আইপিএল ফাইনালে সাকিবদের হায়দরাবাদ

আইপিএল ফাইনালে সাকিবদের হায়দরাবাদ

স্পোর্টস ডেস্ক : সাকিবের মনে কতটা জেদ জমা ছিল? যদি কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক দীনেশ কার্তিকের বোল্ড হওয়ার পরের দৃশ্যটি দেখে থাকেন, তাহলে আর লিখে বোঝানোর সাধ্য আছে কার! কার্তিককে বোল্ড করে মুষ্টিমেয় হাতটা গর্জন তুলে হাওয়ায় ওড়ালেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ওই মুষ্টিমেয় হাতের মধ্যেই তো লুকানো বার্তা, ‘দেখিয়ে দিলাম।’ বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডারের নতুন করে প্রমাণ করার কিছুই নেই। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ওই সময়ে এই উইকেটটাই ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে। আর উত্তেজনার ম্যাচে শেষ পর্যন্ত দল পেয়েছে ১৩ রানের জয়। সঙ্গে ফাইনালের টিকিটও।

শুক্রবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে পাওয়া এই জয়ে আইপিএল এর ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে হায়দরাবাদ। শনিবার এই ইডেন গার্ডেনেই চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে শিরোপার লড়াইয়ে নামবে তারা। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রান করে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। জবাবে ৯ উইকেটে ১৬১ রানে গুটিয়ে যায় কলকাতা নাইট রাইডার্স।
কলকাতার মাঠে হায়দরাবাদের এই ফাইনালে ওঠার গল্পের পরতে পরতে লেখা থাকবে আফগানিস্তানের লেগ স্পিনার রশিদ খানের নাম। দলকে জেতাতে শুক্রবার কি না করেছেন রশিদ? ব্যাট হাতে ঝড় তোলে ১০ বল খেলে ৩৪ রানে ছিলেন অপরাজিত। আর ডান হাতের ঘূর্ণিতে ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। এমন খেলোয়াড়ের জন্য নিলামের টেবিলে কেন কাড়াকাড়ি হয়েছিল, দলকে ফাইনালে তুলে তা বুঝিয়ে দিলেন রশিদ।

আফগান এই স্পিনারের পরেই আসবে বাংলাদেশের সাকিবের কথা। ২৪ বল খেলে ২৮ রান করেছেন তিনি। আর বল হাতে ৩ ওভারে ১৬ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। রশিদের পরিসংখ্যানের পাশে সাকিবকে মনে হতে পারে, এ আর এমনকি! আসলে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নাইটদের অধিনায়ক কার্তিককে বোল্ড করে সানরাইজার্সকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন সাকিবই। তাই তো উইকেট পাওয়ার উচ্ছ্বাসটা ছিল ম্যাচ জয়ের মতো। আর কলকাতার বিপক্ষে সাকিবের এক একটি রান ও উইকেট তো জবাব। যেহেতু টানা সাত মৌসুম কলকাতার জার্সিতে খেলার পরেও বিদায় বেলায় জোটেনি সামান্য শুভেচ্ছা বার্তাও।

শুরুতে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে ওপেন করতে নেমেছিলেন ঋদ্ধিমান সাহা। শুরুটা ভালোই করে দিয়েছিল এই জুটি। ব্যক্তিগত ৩৪ রান করে শিখর ফিরে গেলে ৫৬ রানে জুটি ভাঙে তাঁদের। যাকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি আশা, সেই সানরাইজার্স অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ওয়ান ডাউনে এসে মাত্র ৩ রান করে ফিরে গিয়েছেন। লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন ঋদ্ধিমান। কিন্তু দলীয় ৮৪ ও ব্যক্তিগত ৩৫ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এর পরে সাকিব এসে ২৪ বল খেলে করেছেন ২৮ রান। এর পরে শুরু হয় যাওয়া আসার পালা। মনে হচ্ছিল হায়দরাবাদ তেমন পুঁজি করতে পারবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৭৪ রান সম্ভব হয় মূলত রশিদের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের কল্যাণে। ৪টি চার ও ২ ছয়ে ১০ বলে ৩৪ রান করে অপরাজিত থাকেন রশিদ। পরে তো বল হাতেও দেখিয়েছেন ভেলকি।

১৭৫ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই হায়দরাবাদের বোলারদের ওপর চড়াও হন নাইটদের দুই ওপেনার ক্রিস লিন ও সুনীল নারাইন। অসি ও ক্যারিবীয় জুটিতে প্রথম তিন ওভারেই রান আসে ৩৮। নিজেদের মাঠে দুর্দান্ত ছুটতে থাকা নাইটদের শিবিরে চতুর্থ ওভারে এসে দলীয় ৪০ ও ব্যক্তিগত ২৬ রানে নারাইনকে ফিরিয়ে প্রথম আঘাত হানেন সিদ্ধার্ত কোল।

কিন্তু উইকেট হারিয়েও রানে চাকা সচল থাকে। একপর্যায়ে ২ উইকেট হারানো কলকাতার সংগ্রহ ছিল ৮৭ দশম ওভারে রবিন উথাপ্পাকে রশিদ খান বোল্ড করে ফেরালে ম্যাচের গতি পাল্টানোর ইঙ্গিত আসে। কিন্তু এক ওভার পরেই অধিনায়ক কার্তিককে বোল্ড করে সাকিব ফেরালে ম্যাচের গতি পাল্টে যায়। এরপরে শুরু রশিদের ভেলকিতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যেতে থাকে কেকেআর। ৪৮ রানে দুর্দান্ত ব্যাট করতে থাকা ওপেনার লিনকেও ফিরিয়েছেন তিনি। এরপরে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি কেউ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *