পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাচীন জনপদ আলীকদম। এর সবুজ অরণ্যের অজানা কোণে লুকিয়ে আছে অসংখ্য ঝিরি, ঝরনা আর জলপ্রপাত। এর মধ্যে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের মুকুটে বিশেষ রত্ন হিসেবে উঠে এসেছে দামতুয়া ঝরনা এবং ব্যাঙ ঝিরি। বাংলার বর্ষা ঋতু, বিশেষত আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা বর্ষায়, এ ঝরনার যৌবনের উচ্ছ্বাস যেন তার প্রকৃত সৌন্দর্যের প্রকৃত রূপ উন্মোচন করে।
নামের পেছনের গল্প
মুরুং ভাষায় দামতুয়া ঝরনার পূর্ণ নাম তুক-অ-দামতুয়া। এখানে “তুক” মানে ব্যাঙ, “অ” অর্থ ঝিরি, “দাম” মানে মাছ আর “তুয়া” বোঝায় খাড়া দেয়াল। এককালে এই ঝিরিতে প্রচুর ব্যাঙ পাওয়া যেত বলে এটি “তুক-অ” বা ব্যাঙ ঝিরি নামে পরিচিত। ঝরনার পানি খাড়া দেয়াল বেয়ে নিচে নামার কারণে মাছও ওপরে উঠতে পারে না। এই বৈশিষ্ট্য থেকেই এর নাম রাখা হয়েছে দামতুয়া।
অবস্থান এবং যাত্রাপথ
দামতুয়া ঝরনা অবস্থিত বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের গভীর অরণ্যে। আলীকদম-থানচি সড়কের ১৭ কিলোমিটার পয়েন্টে অবস্থিত আদু মুরুং পাড়া থেকে প্রায় ছয়-সাত কিলোমিটার হাঁটলেই পৌঁছানো যায় এই অনন্য ঝরনায়। তবে পৌঁছাতে খানিকটা পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে হবে। রাস্তায় মুগ্ধ করবে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য।
প্রকৃতির বিস্ময়
দামতুয়া ঝরনার গঠনশৈলী এককথায় অভূতপূর্ব। বর্ষায় এর স্রোতের তীব্রতা এবং কলকল শব্দে পাহাড়ের নিস্তব্ধতাও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। উঁচু থেকে গড়িয়ে পড়া ঝরনার পানির সঙ্গে বাতাসে মিশে যায় জলীয় বাষ্প, যা ঝরনার চারপাশে তৈরি করে এক মোহনীয় ধোঁয়াশা। মনে হয় যেন পাহাড়ের গভীরে মেঘেরা নেমে এসেছে।
বিশেষ আকর্ষণ
দামতুয়া ঝরনার ওপরে রয়েছে ব্যাঙ ঝিরি জলপ্রপাত, যা দেখতে মনে হয় সুদক্ষ কারিগরের হাতে গড়া কোনো প্রাকৃতিক শিল্পকর্ম। এখানকার পাথুরে মাটির স্তরগুলো একে দিয়েছে অপূর্ব স্থাপত্যশৈলীর বৈশিষ্ট্য। এর পাশেই আছে আরেকটি আকর্ষণীয় জলপ্রপাত ওয়াংপা ঝরনা। ওয়াংপায় পৌঁছানোর জন্য খাড়া পাহাড় বেয়ে নামতে হয়। তবে এর স্রোতধারার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে।
রাতের সৌন্দর্য
যদিও রাতের বেলা এখানে থাকা নিরাপদ নয়, তবে পূর্ণিমার রাতে তাবু খাটিয়ে যদি ঝরনার পাশে অবস্থান করা যায়, তাহলে চাঁদের আলোয় ঝরনার সৌন্দর্য যেন অন্য এক মাত্রায় পৌঁছায়।
যেভাবে পৌঁছাবেন
ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি বাসে আলীকদম পৌঁছানো যায়। সেখান থেকে আলীকদম-থানচি সড়কের ১৭ কিলোমিটারের পয়েন্টে আদু মুরুং পাড়া পর্যন্ত গাড়িতে এবং এরপর দুই থেকে তিন ঘণ্টার ট্রেকিং করে দামতুয়ায় পৌঁছানো যায়।
থাকার ব্যবস্থা
ভ্রমণের জন্য আলীকদমে বিভিন্ন রিসোর্ট ও সরকারি রেস্ট হাউজ রয়েছে। এর মধ্যে দামতুয়া রিসোর্ট, অর্কিড রিসোর্ট, মারাইংতং রিসোর্ট ও রূপমুহুরী রিসোর্ট উল্লেখযোগ্য।
সমাপ্তি
দামতুয়া ঝরনা শুধু একটি পর্যটন স্পট নয়, এটি প্রকৃতির এক জীবন্ত কবিতা। এর নৈসর্গিক সৌন্দর্য এবং পরিবেশের গভীর শান্তি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা। চলুন, আলীকদমের সবুজ অরণ্যের এই বিস্ময়কর সৌন্দর্য নিজ চোখে দেখে আসি!