতেন—তুমি এমন মানুষের সাহচর্যে যেয়োনা, যার সাথে তোমাকে দেখলে মানুষ ভাববে তুমিও একই ক্যাটাগরির লোক—মানে থার্ড ক্লাস।
অন্য এক হাদিসে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৎ এবং অসৎ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত দিয়েছেন—’উত্তম ও অনুত্তম সাথীর উদাহরণ হল আতর বিক্রেতা ও কামারের ন্যায়। আতর বিক্রেতার কাছে তুমি গেলে হয়তো আতর কিনবে না হয় তোমার গায়ে সে আতর মেখে দিবে। তা না হলে আতরের সুঘ্রাণ তুমি অনুভব করবে। বিপরীতে তুমি যদি কামারের কাছে যাও হয়তো সে তোমার কাপড় পুড়ে ছারখার দিবে না হয় তুমি তার কাছে নিকৃষ্ট দুর্গন্ধ পাবে। ‘
এ জন্যই আগেকার মুরুব্বিরা বলতেন—’সঙ্গগুণে লোহা জলে ভাসে’। তাই প্রত্যেক মানুষের উচিৎ সঙ্গী যাচাইয়ের ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক থাকা। আমার এক বড় ভাই বলতেন—তুমি এমন মানুষের সাহচর্যে যেয়োনা, যার সাথে তোমাকে দেখলে মানুষ ভাববে তুমিও একই ক্যাটাগরির লোক—মানে থার্ড ক্লাস।
জীবন বহমান। জীবনের গতি থেমে নাই। ছোট্ট এ জীবন। এ জীবনকে সাজাতে আমাদের কত আয়োজন। এরই মধ্যে আমাদের কত কিছু ছাড়তে হয়। কত কিছু ধরতে হয়। এ দুনিয়াকে আল্লাহ তাআলা শষ্যক্ষেত স্বরূপ বানিয়েছেন। এ ক্ষেতে ভালো কিছু চাষ করলে আখেরাতে এর বিনিময়ে মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের জান্নাত দান করবেন। এ জান্নাত অর্জন করা সম্ভব নেক সঙ্গীর মাধ্যমে, সৎসঙ্গের দ্বারা। তাই তো কবি সুন্দর করে বলেছেন,
“কূজন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য।
সৎসঙ্গ বন্ধু যেন একটি গোলাপবন,
সেই বনেরই সুবাস পেতে ভ্রমর গুঞ্জরন।
সুবাসবাহক পথ চলিলে সুরভী ছড়ায়,
নেশাখোরের বন্ধুদেরই নেশাখোরই কয়।
সুবাস নিয়ে সুবাস ছড়াও বিশ্বজগতময়,
সুবাতাসেই শান্তি মেলে নিখিল করো জয়।
মহান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সৎসঙ্গ হাসিল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক, মুশতাক আহমদ
শিক্ষক ও গবেষক