আন্দোলনকারী সবাই শিক্ষার্থী কি না, প্রশ্ন অধ্যক্ষদের

আন্দোলনকারী সবাই শিক্ষার্থী কি না, প্রশ্ন অধ্যক্ষদের

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী সবাই শিক্ষার্থী কি না, আন্দোলনের অষ্টম দিনে এসে সেই প্রশ্ন তুলেছেন কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষ। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে অভিভাবকদের নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোর পরিচালনা পর্যদের সভাপতিকে ভূমিকা রাখারও দাবি জানিয়েছেন তারা।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট বন্ধ করা, পরিবহন শ্রমিকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিং করানোর পরামর্শ রেখেছেন কলেজপ্রধানরা।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে টানা আট দিন ধরে শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নেওয়ায় ঢাকা মহানগরীর সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজের প্রধানদের নিয়ে রোববার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সভা হয়। সভায় সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের শিক্ষক কানিজ মাহমুদ আক্তার বলেন, “অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের যেন ঝামেলা না হয় সে বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে।”

নজরুল শিক্ষালয়ের প্রধান শিক্ষক আকলিমা জাহান বলেন, “যেসব শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত হবে না তাদের চিহ্নিত করতে হবে। নতুন পোশাকে সবাই ছাত্র কি না তাও সরকারের খতিয়ে দেখা উচিত।” স্কুল-কলেজের পোশাকে আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সবাই শিক্ষার্থী নয় বলে কয়েকজন অধ্যক্ষ তাদের সন্দেহের কথা জানান।

হাজী মকবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল হাসান বলেন, “(শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ) এটা খেলা হিসেবে নিয়েছে, কারণ কলেজও কিছু বলছে না, কেউ কিছু বলছে না। “শিক্ষার্থীরা যেখানে যেখানে আন্দোলন করছে সেখানে গিয়ে তাদের কনভিন্স করা যেতে পারে। আমরা দাঁড়ালে কোনো শক্তিই আর কাজ করবে না, এ বিষয়ে আমরা অনুমতি চাই।”

যেসব শিক্ষার্থী কলেজে অনুপস্থিত থাকছে তাদের অভিভাবকদের ডেকে বিষয়টি জানানোর পরামর্শ রাখেন ঢাকা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান খান। অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটের সময় শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করার দাবিও জানান তিনি। যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের আলাদা করে ডেকে কাউন্সিলিং করার পরামর্শ দেন ঢাকা কমার্স কলেজের শফিকুল ইসলাম। পরিবহন শ্রমিকরা যেন শিক্ষার্থীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করেন সে বিষয়ে তাদের কাউন্সিলিং দেওয়ার পরামর্শ দেন এ কে এম রহমতুল্লাহ কলেজের অধ্যক্ষ।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় নয় দাবি করে ধানমণ্ডির আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন পুলিশকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান। ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি এলাকায় ‘শান্তি শিবিরের’ ব্যবস্থা করার পরামর্শ রাখেন। ইস্পাহানী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কিছু দিন ফেইসবুক বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন। সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফ হোসেন বলেন, সরকারি চাকরি করেও অনেক শিক্ষক ফেইসবুকে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, এদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। বেশিরভাগ অধ্যক্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ফেরাতে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্যদের সভাপতিকে ভূমিকা রাখার পরামর্শ দেন। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের ডেকে কথা বলার পরামর্শ তাদের।

এছাড়া এসএমএসের মাধ্যমে অভিভাবকদের সচেতন করা, শিক্ষার্থীদের বোঝাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর নিয়োগ দেওয়ারও দাবি জানান কোনো কোনো অধ্যক্ষ। সভায় শুরুতে সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, “আমরা আপনাদের কাছ থেকে সমাধান চাই। কারণ নানান রকমের উসকানি, অডিও-ভিডিও বাজারে আসছে, এজন্য উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।

“আমরা চাই শিক্ষার্থীরা যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, মিথ্যা তথ্য প্রচার হচ্ছে সেজন্য আমরা আতঙ্কিত।”

দেড় ঘণ্টা ধরে ৩৯ জন শিক্ষকের বক্তব্য শুনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, “এই পরিস্থিতি আর কোনোভাবেই চলতে দেওয়া যায় না, চলতে দেওয়ার অর্থই হল গুজব রটানো, এটাকে ব্যবহার করে কারো উদ্দেশ্য হাসিল করা।… নানাভাবে নানা উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নানা কথা বলে উসকানি দেওয়া হচ্ছে। “যে উদ্দেশ্যে এই আন্দোলন শিক্ষার্থীরা করেছেন তারা সফল হয়েছেন, এখন এটা বাস্তবায়ানের দিকে আমরা লক্ষ্য রাখব, এখন এটাকে দীর্ঘস্থায়ী করে নিজেদের সাফল্যকে খাটো করার সুযোগ করে দেবেন না।”

তিনি বলেন, “আমরা সকল শিক্ষার্থীদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি- তোমরা ক্লাসে ফিরে যাও, বাড়িতে ফিরে যাও। নিজেদের লেখাপড়া ও দৈনন্দিন কাজের সাথে মিশে যাও। যা করে গেছ সেটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব সরকারের এবং জনগণের, সেই নিশ্চয়তা আমরা পেয়েছি। আশা করি সেটা বাস্তবায়িত হবে, তাহলেই তোমাদের আন্দোলন প্রকৃত অর্থে সফল হবে।”

সুবিধামত সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিভাবকদের নিয়ে সভা আয়োজনে অধ্যক্ষদের নির্দেশনা দেন শিক্ষামন্ত্রী। রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের নিয়েও একই ধরনের সভায় বসেছেন শিক্ষামন্ত্রী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *