পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: অর্ধশত বছর পর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বন্দরে এসেছে রুশ যুদ্ধজাহাজ। রাশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের জাহাজ তিনটি চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে। ঢাকায় নিযুক্ত রুশ দূতাবাস গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। দূতাবাসের ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে এ ঘটনাকে দুই দেশের সম্পর্কের জন্য একটি বিশাল মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসের খবরে বলা হয়েছে, অ্যাডমিরাল ট্রাইবাটস ও অ্যাডমিরাল প্যান্টেলেভ নামের দুটি সাবমেরিনবিধ্বংসী যুদ্ধজাহাজ ও পেচেঙ্গা নামে একটি ট্যাংকার জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে। এর আগে সর্বশেষ ১৯৭২ সালে মাইন অপসারণ অভিযান পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল রুশ নৌবহর। ১৯৭৪ সালের জুন পর্যন্ত ওই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মন্টিটস্কি তাসকে জানান, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাইন অপসারণের জন্য ৫০ বছর আগে একটি রুশ নৌবহর মোতায়েন করা হয়েছিল। তখন বহরটি এসেছিল সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি দেশকে মানবিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ বন্দরে অনেক মাইন বসানো হয়েছিল, যে কারণে অনেক জাহাজ ডুবেও গিয়েছিল।
তিনি জানান, তখন মাইন সংকট সমাধানে বাংলাদেশ সরকার অনেক দেশের কাছে আবেদন জানায়। কিছু দেশ তাতে সায় দিলেও বিনিময়ে বিপুল অর্থ দাবি করে। সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি দেশের কাছে অত টাকা ছিল না। সে সময় একমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া) মানবিক কারণে এগিয়ে আসে। পরে চট্টগ্রাম বন্দরে ‘মাইন ক্লিয়ারিং অপারেশন’ নামে একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। ১৯৭২ সালের এপ্রিলে শুরু হয়ে ১৯৭৪ সালের জুন পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়।
রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মন্টিটস্কি জানান, ২৬ মাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সোভিয়েত নৌবাহিনীর আট শতাধিক নাবিক চট্টগ্রাম বন্দরের মাইন অপসারণ করেন। অভিযানে এক সোভিয়েত ডুবুরির মৃত্যু হয়। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হন নৌসেনারা। এর পর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পুরো পৃথিবী থেকে জাহাজ আসার সুযোগ তৈরি হয়।
চট্টগ্রামে রাশিয়ার অনারারি কনসাল আশিক ইমরান বলেন, ‘রুশ নাবিকরা আবারো চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছেন। তবে এবার পুরোপুরি বন্ধুত্বপূর্ণ এক সফর। এটি প্রমাণ করে বর্তমানে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।’