পাথেয় রিপোর্ট : ভালোমন্দ যে কোনও পরিস্থিতিই হোক। বাতাসে এর প্রভাব পড়ে,এরদ্বারা বাতাস ভারি হয়ে তা জনমানুষে প্রভাব সৃষ্টি করে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম শায়খুল হাদীস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।
সোমবার ০৮ অক্টোবর ভৈরব উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ , দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে আলেম জনতা ঐক্যের আহবানে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার ঐতিহাসিক পথযাত্রা সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, মানুষ যখন পাপে ডুবে যায়,খারাপ কাজ করে তখন বাতাস দূষিত হয়। এই পাপের বায়ূ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক তেমনি যখন মানুষ আমলে থাকে,আল্লাহর পথে থাকে তখনও বাতাস ভারী হয়। এ আমলের প্রভাব বাতাসে সর্বত্র ছড়িয়ে যায়। তখন শুদ্ধের বাতাস বয়। আর এ বাতাস যদি জাগতিক হয়, তাহলে তার প্রভাব পড়ে মানুষের শরীরে,আর যদি দ্বীনি হয়, আখেরাতের হয় তখন এর প্রভাব পড়ে মানুষের অন্তরে।
বর্তমানে চলমান তাবলীগে সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই যে দু’দলে বিভক্তি এসব আমাদের বদ আমালের কারণে। আমাদের আমলের কমতির কারণেই আজ তাবলীগে বিভেদ তৈরী হয়েছে। বাতাসে এর কুপ্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ পেয়ারে হাবীব সা.আ.একটি উম্মত তৈয়ারে এসেছিলেন। এমন বিভক্তির জন্য আসেন নি। আজ আমাদের প্রিয় নবী আমাদের এমন অবস্থা দেখে রওজা মোবারকে কাতরাইতেছেন।
বিভক্তি নিরসনে সকলকে ঐক্যের ডাক দিয়ে তিনি বলেন, এ অনৈক্য দূর করতে হলে আমাদের পরস্পরের হিংসা দূর করতে হবে। ইসলামের যে মূল আহবান সৌহার্দ্যতা। তার মাধ্যমেই এ বিভক্তি দূর করা সম্ভব বলে উল্লেখ করেন আল্লামা মাসঊদ।
মাদক ও দুর্নীতির ভয়াবহতা সমালোচনা করে তিনি বলেন, আল্লাহর মেহেরবানি আজ সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশ উন্নয়নের দিকে ধাবমান। পৃথিবীর সবাই আমাদের উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবেই দেখছে। আগে যারা আমাদের খালি ঝুপড়ী বলে নিন্দা করতে তারাই এখানে আমাদের উন্নতিকে শ্রদ্ধার চোখে দেখতে বাধ্য। কিন্তু কিছু কুচক্রী মহল আমাদের এই ক্রমাগত ধাবমান এ উন্নতিকে রোধ করতে মাদক দ্বারা আমাদের যুবসম্প্রদায়কে ধ্বংস করতে চাচ্ছে। আজকে আমাদের যুবসম্প্রদায় হতাশাগ্রস্থ। মাদকাসক্তির করাল থাবায় তারা নিমজ্জিত। মাদকাসক্তির কারণে যুব শক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ একটি দেশের গৌরব ও বড় শক্তিই হল সে দেশের যুবশক্তি।
আমাদের যুবসম্প্রদায়ও খুব সমৃদ্ধশালী ও সম্ভাবনাময়। যদি তাদের কাজে লাগাতে পারি তাহলে দেখা যাবে,তারা অনেক বড় বড় কাজ করতে সক্ষম। অথচ মাদক দ্বারা তাদের মেধাকে ধ্বংস করা হচ্ছে। তেমনি সমাজকেও সার্বিকভাবে দূষিত করছে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদ। এসব সমূলে উৎপাটন হলেই বাতাস পরিস্কার হয়ে যাবে। তাই জনমানষে এই সচেতনতা তৈরীর লক্ষেই আমাদের ঐতিহাসিক এ পথযাত্রা। আর সব শক্তির মালিক তো আল্লাহই। আমাদের আমল যদি ভালো হয়,আমাদের নীতি-নৈতিকতা যদি শুদ্ধ ও পবিত্র হয়ে যায়। তবেই আল্লাহর রহমত আসবে। এই অবস্থার পরিবর্তন হয়ে যাবে বলে গারি দীর্ঘ বক্তব্যে আলোচনা করেন।
রোহিঙ্গা সঙ্কটে অসামান্য দৃঢ়তা প্রদর্শন ও বাংলাদেশের বৃহত্তর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কওমী মাদরাসাসমূহকে সম্প্রতি স্বীকৃতি প্রদান করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান আল্লামা মাসঊদ।
এর আগে সমাবেশে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন,বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার অভিভাবক পরিষদের সদস্য ও কুলিয়ারচর মাদরাসার শায়খুল হাদীস মাওলানা আ.কাইয়ূম খাঁন। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন তেজগাঁও মাদরাসা আশরাফুল উলুমের প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম মাওলানা আবু সুফিয়ান যাকী এবং খুলনা মাদানি নগর মাদরাসার শায়খুল হাদীস মাওলানা ইমদাদুল্লাহ কাসেমী, জমিয়তের ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা দেলোয়ার হুসাইন সাইফী।
এসময় সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা হোসাইন আহমদ, মাওলানা আব্দুর রহীম কাসিমী, মাওলানা ইবরাহিম শিলস্তানী, মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাইফী, মাওলানা আবু সুফিয়ান যাকী, মুফতি তাজুল ইসলাম কাসেমী, মাওলানা সদরুদ্দিন মাকনুন, মাওলানা আইয়ুব আনসারী, মাওলানা আব্দুল হালীম ফরীদী, মাওলানা সাঈদ নিজামী, মাওলানা শুয়াইব আহমদ, মাওলানা মাসঊদুল কাদির, মাওলানা মোহাম্মদুল্লাহ, মাওলানা রুহুল আমীন, মাওলানা ইকরামুল হক, মাওলানা শফিকুল ইসলাম, মাওলানা মাহতাব আহমদ, মাওলানা নুরুল ইসলাম, মাওলানা হুমাইন কবির, মাওলানা কুতুব উদ্দীনসহ প্রমুখ উলামায়ে কেরাম।
উল্লেখ্য, পথযাত্রার ৩য় দিনে নরসিংদীর পর ভৈরবের উপজেলা পরিষদে দুপুর ১২টায় বৃহত্তর এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।