অপরাধীদের খুঁজে বিচারের মুখোমুখি করুন : প্রধানমন্ত্রী

অপরাধীদের খুঁজে বিচারের মুখোমুখি করুন : প্রধানমন্ত্রী

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত ও শিবির দেশের উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ করার জন্যই দেশব্যাপী তাণ্ডব চালিয়েছে।

তিনি এই ধ্বংসযজ্ঞের সাথে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে সহায়তা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মেট্রোরেল, বিটিভিসহ বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংসের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এসবের সাথে জড়িত, সারা বাংলাদেশের আনাচেকানাচে যে যেখানে আছে, তাদের খুঁজে বের করুন। তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য সহযোগিতা করুন। আমি দেশবাসীর কাছে এই আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল শুক্রবার সকালে ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে পুঁজি করে রামপুরার বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে (বিটিভি) চালানো ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন।

গত বৃহস্পতিবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শনের এক দিন পর প্রধানমন্ত্রী বিটিভি ভবন পরিদর্শন করলেন।
১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর সরকারে এসে এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর থেকে তার সরকার বিটিভির প্রভূত উন্নয়ন ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে এত বছর পর এসে দেখা গেল, সেই ’৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর যে নারকীয় তাণ্ডব, তারই যেন একটা বীভৎস রূপ বাংলার মানুষ দেখছে।

প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালে তথাকথিত আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবলীলা ও ধ্বংসযজ্ঞে ৩ হাজার ৮০০ যানবাহন, ২৮টি ট্রেন ও ট্রেনের বগি, লঞ্চ ও সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকে পুঁজি করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হলো।
শেখ হাসিনা বলেন, তবে এবারের আগুন লাগানোর ধরন আগেরগুলোর তুলনায় আলাদা। তারা এবার আগুন লাগাতে গানপাউডার ব্যবহার করেছে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কিন্তু টেলিভিশনের ওপর হাত দেয়নি বা কেউই কখনো দেয়নি। কিন্তু আজকে এই টেলিভিশন সেন্টারকে যারা এইভাবে পোড়াল, একটা কিছু নেই যে তাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। তাহলে এরা কারা? এরা কি এ দেশেরই মানুষ? এদের কি এই দেশেই জন্ম? একটা দেশকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার চিন্তা নিয়েই যেন তাদের এই আক্রমণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেল যেটা ছিল সারা বিশ্বের প্রতিটি বাঙালির কাছে একটা সম্পদ, সেটাকে ধ্বংস করল। যার মাধ্যমে মানুষ অল্প সময়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারত। আজ সেটা বন্ধ। আবার সেই ট্রাফিক জ্যাম, আবার সেই পূর্বের অবস্থায় মানুষকে ফেলে দিলো। আর এই টেলিভিশন সেন্টারে তারা যেভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, যেসব জিনিস মানুষের সেবা করে মানুষের জন্য কাজ করে, সেই জায়গাগুলোতেই আঘাত।

শেখ হাসিনা বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও আগুন দিয়ে পোড়াল। গাড়িগুলো, এমনকি জাপান থেকে আনা সিটি করপোরেশনের অত্যাধুনিক ময়লার গাড়িগুলো পুড়িয়েছে, পানি শোধনাগারে হামলা করতে গেছে, পয়ঃশোধনাগারে হামলা, এটা কী হচ্ছে? কী তাদের মানসিকতা?

শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমি তাই দেশবাসীকে বলব, এই ঢাকাবাসীকেই বলব, আজ আপনাদের এই দুর্ভোগ, আমি তো লাঘব করে দিয়েছিলাম। কিন্তু যারা এটা ধ্বংস করল, আর যাদের জন্য এই দুর্ভোগ, আর যাদের জন্য আজ বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, আমি তাদের বিচারের ভার এ দেশের জনগণের ওপরই দিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, যারা এ দেশের মানুষের রুটিরুজির ওপর হাত দিয়েছে, রুটিরুজির পথ বন্ধ করে দিয়েছে, তাদের বিচার জনগণকেই করতে হবে। কারণ এ দেশের জনগণই একমাত্র শক্তি।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিভ্রান্তি ছড়িয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে কাউকে যেন বিভ্রান্ত করতে না পারে। আসল সত্যটা জানুন। যারা এসবের সাথে জড়িত, সারা বাংলাদেশের আনাচেকানাচে যে যেখানে আছে, তাদের খুঁজে বের করুন। তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য সহযোগিতা করুন। দেশবাসীর কাছে আমি সেই আহ্বানই জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশ আমরা অনেক কষ্ট করে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে স্বাধীন করেছি। আজ বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। সেই মর্যাদাকে ধ্বংস করার জন্যই এই ধ্বংসযজ্ঞ।

শেখ হাসিনা বিটিভির ধ্বংসযজ্ঞ আর পোড়া অবস্থা দেখে স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, আজ অতীতের কথা মনে পড়ে, আমি কতবার এখানে এসেছি। প্রত্যেক নির্বাচনের আগে এখানে ভাষণ দিতে এসেছি। নানা অনুষ্ঠানে এসেছি। আজ যে ধ্বংসযজ্ঞ দেখলাম, এরপর এটা আবার কবে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা যাবে, জানি না।

বিটিভির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও অনেক চেষ্টা করেছেন। এই সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে পার পাওয়া অত্যন্ত কষ্টকর ছিল। তবু আপনারা এই জাতীয় সম্পদকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় অত্যন্ত আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, এইগুলো দেখে আমি আসলে আর কথা বলতে পারছি না। এক একটা জিনিস গড়ে তুলতে অনেক কষ্ট করতে হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জনগণের উন্নয়নের জন্য দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করি। সেটা আমার দেশের মানুষেরই জন্য। একটা জিনিস এমনভাবে তৈরি করার চেষ্টা করি, যাতে এইগুলো শুধু দেশে নয়, বিদেশীদের কাছেও দৃষ্টিনন্দন হয়। আমরা দেশের যে উন্নতি করছি, তার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সেই জায়গাগুলো একে একে ধ্বংস করা হচ্ছে। এত দিনের কষ্টের ফসল সব শেষ করে দিতে চাচ্ছে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কষ্টের। দেশবাসীর কাছে এর বিচার চাই, আমি তাদের সহযোগিতা চাই।

তিনি বলেন, কিন্তু আজ টেলিভিশন ভবনে এসে যে ধ্বংসযজ্ঞ আমি দেখলাম এটা কারো পক্ষেই সহ্য করার নয়। আজ বিশে^ বাংলাদেশের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হলো। যদিও যারা আগুন দিয়েছে তাদের কিছু আসে যায় না। কারণ লন্ডন থেকে নির্দেশ দেয় যেখানে যেখানে বাঙালি আছে তাদের আন্দোলন করতে হবে।

সরকার প্রধান বলেন, লন্ডনে আওয়ামী লীগের ওপর হামলা করা হলো। সেখানে পুলিশ এসে বিএনপির তিন নেতাকে গ্রেফতার করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) বিক্ষোভ করাতে ৫৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১৬ জন ১০ বছরের কারাদণ্ড আর বাকিদের সেখানে রাখা হবে না। দেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে। তারা যে রুটি-রুজির পথ হারাল শুধু তাই নয়, যেসব বাঙালি সেখানে থাকে তাদের মুখটা আজ কোথায় গেল। কারণ ঐ দেশে আইন আছে, কেউ মিছিল করতে পারে না কিন্তু তাদের উসকে দেয়া হয়েছিল লন্ডন থেকেই। তিনি বলেন, সেখানে আর বাংলাদেশীদের নেয়া হবে না জানতে পেরে তিনি তাৎক্ষণিক সেখানকার দূতাবাস এবং সে দেশের রাষ্ট্রদূতের সাথে কথা বলেছেন। সৌদি আরবও কঠিন আইন প্রয়োগকারী দেশ। সেখানেও ২০ জন গ্রেফতার হয়েছেন।

তাহলে এই গ্রেফতার হওয়া লোকজন ও আমাদের লাখ লাখ কর্মীর ভবিষ্যৎ কি। সে প্রশ্ন উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানেও তিনি ম্যাসেজ পাঠিয়েছেন। কিন্তু তাদের আইন তো তাদের নিজস্ব গতিতেই চলবে। এখনো বিভিন্ন দেশে ফোন করে আন্দোলনের জন্য উসকে দেয়া হচ্ছে, এতে সেখানকার বাংলাদেশীদের রুটি-রোজগারও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামি মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে এখন দেশ ধ্বংসে নেমেছে, সাথে জামায়াত-শিবির যারা সবসময়ই স্বাধীনতাবিরোধী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষা ও নিরাপত্তা বিধানে তার সরকার কারফিউ দিতে এবং সেনাবাহিনী নামতে বাধ্য হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মানুষের জানমাল রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আজকে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।’

সরকার প্রধানের যে বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা নিজেদের ‘রাজাকার’ বলে স্লোগান দিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, তার সেই বক্তব্য ‘বিকৃত করা হয়েছিল’।

তিনি বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের দিকেই যেন তাদের বেশি ক্ষোভ। আমার একটা কথা নিয়ে কতদিন প্রতিবাদ করল, কী কথা বলেছিলাম আমি? আমার কথাটাকে বিকৃত করা হয়েছিল। তাদের স্লোগানটা কি? ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার। তোমার বাবা, আমার বাবা-রাজাকার রাজাকার।’
তার মানে তারা নিজেদেরকেই রাজাকার হিসেবে পরিচয় দিলো। আমি তো তাদের রাজাকার বলিনি, তারা নিজেরাই স্লোগান দিয়ে নিজেদেরকে রাজাকার হিসেবে পরিচিত করল সকলের কাছে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের শিকার বিটিভি ভবনের অবস্থা দেখতে শুক্রবার সকালে রাজধানীর রামপুরায় যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই তিনি ওই বক্তব্য নিয়ে কথা বলেন।

আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিক্যালে প্রধানমন্ত্রী
কোটা আন্দোলনে সংঘর্ষে আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঢামেকে চিকিৎসাধীনদের খোঁজখবর নেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি ইউনিটে যান এবং চিকিৎসাধীনদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। প্রধানমন্ত্রী আহতদের সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা: রোকেয়া সুলতানা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *