অনেক বড় অফার পেয়েও যাইনি : মেসি

অনেক বড় অফার পেয়েও যাইনি : মেসি

অনেক বড় অফার পেয়েও যাইনি : মেসি

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বার্সেলোনা তার প্রাণের ক্লাব। সেই কৈশোর থেকে শুরু। তারপর এখানেই বড় হয়েছেন তিনি। এখান থেকেই হয়ে উঠেছেন বিশ্ব তারকা। বার্সেলোনার প্রতি তাই মেসির ভালোবাসা অন্যরকমের। একেবারের আত্মার সম্পর্ক। কিন্তু ক্লাবের বর্তমান কর্মকা-ে বিরক্ত হয়ে তিনি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দশ দিনের নাটক শেষে মেসি আরও এক মৌসুম বার্সায় থেকে যাওয়ার কথা দিয়েছেন। পাশাপাশি যারা তাকে টাকার কাঙাল বলছেন, তাদেরকেও জবাব দিয়েছেন মেসি।

অনেকেই বলছেন, মেসি বেতন বাড়ানোর জন্য নতুন নাটক ফেঁদেছেন। এ ব্যাপারে গোল ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাতকারে মেসি বলেন, আমি ক্লাব ত্যাগ করার অনেক সুযোগ পেয়েছিলাম কিন্তু আমার কাছে ক্লাব ছিল সবার আগে। আমি প্রতিবছরই ক্লাব ছাড়তে পারতাম এবং বার্সেলোনার থেকেও বেশি আয় করতে পারতাম। কিন্তু আমি সবসময়ই বলে এসেছি বার্সেলোনাই আমার বাড়ি। এখন পর্যন্ত আমি একইরকম অনুভব করি।

বার্সা সভাপতি জোসেফ মারিয়া বার্তামেউয়ের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে মেসি যে ক্লাব ছাড়ছিলেন, তা সবাই জানে। গোল ডটকম থেকে ক্লাব ছাড়ার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে মেসি বলেন, এখান (বার্সা) থেকে অন্য কোনো ক্লাবে গেলে বেশি ভালো হবে তা চিন্তা করা কঠিন। কিন্তু তারপরও আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল না। তাই আমার মনে হয়েছে একটা পরিবর্তন দরকার, একটা নতুন লক্ষ্য ঠিক করা দরকার।

যে কারণে ‘ইউ-টার্ন’ নিলেন মেসি : ‘এখন আমি বাধ্য হয়ে খেলব এই মৌসুম (২০২০-২১)। না হয় আমাকে ক্লাব ছাড়তে ৭০০ মিলিয়ন রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করতে হবে, যেটা একেবারেই অসম্ভব বিষয়’- লিওনেল মেসির এ কথায় পরিষ্কার, তিনি সত্যিই এ মৌসুমে ক্লাব ছাড়তে চেয়েছিলেন, যেতে চেয়েছিলেন অন্য কোনো ক্লাবে।

কিন্তু প্রায় দশ দিন ধরে চলা নানান নাটকীয়তার পর, অবশেষে তিনি নিজেই জানিয়েছেন, ‘আরও এক বছর বার্সায়ই থাকছি আমি।’ কিন্তু হঠাৎ করেই কেনো এই ইউ-টার্ন? কেনো সিদ্ধান্ত বদলে, নিজের মতের বিরুদ্ধে বাধ্য হয়ে এক মৌসুম বার্সায় থেকে যাচ্ছেন মেসি? সঙ্গত কারণেই উঠছে এই প্রশ্ন।

এর উত্তর দিয়েছেন মেসি। ফুটবলভিত্তিক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট গোল ডট কমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে গত সপ্তাহদেড়েক ধরে চলমান ঘটনা এবং এরও আগে থেকে চলে আসা ঘটনার দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে খোলামেলাই কথা বলেছেন মেসি। যেখানে জোসেফ বার্তেম্যুর অধীনে বর্তমান বোর্ডকেও রীতিমতো প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন তিনি। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন মেসি : সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও নানা কারণে সেই সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারলেন না লিওনেল মেসি। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি বার্সেলোনা ছেড়ে যাবেন। কিন্তু বাস্তবতা এতটাই কঠিন যে, সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং, আরও এক বছরের জন্য বার্সাতেই থেকে যেতে হচ্ছে বিশ্বসেরা এই ফুটবলারকে।

তবে সিদ্ধান্ত ধরে রাখতে না পারার ঘটনা মেসির এটাই প্রথম নয়, এ নিয়ে দ্বিতীয়বার। এর আগেও একবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে তার জীবনে।

এর আগে ২০১৬ সালেও একবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছিলেন তিনি। সেবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির কাছে টাইব্রেকারে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হওয়ার পর ক্ষোভে-দুঃখে মেসি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আর আর্জেন্টিনার হয়ে খেলবেন না। অর্থ্যাৎ, আন্তর্জাতিক ফুটবলকে গুডবাই জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
এরপরই শুরু হয় মেসি ভক্তদের আন্দোলন। নানা অনুরোধ-উপরোধ চলতে থাকে। এমনকি আর্জেন্টিনার প্রধানমন্ত্রী-প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত মেসিকে অনুরোধ জানিয়েছেন, সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার জন্য।
যে কারণে, অবসর ঘোষণার মাত্র একমাস পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হন মেসি। ফিরে আসেন আর্জেন্টিনা দলে। তার আগে ২০১৪ বিশ্বকাপ, ২০১৫ এবং ২০১৬- কোপা আমেরিকাসহ মোট টানা তিনটি বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেও শিরোপা বঞ্চিত থাকতে হয় মেসিকে।

এর চার বছর পর আবারও সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিবর্তন করতে বাধ্য হলেন মেসি। মূলতঃ বার্সা তার রিলিজ ক্লজ ৭০০ মিলিয়ন ইউরো দেয়া সম্ভব নয় বলেই মেসি ন্যু ক্যাম্পে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। অথচ তার ইচ্ছা ছিল বার্সেলোনা ছেড়ে তিনি যোগ দেবেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিতে। ২০২০-২১ মৌসুমে নতুন ক্লাবে যেতে হলে মেসি তথা তার নতুন দলকে পরিশোধ করতে হতো ৭০০ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা)। যা বর্তমান সময়ে অসম্ভবই বলা চলে। তবে মেসির সামনে খোলা ছিলো আইনি লড়াইয়ের পথ। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে খেলা ক্লাবে বিপক্ষে আদালতে যেতে পারতেন তিনি। কিন্তু এটিই চাননি মেসি।

প্রিয় ক্লাবকে আদালতে নেয়ার ইচ্ছেই ছিল না তার, ‘আমাকে এবং বার্সেলোনাকে জড়িয়ে অনেক মিথ্যা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যা আমাকে ব্যথিত করে। তারা ভেবেছে আমি নিজের সুবিধার জন্য কোর্টে যাব। আমি এমনটা কখনও করব না। কারণ আমি বার্সাকে ভালোবাসি।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি কখনও বার্সার বিপক্ষে মামলায় যেতে চাই না। এই ক্লাব আমাকে সবকিছু দিয়েছে, যখন থেকে আমি এখানে এসেছি। বার্সা আমার জীবনের মতোই প্রিয় এবং এখানেই আমি আমাকে খুঁজে পেয়েছি। বার্সা আমাকে সবকিছু দিয়েছে আমিও বার্সাকে সবকিছু দিয়েছি। তাই আমার ক্লাবের বিপক্ষে আমার কোর্টে যাওয়ার চিন্তা কখনওই আসেনি।’

এমনকি বাধ্য হয়ে আসন্ন মৌসুমটা ক্লাবে থাকলেও, নিজের মাঠের পারফরম্যান্সে এর প্রভাব পড়তে দেবেন না বলেও জানিয়েছেন মেসি। বরাবরের মতোই বার্সেলোনা এবং নিজের জন্য সেরাটা দিতে আত্মপ্রত্যয়ী ছয়বারের ব্যালন ডি অর জয়ী এ ফুটবলার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *