আগামীকাল বেইজিং যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

আগামীকাল বেইজিং যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আগামীকাল সোমবার চীন যাচ্ছেন। এই সফরে বাংলাদেশ উন্নয়ন ইস্যুগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে অবকাঠামো খাতে চীনের আরো বিনিয়োগ চাইবে তিনি। বিশেষ করে পদ্মা সেতু নির্মাণের পর দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজ লাগাতে দক্ষিণাঞ্চলের সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগে (সিআইডিআই) চীনের সহযোগিতা চাওয়া হবে। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে চীন থেকে পণ্য আমদানিতে ৫০০ কোটি ডলার ঋণ চাওয়া হবে, যা দেশটি স্থানীয় মুদ্রা ইউয়ানে দিতে পারে।

অন্য দিকে চীন পাঁচটি নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায়। এগুলো হলো শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা গভীরতর করা, উন্নয়ন কৌশলকে আরো সমন্বয় করা, বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতাকে এগিয়ে নেয়া এবং চীনের বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ (জিডিআই), বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ (জিএসআই) ও বৈশ্বিক সভ্যতা উদ্যোগে (জিসিআই) বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি। চীন আশা করছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন বেইজিং সফরে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন স্তরে উন্নীত হবে।

প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কোয়াংয়ের সাথে বৈঠক করবেন। এই বৈঠকের পর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতার দলিলগুলোর স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করবেন। বাংলাদেশ ও চীনের নেতারা দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে আরো গভীর করার উপায়, পরস্পরের জন্য লাভজনক সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ এবং পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মতবিনিময় করবেন। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে আয়োজিত এক সম্মেলনে শেখ হাসিনা যোগ দেবেন।

আগামী ৮ থেকে ১০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের ঘোষণা দিয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, চীন ও বাংলাদেশ ভালো প্রতিবেশী, ভালো বন্ধু ও ভালো অংশীদার। উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে। রয়েছে অভিন্ন উন্নয়ন কৌশল। ৪৯ বছর আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর দুই দেশ একে অপরকে শ্রদ্ধা ও সমতার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেছে, পরস্পরের জন্য লাভজনক সহযোগিতায় সম্পৃক্ত হয়েছে, মৌলিক স্বার্থে একে অপরকে সমর্থন দিয়েছে এবং আধুনিকায়নকে যৌথভাবে এগিয়ে নিয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে আমরা বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার উন্নত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের নেতৃবৃন্দের কৌশলগত দিকনির্দেশনা ও প্রতিশ্রুতির কারণে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব গভীরতর হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন বেইজিং সফর চীন-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করবে বলে মুখপাত্র মন্তব্য করেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ কূটনৈতিক সংবাদদাতা সমিতির (ডিকাব) সাথে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফরে কী কী চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হতে পারে- জানতে চাইলে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়ো ওয়েন বলেন, এটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। এগুলো প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। তবে অবকাঠামো, বাণিজ্য উন্নয়ন, বিনিয়োগ, বাংলাদেশ থেকে কৃষি পণ্য আমদানি, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ), অর্থনীতি খাতে সহযোগিতা, ডিজিটাল অর্থনীতি, শিক্ষা, মিডিয়া ও জনগণের মধ্যে সম্পৃক্ততা, রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নসহ বিস্তৃত ইস্যুতে আলোচনা হবে।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে চীনের সহযোগিতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে অগ্রগতির কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের দেয়া একটি প্রস্তাব। পদ্মা সেতু নির্মাণের পর দক্ষিণাঞ্চলে উন্নয়নের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তা কাজে লাগাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের সময় আমাকে এই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের আরো বেশি মাত্রায় সম্পৃক্ত হওয়ার একটি সুযোগও বটে। এটা আমরা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছি। তবে বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। প্রস্তাবটি নিয়ে কিভাবে অগ্রসর হওয়া যায় এবং চীন কিভাবে সহায়তা করে করতে পারে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হতে হবে। প্রস্তাবটিকে বাস্তবে রূপ দিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। আগামী পাঁচ বছরে এ ব্যাপারে বাস্তব অগ্রগতি দেখা যাবে বলে আমি আশা করছি।

ইন্দো-প্যাসেফিক সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ইন্দো-প্যাসেফিক নিয়ে বাংলাদেশ তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে, যার সাথে আমাদের দ্বিমত নেই। আমরা শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও উন্নয়নমূলক ইন্দো-প্যাসেফিক অঞ্চল চাই। তবে ইন্দো-প্যাসেফিক কৌশলের নামে পশ্চিমারা এ অঞ্চলে সঙ্ঘাত সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কিছু ক্ষুদ্র ও মাধ্যম আকারের দেশকে পশ্চিমার নিজেদের পক্ষে টানার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। এটাকে আমরা শীতল যুদ্ধের মনোভাব হিসেবে বিবেচনা করি। আমরা বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বা সঙ্ঘাত চাই না।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *