আজানের উচ্চস্বর নিয়ে আপত্তি ধর্ম অবমাননার আওতায় পড়ে না: নাহদাতুল উলামা

আজানের উচ্চস্বর নিয়ে আপত্তি ধর্ম অবমাননার আওতায় পড়ে না: নাহদাতুল উলামা

ওয়ার্ল্ড ডেস্ক : ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সংগঠন নাহদাতুল উলামা শুক্রবার ঘোষণা দিয়েছে, মাইকের আজানের উচ্চস্বর নিয়ে আপত্তি জানানো ধর্ম অবমাননার আওতায় পড়ে না। বরং এরকম আপত্তিকে গঠনমূলক সমালোচনা হিসেবেই দেখা উচিত। ব্যক্তিগত কথোপকথনে আজানের উচ্চস্বর নিয়ে আপত্তি জানানো চীনা বংশোদ্ভূত একজন খ্রিস্টান মহিলার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। ২০১৬ সালের ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে সুমাত্রার একটি আদালত ধর্ম অবমাননা দায়ে অভিযুক্ত নারীকে সম্প্রতি সাজাও দিয়েছে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার আদালতের দেওয়া ওই রায়ের নিন্দাও জানিয়েছে নাহদাতুল উলামা।

মেইলিয়ানা নামের যে ইন্দোনেশীয় নারীর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা চলেছে তিনি চার সন্তানের জননী। আদালতের রায়ে তার দেড় বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার সবচাইতে বড় ইসলামি সংগঠন ধর্মীয় বিষয়ে আরও বেশি সহনশীলতার আহ্বান জানিয়েছে। অভিযুক্ত নারীর আইনজীবী আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়ে উল্লেখ করেছেন, ২০১৬ তালে তার মক্কেল ব্যক্তিগত কথোপকথনে মসজিদে ব্যবহৃত মাইকের উচ্চ শব্দ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার বক্তব্যকে এমনভাবে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন তিনি আজানেরই বিরুদ্ধাচরণ করেছেন।

প্রায় চার কোটি সদস্যের সংগঠন নাহদাতুল উলামার আইন বিভাগের প্রধান রবিকিন এমহাস বলেছেন, ‘মাইকে দেওয়া আজানের শব্দ অনেক বেশি, এমনটা বললে তাকে ধর্ম অবমাননা হিসেবে গণ্য করা যায় না। বরং ইন্দোনেশিয়ার মতো একটি বহুত্ববাদী সমাজে এমন অভিযোগকে মুসলমানদের গঠনমূলক সমালোচনা হিসেবেই দেখা উচিত।

একই সুর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কণ্ঠেও। তারা ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দেওয়া আদালাতের রায়কে হাস্যকর আখ্যা দিয়েছে। সংগঠনটির উদ্যোগে ইন্টারনেটে একটি আবেদনপত্র প্রকাশিত হয়েছে অভিযুক্ত নারীর মুক্তি দাবিতে। সেখানে গত শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় এক লাখ লাখ মানুষ স্বাক্ষর করেছেন।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট অভিযুক্ত নারীর বিরুদ্ধে থাকা ধর্ম অবমাননার মামলার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তার মুখপাত্র জহান বুডি বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি আইনি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন না’

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ায় মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সেখানে বৌদ্ধ খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুরাও বাস করে। সম্প্রতি দেশটিতে ইসলাম ধর্মের চরমপন্থী ব্যাখ্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এতদিন ধরে সহনশীল হিসেবে পরিচিত ইন্দোনেশিয়া ক্রমেই অসহিষ্ণুতার দিকে যাবে।

গত বছর জাকার্তার সাবেক গভর্নর বিচারের সম্মুখীন হয়েছিলেন ধর্ম অবমাননার দায়ে। তিনি চীনা বংশোদ্ভূত খ্রিস্টান ছিলেন। গভর্নর বলেছিলেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা কোরানকে ব্যবহার করে ভোটারদের বিভ্রান্ত করছে। তার এই ভাষ্যের জন্যই তাকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হয়েছিল।

রয়টার্স লিখেছে, ইন্দোনেশিয়ার বেশিরভাগ মসজিদে মাইক ব্যবহার করে আজান দেওয়া হয়। কিন্তু তা মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য। তবে কিছু কিছু মসজিদে আজান ছাড়াও দীর্ঘ সময় ধরে মসজিদে খুতবা দেওয়া হয়। দেশটির মসজিদ কাউন্সিল মাইক ব্যবহার করে খুতবা দেওয়াকে অপ্রয়োজনীয় আখ্যা দিয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *