অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের দিকে চোখ বিসিবির!

অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের দিকে চোখ বিসিবির!

স্পোর্টস ডেস্ক ● চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আগামীকাল না হয় পরশু আসতে পারেন- এমনটাই জানানো হচ্ছে বিসিবি থেকে। পদত্যাগ করার পরও হাথুরুসিংহের সেই আসা না আসা, কিংবা আসার পরের কথোপকোথনের ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছুই। অনেক কিছু নির্ভর করছে শুনে আবার মনে করবেন না, হাথুরুসিংহে অধ্যায় বুঝি শেষ হয়নি! তিনি আবার হয়ত বাংলাদেশের কোচ হিসেবে ফিরে আসতে পারেন! বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন হয়ত বুঝিয়ে-সুঝিয়ে কিছু বেতন ও আনুসাঙ্গিক সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে হাথুরুসিংহেকেই রেখে দেবেন! সে সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোঠায়। তবে যেহেতু চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে হাথুরুসিংহে মেয়াদ পূর্তির বেশ আগে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে ফেলেছেন, তাই নিয়ম ও চুক্তি অনুযায়ী বোর্ডের সাথে একটা রফা তার করতেই হবে। সেটা ঢাকায় স্ব-শরীরে এসেই হোক কিংবা মেইলে বা ফোনে। আরও একটু ভেঙ্গে বললে, হাথুরুসিংহে যেটা করেছেন সেটা হলো, প্রথমতঃ বিসিবির সাথে তার চাকুরির শর্ত ভঙ্গ, দ্বিতীয়তঃ পেশাদারিত্বের চরম বরখেলাপ। যেহেতু বিসিবির সঙ্গে তার চুক্তি ২০১৯ সালের জুন (বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর) পর্যন্ত; কিন্তু তিনি তার প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় আগে হুট করে সে শর্ত ও চুক্তি ভেঙ্গে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে ফেলছেন। তাই বিসিবির শতভাগ এখতিয়ার ও আইনগত অধিকার আছে, তার কাছে এর কারণ জানতে চাওয়ার।

মূলতঃ সে কারণ ও ব্যাখ্যাই জানতে চাওয়া হবে হাথুরুরকাছে। এরই প্রেক্ষিতে তাকে স্ব-শরীরে আসতে বলা হয়েছে ঢাকায়। তবে ভিতরে ভিতরে বিসিবি বাংলাদেশের কোচ খোঁজার মিশনে নেমে পড়েছে। জানা গেছে, এবার শুরু থেকেই উপমহাদেশীয় কোন কোচকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা ভেবে কোচ খোঁজার মিশন শুরু করেছে বিসিবি। ইতিমধ্যে সাবেক লঙ্কান তারকা ব্যাটসম্যান ও এবারের বিপিএলে খুলনা টাইটান্সের কোচ হিসেবে কাজ করা মাহেলা জয়বর্ধনেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সাথে লঙ্কান গ্রেট কুমারা সাঙ্গাকারার কথাও শোনা যাচ্ছে। তাকেও নাকি কোচের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে দুজনই নাকি ফুলটাইম কোচিং করাতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তারা পার্টটাইম বা স্বল্প মেয়াদে কাজ করতেই বেশি আগ্রহী।

এদিকে উপমহাদেশের বাইরে আর একজন সফল ও হাই প্রোফাইল কোচের দিকেও চোখ পড়েছে বিসিবির। তিনি অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক ও জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যান।

বোর্ডের নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ জাতীয় দলের পরবর্তী হেড কোচের সম্ভাব্য তালিকায় অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের নাম আছে। বোর্ড তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টাও করছে। হাথুরুসিংহে ঘুরে গেলেই হয়ত তার সাথে যোগাযোগ করা হবে বিসিবির পক্ষ থেকে। এদিকে সমালোচক মহল বলছে, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারেরও নাকি হাথুরুসিংহের মত খবরদারি ও নজরদারির প্রবণতা আছে। এ জিম্বাবুইয়ান নানারকম প্রস্তাব ও দাবি দাওয়া দিয়েই ইংল্যান্ডের প্রধান কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের কোচের প্রস্তাব পেলেও তিনি নাকি নানা শর্ত জুড়ে দিতে পারেন। সেখানেও ওই হাথুরুসিংহের মত দল নির্বাচনে তার মতামত ও অংশগ্রহণ ছাড়াও ‘এ’ দল এবং পাইপ লাইনের ক্রিকেটারদের কোচিং ও নজরদারি করার ইচ্ছেও পোষণ করতে পারেন তিনি। মোটকথা, জাতীয় দল পরিচালনা তথা কোচিংয়ের পাশাপাশি ‘এ’ দল এবং অনুর্ধ্ব-১৯ দলের কোচিং এবং পরিচর্যা ও পরিচালনার দায়িত্বটাও নিজের কাঁধেই রাখতে চান অ্যান্ডি। ইংল্যান্ডের কোচ হওয়ার আগেও নাকি এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশের কোচ হলে তার কর্ম পরিধি কী হবে? তিনি কী কী করবেন বা করতে চাইবেন- তা বিসিবির প্রস্তাব পাবার পর নিশ্চয়ই জানাবেন এ জিম্বাবুইয়ান। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাঁ-হাতি অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যান। খেলোয়াড়ী জীবন শেষে, ২০০৭ সালে ম্যাথ্যু মেনার্ডের বদলে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের সহকারি কোচ হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। এরপর পিটার মুরের সাথেও ইংলিশ দলের সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে তিনি ইংল্যান্ডের প্রধান কোচের দায়িত্ব বুঝে নেন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত ওই দায়িত্ব পালন করেন। কোচ হিসেবে দায়িত্ব পাবার পর অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার যথেষ্ট দক্ষতা এবং দল পরিচালনায় মুন্সিয়ানার পরিচয় দেন। তার কোচিংয়ে ইংলিশ ক্রিকেট দলের পারফরমেন্সেও যথেষ্ট উন্নতি ঘটে। অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের কোচিংয়েই ২০১০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে বিশ্ব টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। এছাড়া অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার কোচ থাকাকালীন, ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হওয়া অ্যাসেজে অজিদের ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ হারায় ইংলিশরা।

এর পরের বছর আবার অজিদের অ্যাসেজে ৩-০‘তে হারানো ইংল্যান্ড দলের কোচ ছিলেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। কোচিং সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১১ সালে বিবিসি স্পোর্টস অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারকে ‘কোচ অফ দ্যা ইয়ারে’ ভূষিত করে। কিন্তু এরপর পরই সাফল্যে ছেদ ফ্লাওয়ারের। নভেম্বর ২০১৩-জানুয়ারী ২০১৪, এই সময় অস্ট্রেলিয়ার কাছে অ্যাসেজে ৫-০ ব্যবধানে চরমভাবে পর্যদুস্ত হয় ইংল্যান্ড। ২০১৪ সালের জুলাইতে ইংল্যান্ডের প্রধান কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ান এ জিম্বাবুইয়ান। এরপর এখন পর্যন্ত আর কোন টেস্ট দলের সাথে সম্পৃক্ত হননি। বিসিবির প্রস্তাব পেলে তিনি তা বিশেষ বিবেচনা করবেন, তা বলাই যায়।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *