পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আইসিইউতে ভর্তি হয়েছেন আল্লামা আহমদ শফি।
বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ভেতরগত দ্বন্দ্ব ও ছাত্র বিক্ষোভের মুখে অবরুদ্ধ অবস্থায় হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করার পর আল্লামা শফির হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। মাদ্রাসায় আন্দোলন চলাকালীন রাত ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সালাউদ্দীন নানুপুরী। তিনি বলেছেন, মাদ্রাসার মজলিসে শূরার বৈঠকের সিদ্ধান্ত মাইকে প্রচার হওয়ার পর হঠাৎ আল্লামা শফি অসুস্থতা অনুভব করেন। পরে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে চমেকে নিয়ে যায় কয়েকজন শিক্ষার্থী। সেখানে তিনি আইসিইউ ৮ নম্বর বেডে ভর্তি আছেন।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে আল্লামা শফী অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তিনি হাসপাতাল যেতে চাইলেও তাকে আটকে রাখে আন্দোলনকারীরা।
রাত ১২ টার দিকে মাদ্রাসার প্রধান গেটের সামনে প্রায় আধাঘণ্টা আল্লামা শফীকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে রেখেছিল আন্দোলনরত ছাত্ররা।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে শূরা কমিটির কাছে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন হেফাজত আমির শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
মজলিসে শূরার ঘোষণায় বলা হয়, মুহতামিম বা মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে যাওয়ায় আল্লামা শফীকে সদরে মুহতামিম বা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া শূরার বৈঠকে মাওলানা নুরুল ইসলাম কক্সবাজারিকে থেকে অব্যাহতি দেয়ার পাশাপাশি মাওলানা আনাস মাদানীর বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।
মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাদের মধ্য দিয়ে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসায় দৃশ্যত আল্লামা আহমদ শফীর সুদীর্ঘ দিনের কর্তৃত্বের অবসান ঘটল।
এদিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের আমীর শাহ আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীকে স্বপদে পুনর্বহালের চেষ্টার খবরে বিক্ষোভ করে প্রতিষ্ঠানটির বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর মাদ্রাসা মাঠে জমায়েত হয়ে তারা ফের বিক্ষোভ শুরু করে। সকাল থেকে পুরো মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ নেন আন্দোলনরতরা। শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসার সব গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং আনাসপন্থি কয়েকজন শিক্ষকের কক্ষে ভাঙচুর চালায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে হাটহাজারী মাদ্রাসা বন্ধের আদেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে কারণ হিসেবে করোনায় স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের শর্ত মানা হচ্ছে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রজ্ঞাপনে।
এরপর রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সমস্যরা মাদ্রাসার সামনে থেকে সরে যায় এবং চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। পরে মাদ্রাসার বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় প্রবেশ করে।
এদিকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছাত্রদের চলমান আন্দোলনে বহিরাগতদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ করে দেশের ১০১ জন শীর্ষস্থানীয় আলেম ও ইমাম-খতিব এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মাদ্রাসার ভেতরগত বিষয়ে মুরব্বিরা বিশেষ করে শূরা সদস্যরা বিচার-বিবেচনা করবেন, এটাই দেশবাসী প্রত্যাশা করে। বিবৃতি প্রদানকারীরা হলেন-মুফতি আহমদুল হক, মুফতি ইনামুল হক, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা শামসুদ্দিন আহমদ প্রমুখ।
হেফাজতে ইসলামের নেতারা জানান, আমির আহমদ শফী ও মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। গত ১৭ জুন জুনায়েদ বাবুনগরীকে দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয় মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক শেখ আহমেদকে। তিনি হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া বাবুনগরীর ভাগিনা মাদ্রাসার শিক্ষক আনোয়ার শাহকে মাদ্রাসা থেকে এক মাস আগে বের করে দেওয়া হয়। সবকিছু মিলিয়ে বাবুনগরীর অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হন আনাসের ওপর। তাদের অভিযোগ, আহমদ শফী বয়স্ক হওয়ায় তাকে ভুল বুঝিয়ে আনাস এসব কাজ করিয়েছেন। এতে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সাত হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর এই প্রতিষ্ঠান কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
প্রসঙ্গত, প্রায় শতবর্ষী আল্লামা আহমদ শফী দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।
/এএ