আমি মিশরের ইফতারব্যবস্থাপনায় মুগ্ধ : আরীফ উদ্দীন মারুফ

আমি মিশরের ইফতারব্যবস্থাপনায় মুগ্ধ : আরীফ উদ্দীন মারুফ

মাহে রমজানের বিশেষ আয়োজন ‘মুখোমুখি রমজানে’ ঢাকা সার্কিট হাউজ মসজিদের খতীব, জামিআ ইকরা বাংলাদেশের রাইসুল জামিআ মাওলানা আরীফ উদ্দীন মারুফের মুখামুখি হয়েছেন পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমের সহসম্পাদক আদিল মাহমুদ ও কাউসার মাহমুদ। পাঠকের উদ্দেশে সাক্ষাৎকারের চুম্বুকাংশটুকু তুলে দেয়া হলো

পাথেয় : আসসালামু আলাইকুম! কেমন আছেন হযরত?

আল্লামা আরীফ উদ্দীন মারুফ : ওয়ালাইকুম আসসালাম, আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।

পাথেয় : রমজান কেমন কাটছে?

আরীফ উদ্দীন মারুফ : রমজান তো সবেমাত্র শুরু হয়েছে। আর আমি যেহেতু তারাবির নামাজ পড়াই এবং বিভিন্ন ইসলামিক প্রোগ্রাম থাকে সবসময়, সেই হিসাবে ব্যস্থতার মধ্য দিয়ে ভালোই কাটে আলহামদুলিল্লাহ। তাছাড়া আগামীকাল [৪ রমজান] পবিত্র ওমরার উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফের দিকে রওয়ানা করবো, সে জন্যে এই বছর ব্যস্থতা একটু বেশি।

পাথেয় : রমজান মাসে তারাবির নামাজ আদায় করা মুসলমানদের জন্যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ! আর তারাবির নামাজ আদায় না করলে হবে কী?

আরীফ উদ্দীন মারুফ : রামজান মাসে তারাবির নামাজ আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নেয়ামত। ইসলাম ও ফুকাহায়ে কেরামদের দৃষ্টিতে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। সুন্নতে মুয়াক্কাদা মানে হচ্ছে এমন সুন্নত, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত। শরীয়ত সম্মত বিশেষ ওজর ও অসুবিধা ছাড়া তারাবির নামাজ কখনোই পরিত্যাগ করা যাবে না। বিশেষ ওজর যেমন, অসুস্থতা, মুসাফির হলে, ইত্যাদি।

পাথেয় : ইফতারে বিধর্মীদেরকে দাওয়াত দেয়া যাবে কিনা? এটা কী ইসলাম প্রচারের একটি মাধ্যম হতে পারে? এ সম্পর্কে আপনার মতামত কী?

আরীফ উদ্দীন মারুফ : ইফতারে বিধর্মীদেরকে দাওয়াত দেয়া এবং মুসলমানদের সকল আনন্দ উৎসবে বিধর্মীদের শরীক হওয়াতে শরীয়তের কোন অসুবিধা নেই। বরং এটা বিধর্মীদের দাওয়াত দেয়া বড় একটি মাধ্যম হবে। আমি মনে করি এর মাধ্যমে বিধর্মীরা ইসলামের উদারতা ও মানুষ মানুষের মধ্যকার সৌহার্দ্য, ভালোবাসা সম্পর্কে জানতে পারবে।

বিশেষ করে অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে এই কাজটা বেশি বেশি করার প্রয়োজন। কারণ এর মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে তাদের যে ভুল ধারণা সেটা দূর হবে এবং ইসলামের দিকে তারা আকৃষ্ট হবে।

পাথেয় : আমরা দেখি যে, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন ইসলামিক রাষ্ট্রে অনেক বড় বড় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়, আর এতে প্রচুর পরিমাণ খাবার নষ্ট হয়। আপনি এই বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?

আরীফ উদ্দীন মারুফ : ইসলামের দৃষ্টিতে খাবার নষ্ট করার বিষয়টা শুধু রমজান মাসের সঙ্গেই সম্পৃক্ত নয়। বরং ১২ মাসের সঙ্গেই সম্পৃক্ত। হ্যাঁ, আমাদের অনেক বড় একটি উদাসীনতার আছে যে, আমরা যে কোন অনুষ্ঠানে খাবার অপচয় করি। এই অপচয় থেকে বাঁচার জন্যে অনুষ্ঠানের আগেই মানুষের পরিমাণ নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী খাবার প্রস্তুত করা উচিৎ। তারপরেও যদি খাবার অতিরিক্ত হয়ে যায়, তাহলে অতিরিক্ত খাবারটা নষ্ট না করে গরীর, দুঃখী, অসহায় মানুষদের মাঝে বণ্টন করে দেয়া উচিৎ।

পাথেয় : আমরা জানি আপনি ওমরায় যাচ্ছেন, এখন আমরা জানতে চাচ্ছি রমজান মাসে ওমরা করার মধ্যে বিশেষ কোন ফজিলত আছে কিনা?

আরীফ উদ্দীন মারুফ : হ্যাঁ, অব্যশই আছে। তিরমিযী শরীফে আছে, রাসূল সা. বলেছেন, রমজান মাসে ওমরা করা আমার সাথে হজ করার সমতুল্য। আর এই ফজিলত পাওয়ার জন্যেই সারাবিশ্ব থেকে মুসলমানরা রমজান মাসে ওমরা করতে আসেন। বলা হয় যে, হজের সময় থেকেও বেশি মানুষ রমজান মাসে ওমরা করতে আসে।

তা’ছাড়া রমজান মাসে তো আল্লাহ তা’আলা নেক কাজের সওয়াব অনেক গুণ বৃদ্ধি করে দেন, সে হিসাবে রমজান মাসে ওমরা করলে অনেক গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে।


জনসাধারণের জন্যে এ মাসে বিশেষ একটি ইবাদত হচ্ছে তারাবীর নামাজ পড়ার মাধ্যমে কুরআনের খতম করা। যেহেতু অনেকে কুরআন পড়তে পারে না, আর অনেকে পড়তে পারলেও বিভিন্ন ব্যস্থতার কারণে পড়তে পারে না। সে জন্যে তাদের জন্যে এটা একটি সুবর্ণ সুযোগ যে, তারাবীর নামাজে তেলাওয়াত শোনার মাধ্যমে কুরআন শরীফ খতম করার


পাথেয় : রমজান মাসে আমাদের জন্যে এবং জনসাধারণের জন্যে বিশেষ কোন আমল আছে কিনা?

আরীফ উদ্দীন মারুফ : রমজান মাস এমন একটি মাস, যে মাসের বিশেষ আমল আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই বর্ণানা করা আছে। তাই আমি নতুন করে কিছু বলছি না। তবে জনসাধারণের জন্যে এ মাসে বিশেষ একটি ইবাদত হচ্ছে তারাবীর নামাজ পড়ার মাধ্যমে কুরআনের খতম করা। যেহেতু অনেকে কুরআন পড়তে পারে না, আর অনেকে পড়তে পারলেও বিভিন্ন ব্যস্থতার কারণে পড়তে পারে না। সে জন্যে তাদের জন্যে এটা একটি সুবর্ণ সুযোগ যে, তারাবীর নামাজে তেলাওয়াত শোনার মাধ্যমে কুরআন শরীফ খতম করার।

পাথেয় : আপনি তো রমজান মাসে অনেক দেশেই সফর করেছেন, ওইসব দেশে কীভাবে রমজান মাস পালন করা হয় এবং ওসব দেশের সঙ্গে আমাদের দেশের কোন মিল আছে কিনা?

আরীফ উদ্দীন মারুফ : আমি দু’টি রমজান দেশের বাইরে অতিবাহিত করেছি। একটা ইংল্যান্ডে অন্যটা মিশরে।

আমাদের দেশে ইফতারের সময় যে উৎসবমুখর আয়োজন এইটা আমি ইংল্যান্ডেও দেখেছি। তাদের বেশির ভাগ মানুষ মসজিদে ইফতার করে, মসজিদে ইফতারে ব্যবস্থা থাকে। একটা অমুসলিম রাষ্ট্রে সবাই এক সাথে ইফতার করার দৃশ্যটা আমার অনেক ভালো লেগেছে। আর প্রত্যেকটা মসজিদে তারাবীর নামাজের যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে আদায় করা হয়। আর যারা রেস্টুরেন্টে কাজ করে, কর্মের ব্যস্থতার কারণে তারা তারাবির নামাজে শরীক হতে পারে না, কিন্তু তাদের আগ্রহের কথা আমি বলছি – আমি যে মসজিদে ছিলাম, ওই মসজিদে দেখেছি তারা রেস্টুরেন্টের কাজ শেষ করে তাহাজ্জুদের নামাযে শরীক হত।

মসজিদে তারাবীর নামাজের যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে আদায় করা হয়। আর যারা রেস্টুরেন্টে কাজ করে, কর্মের ব্যস্থতার কারণে তারা তারাবির নামাজে শরীক হতে পারে না, কিন্তু তাদের আগ্রহের কথা আমি বলছি – আমি যে মসজিদে ছিলাম, ওই মসজিদে দেখেছি তারা রেস্টুরেন্টের কাজ শেষ করে তাহাজ্জুদের নামাযে শরীক হত

মিশর তো মুসলিম রাষ্ট্র, তাই ওইখানে পরিবেশটা ইসলাম ও মুসলমানদের অনুকূলে আছে। তবে মিশরে একটি বিষয় আমার হৃদয়ে খুব দাগ কেটেছে। সেটা হচ্ছে, একদিন রমজানের দিনে গাড়ি দিয়ে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ দূরে একটা ব্যানারে আমার চোখ পড়লো, দেখলাম, ওই ব্যানারে লেখা আছে, ‘মা ইদাতুর রহমান’ অর্থ হচ্ছে ‘আল্লাহর দস্তরখানা’। আমি তখন বিষয়টা বুঝতে পারিনি। আল্লাহর দস্তরখানা মানে কী? আমার সাথে আল আজহারে অধ্যায়ন রত একজন বাংলাদেশি ছাত্র ছিল। তাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, মা ইদাতুর রহমানের মানে হচ্ছে, ফ্রি ইফতারের ব্যবস্থা। ওইটাকে মিশরে বলা হয় ‘মা ইদাতুর রহমান’। এই যে ফ্রি ইফতারের ব্যবস্থা ওই জিনিসটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।

পাথেয় : এখন বিদায় নিচ্ছি। শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি আপনার। পাথেয় টোয়েন্টিফোরকে সময় দেয়ার জন্যে।

আরীফ উদ্দীন মারুফ : আপনাদেরও শুকরিয়া। ধন্যবাদ।

————————————–\

সম্পাদনা : মাসউদুল কাদির

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *