অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে হিমশিম আওয়ামী লীগ

অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে হিমশিম আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে আওয়ামী লীগ। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো জেলার নেতাদের ঢাকায় তলব করা হচ্ছে। বৈঠক হচ্ছে বিবদমান দুই গ্রুপের সঙ্গে। আবার কখনও টেলিফোনেও বিবাদ মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে। অন্যদিকে বিভিন্ন জেলা থেকে এরই মধ্যে একে-অপরের বিরুদ্ধে চিঠি দিয়েছেন ধানমন্ডিতে অবস্থিত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে। একইভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনেও।

নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে এ ধরনের বিরোধের অভিযোগ ততই বাড়ছে। এদিকে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলার বিরোধপূর্ণ আসন চিহ্নিত করে সাংগঠনিক সফর শেষ করেছে আওয়ামী লীগ। দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও সভাপতিম-লীর সদস্যদের নেতৃত্বে ১৫টি টিম ২৬ জানুয়ারি থেকে সাংগঠনিক সফর শুরু করেন। কমিটিতে থাকা বেশ কয়েক সদস্য বলেন, সফরে বেশ কয়েকটি জেলায় দলের নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখতে পেয়েছি। আমরা সেগুলো মেটানোর চেষ্টা করেছি। কিছু নির্বাচনী এলাকার কোন্দল মেটানো সম্ভব হয়নি। সময়-সুযোগ মতো সেসব নেতাদের সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক অথবা দলের সভাপতি তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ হচ্ছে বড় দল। সাংগঠনিকভাবেও শক্তিশালী। তার ওপর ক্ষমতায় রয়েছে টানা ৯ বছরেরও বেশি সময়। তাই দলের অভ্যন্তরে এ ধরনের কোন্দল থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের কয়েক নেতা বলেন, যেসব এলাকায় দলীয় কোন্দল রয়েছে সেগুলো মেটাতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ রাজধানীর বাইরের নেতারা কেন্দ্রের একেক নেতার লোক পরিচয় দিচ্ছে। আবার কেন্দ্রের সেসব নেতারা তাদের পক্ষে সাফাইও গাইছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঢাকার বাইরের কোন্দল মেটাতে গিয়ে নিজেদের মধ্যেই কোন্দল তৈরি হচ্ছে। এসব কারণে কোন্দল মেটানো কঠিন হয়ে পড়ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আওয়ামী লীগের সাগঠনিক সফরে উঠে এসেছে নানা ধরনের বিরোধের চিত্র। এমপির সঙ্গে এমপির, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে এমপি কিংবা জেলা সেক্রেটারির, কোথাও আবার জেলা-উপজেলা নেতৃত্বেও রয়েছে প্রচ- বিরোধিতা। এসবের পাশাপাশি রয়েছে, গ্রুপিং, লবিং ও পরস্পরবিরোধী অবস্থান। আসন্ন নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে এ চিত্র আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সফরে গিয়ে যেসব বিরোধ উঠে এসেছে তা রিপোর্ট আকারে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি অফিসে নিয়মিত যাতায়াত করেন এমন কয়েক নেতা বলেন, প্রায় সময় এ অফিসে কোনো না কোনো জেলার নেতাদের তলব করা হচ্ছে। তাদের বিরোধ মেটানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কোনো বৈঠক সফল হচ্ছে আবার কোনো বৈঠক ব্যর্থ হচ্ছে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে কয়েক কেন্দ্রীয় নেতা এসব বিরোধ মেটানোর দায়িত্ব পালন করছেন।

এরই অংশ হিসেবে গত ২২ মে জেলা কমিটি থেকে সংসদ সদস্যসহ ৫ জন নেতাকে বহিষ্কার ও শেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে প্রত্যাহার করার বিষয়টি নিয়ে জেলা নেতাদের ঢাকায় তলব করে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। দলের পক্ষ থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পথচলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বৈঠকে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দিপু মনি, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল উপস্থিত ছিলেন। আর শেরপুর জলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুইপ আতিউর রহমান আতিক, সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার পাল, সহ-সভাপতি শামছুন্নাহার কামাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া, নাজিমুল হক, নির্বাহী সদস্য, বদিউজ্জামান বাদশা, শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী ফজলুল হক চাঁন, নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ প্রমুখ। বৈঠক সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় নেতারা শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগকে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দলীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলার আহ্বান জানানো হয়। শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে বিষয়টি চরম আকার ধারণ করলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের উভয়পক্ষকে ঢাকায় তলব করে বৈঠক বসে আওয়ামী লীগ। একইভাবে সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী সাভার, ধামরাই ও কামরাঙ্গীচর এলাকার কয়েক নেতাকে আওয়ামী লীগ অফিসে তলব করা হয়। এসব প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, এখানে সাংগঠনিক বিরোধিতা থাকতেই পারে। আমরা সেসব বিরোধিতা চিহ্নিত করতেই কাজ করছি। দলের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলা সফরে খুব সহজেই জানতে পেরেছি কার সঙ্গে কার বিরোধ। কে-কি চায়।

একটি জেলার নানা স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনেছি। যেসব বিরোধ আমাদের পক্ষে মেটানো সম্ভব হয়েছে তা মিটিয়েছি। যেগুলো সম্ভব হয়নি সেগুলো নিয়ে কেন্দ্রে রিপোর্ট করেছি। দলের সভাপতির কাছে আমাদের রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন এলে এসবের কিছু থাকবে না। আওয়ামী লীগ নির্বাচনপ্রিয় দল। দল মনোনয়ন চূড়ান্ত করার পর সব বিরোধ মিটে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। দলের কেন্দ্রীয় কয়েক নেতা জানান, সরকারে থাকায় এরই মধ্যে জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় দল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি বিএনপিসহ আরো কয়েকটি দল থেকে অনেকে যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগে। এতে দলে নেতা ও কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশ কিছু আসনে দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে এমন সম্ভাবনায় মাঠে নেমেছেন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী বহু নেতা। তারা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক, জনসংযোগ, নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেয়াসহ বিভিন্ন কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে এলাকায় নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। এতে দেশব্যাপী এক ধরনের নির্বাচনী আবহ সৃষ্টি হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। তবে নির্বাচনী এ আবহ দলে কোন্দল বাড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে দলের বর্তমান সংসদ সদস্যদের বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। তাই নির্বাচন সামনে রেখে এমন কোন্দল সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানান দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

___________

patheo24/105

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *