অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি

অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : মার্চ মাসে পাকিস্তানের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর গত ৭৬ বছরে এই পরিমাণ মূল্যস্ফীতি কখনো দেখেনি দেশটির জনগণ।

শনিবার পাকিস্তান ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিক্স এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে এ তথ্য। পৃথক এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা, ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির ধারাবাহিক পতন এবং জ্বালানি তেলের দামের ক্ষেত্রে সংস্কার আনা এই মূল্যস্ফীতির প্রধান কারণ।

পাকিস্তানের সরকার দরিদ্র ও ধনীদের জন্য জ্বালানির পৃথক দাম নির্ধারণ করেছে। এই ব্যাপারটিকেই ‘তেলের মূল্য সংস্কার’ বলে উল্লেখ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

দেশটির অর্থনীতিবিদদের মতে, পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ পর্যায়ে রয়েছে। প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে এবং তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতা।

সবচেয়ে বেশি বেড়েছে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম। পরিসংখ্যান দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্চ মাসে পাকিস্তানের নগরাঞ্চলে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে শতকরা হিসেবে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদদের শংকা, চলতি এপ্রিল বা আগামী মে মাসের মধ্যেই গড় হিসেবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির (হাইপার ইনফ্ল্যাশন) স্তরে প্রবেশ করবে পাকিস্তান। সেসময় দেশটির মূল্যস্ফীতি পৌঁছাবে ৫০ বা তারও বেশির ঘরে।

শহরাঞ্চলের তুলনায় পাকিস্তানের গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতির হার বেশি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে দেশটির শহরগুলোতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩৩ শতাংশ, একই সময় গ্রামাঞ্চলে এই হার ছিল ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ।

গত বছর ইতিহাসের ভয়াবহ বন্যায় পাকিস্তানে লাখ লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে; আবার অন্যদিকে, ডলারের মজুত নেমে যাওয়ায় খাদ্যশস্য আমদানিও করতে পারছে না দেশটি। ফলে মূল্যস্ফীতির কারণে খাদ্য কিনতে গিয়ে রীতিমতো নাকাল হচ্ছেন মানুষ এবং এক্ষেত্রেও মূল ভুক্তভোগী গ্রামের মানুষরাই।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত মার্চ মাসে পাকিস্তানের গ্রামাঞ্চলে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৫০ দশমিক ২ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে বেড়েছে ৪৭ দশমিক ১ শতাংশ।

এই পরিস্থিতিতে দেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলগুলোতে খাদ্যত্রাণ পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন প্রাদেশিক সরকার। কিন্তু সেখানেও ত্রাণের গাড়ি লুটপাট, ও খাদ্য নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মানুষ নিহতের ঘটনা ঘটছে দেশটিতে।

কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ত্রাণ সহায়তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা অদূর ভবিষ্যতে তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।

দেশটির জনগণের জন্য এখন সবচেয়ে বড় ভোগান্তির নাম খাদ্যের মূল্য। পরিসংখ্যন ব্যুরোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের তুলনায় চলতি বছর এপ্রিলে পাকিস্তানে সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম গড়ে বেড়েছে ৪৭ দশমিক ১৫ শতাংশ।

  • সূত্র : জিও টিভি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *