পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে আবার ভিক্ষুকের দেশে পরিণত করতে দেশব্যাপী ধ্বংসাত্মক তাণ্ডবলীলা চালানো হয়েছিল। এটা দেশের অর্থনীতিকে পুরোপুরি পঙ্গু করার ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত ও শিবিরের সহিংসতার প্রসঙ্গ উল্লেøখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা করার উদ্দেশ্য ছিল আমাদের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণরূপে পঙ্গু করে দেশকে আবার ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করা। এটাই বোধ হয় এর পেছনে তাদের ষড়যন্ত্র।’ এভাবে আর কেউ যেন কোনো ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে না পারে, সেই জন্য সবাইকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সন্ত্রাসী হামলায় আহতদের দেখতে শেরেবাংলা নগরের পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন (নিটোর) পরিদর্শন শেষে আবেগঘন কণ্ঠে এই কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করতেই এই ষড়যন্ত্র। দেশের মানুষকেই এই সহিংসতার বিচার করতে হবে। কোটা আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’-এর জন্যই এত মানুষ হতাহত হলো। এইভাবে আর কেউ যেন কোনো ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে না পারে, সেই দিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আহতদের চিকিৎসার জন্য যা যা লাগবে করে দেবো এবং করে দিচ্ছি। যাদের অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজনের ব্যবস্থা নেবে তার সরকার। যাতে তারা আবার সুস্থ মানুষের মতো চলাফেরা করতে পারে। নিজেদের কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সাধ্যমতো আমরা করে দেবো; কিন্তু দেশবাসীর কাছে আমি বিচার চাই। অপরাধটা কী করেছি? এই ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ আর কেউ যেন এই দেশে চালাতে না পারে, সেই জন্য আমি সকলের সহযোগিতা চাই।’ শেখ হাসিনা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত কয়েকজনের সাথে কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। আহতদের সাথে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবেগাপ্লুত হতে দেখা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী আহত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সবধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।
নিটোর পরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী শামীম উজ্জামান আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এই সময় প্রধানমন্ত্রী আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সবধরনের পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেন।
সরকারপ্রধানের সাথে এই সময় অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা: সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: রোকেয়া সুলতানা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো: তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো: নাঈমুল ইসলাম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মহাখালীতে অবস্থিত সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সংশ্লিষ্টরা এই সময় উপস্থিত ছিলেন। সরকারপ্রধান একই সাথে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজার ধ্বংসযজ্ঞও পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মহাখালীতে অবস্থিত সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ পরিদর্শন করেন। তিনি গতকাল সকালে সেতু ভবনে প্রবেশের পর অশ্রুসিক্ত চোখে এর বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত অংশ দেখে হতবাক হয়ে যান। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সংশ্লিøষ্টরা এই সময় উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৮ জুলাই কয়েক শ’ দুষ্কৃতকারী সেতু ভবনে প্রবেশ করে এটি ভাঙচুর করে ও আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তারা ভবন থেকে সরকারি সম্পত্তি লুট করে। দুষ্কৃতকারীরা অনেক যানবাহন ও মোটরবাইক ভাঙচুর, বিভিন্ন শেড ও কক্ষ তছনছ করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী পরে মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ পরিদর্শন করেন এবং ১৮ জুলাই সন্ত্রাসী হামলার শিকার ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনার বিভিন্ন অংশ ঘুরে ঘুরে দেখেন।
সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভবন দু’টির ধ্বংসযজ্ঞের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন।
ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশন চালুর জন্য জাপানের সহযোগিতা কামনা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত দু’টি মেট্রোরেল স্টেশন আবার চালু করতে জাপানের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত আইওয়ামা কিমিনোরি প্রধানমন্ত্রীর অফিসে তার সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে গেলে তিনি এ সহায়তা চান।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব মোহাম্মদ নাঈমুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা প্রথমে মেট্রোরেল স্টেশনগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করবেন এবং তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন যে, কিভাবে তারা বাংলাদেশকে স্টেশনগুলো আবার চালু করতে সাহায্য করতে পারেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় সমবেদনা জানিয়েছেন জাপানের রাষ্ট্রদূত।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান ও অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।