তরুণ তুর্কী দায়িত্বশীল আলেমের নাম মাওলানা শামসুদ্দীন ত্বহা। দক্ষিণাঞ্চল বাগেরহাটের জামিআ আরাবিয়া সিদ্দীকিয়া সরুই- এর ভাইস প্রিন্সিপাল তিনি। দ্বীনী দাওয়াতি কাজকে নিজের মিশন বানিয়ে ভ্রমণ করেছেন পৃথিবীর অনেক দেশ। প্রতিশ্রুতি ও প্রতিনিধিত্বশীল তরুণ হিসেবে তিনি নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। মানুষ গড়ার পেছনে উদারভাবে নিয়োজিত রেখেছেন নিজেকে। সর্বশেষ আলেম-জনতা ঐক্য গঠনের দাবিতে মাদক, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শাইখুল হাদিস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দা.বা-এর নেতৃত্বে ঐতিহাসিক পথযাত্রায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সঙ্গ দিয়েছেন। দেখেছেন দীনদরদি মানুষের উচ্ছ্বাস। এ নিয়েই তার মুখোমুখি হয়েছেন পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমের সহসম্পাদক কাউসার মাহমুদ। নিচে সাক্ষাৎকারের চুম্বুকাংশ পাঠকের জন্য উপস্থাপন করা হলো।- সহযোগী সম্পাদক
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আসসালামু আলাইকুম
মাওলানা শামসুদ্দীন ত্বহা : ওয়ালাইকুম আসসালাম
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের ঐতিহাসিক পথযাত্রা তো শেষ হল। সেই যশোর চাঁচড়ার মোড় থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত ছিল ঐতিহাসিক এ পথযাত্রা। আপনি তো পুরোটা সময়ই ছিলেন পথযাত্রায়। সবকিছু মিলিয়ে কেমন দেখলেন, আপনার অনুভূতি কী?
মাওলানা শামসুদ্দীন ত্বহা : আলহামদুলিল্লাহ! প্রথমেই বলব সবকিছু মিলিয়ে এটি একটি ঐতিহাসিক পথযাত্রা ছিল। এর আগে ঐক্যের এমন কোনও আহ্বানে সারা বাংলাদেশে কোনও আলেমের সফর হয়েছিল কিনা আমার জানা নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমি বলব এর প্রভাব ছিল অপরিসীম এবং এখানে অংশগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি নিজেও ইতিহাসের একটি অংশ হয়ে গেছি। আমি বলবো, আলেমজনতার ঐক্য গঠনে ঐতিহাসিক পথযাত্রা মাইলফলক।
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আলেম জনতা ঐক্যের যে আহ্বান নিয়ে এ পথযাত্রা হয়ে গেল। ঐক্যের যে ডাক দিলেন আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। আপনি কি মনে করেন, তার আহ্বান জনমনে প্রভাব সৃষ্টি করতে পেরেছে বা পারবে?
মাওলানা শামসুদ্দীন ত্বহা : অবশ্যই হবে। দ্বীন-ধর্ম, সমাজ ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রত্যকটা মানুষের দাবিই হল আলেম জনতা ঐক্য হয়ে যাক। সাধারণেরা তো আলেমদের থেকেই শিখবে। তেমনি এই পথযাত্রা বিস্তর প্রভাব এভাবে রেখেছে যে, এই ঐক্যতে যেসব জিনিস প্রতিবন্ধকতা ছিল তা এখন স্পষ্ট। সুতরাং আমি মনে করি আল্লাহ চাইলে ঐক্যের পথে এখন আর কোনও প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : কী কী কারণে এ পথযাত্রা প্রভাব রাখতে পারে?
মাওলানা শামসুদ্দীন ত্বহা : কারণগুলো ওভাবে কখনো চিন্তা করিনি। কারণ, এমন কাজ তো আগে কেউ করেনি। মানুষের কাছে কাছে গিয়ে এমনভাবে তো আর কেউ বলেনি। তাই ব্যতিক্রম বলেই এটি মানুষের কাছে স্বাভাবিকভাবে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি।
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি এবং শুনেছি যে, পথযাত্রার প্রত্যেকটা সমাবেশেই আল্লামা মাসঊদ সাহেব একটি কথা বলেছেন যে ‘আমাদের কথাগুলো বাতাসে ছড়িয়ে যাক, আমরা বাতাসে কথাচালু করে দিতে চাই’ আপনার কী মনে হয় এখানে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকেই কী তার চারপাশে এ কথা ছড়াবেন! এই ভালোর দিকে আহ্বান করবেন?
মাওলানা শামসুদ্দীন ত্বহা : আমার কাছে মনে হয় আল্লাহর অশেষ রহমতে অবশ্যই বাতাসে ছড়িয়ে যাবে। আমরা যেহেতু দ্বীন ও দেশের জন্য আল্লাহর ওয়াস্তেই এ ঐতিহাসিক পথযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছি। প্রায় ১ হাজার অালেম একসাথে ছিল এ পথযাত্রায়। আল্লাহ তাদের এ মেহনত অবশ্যই কবুল করবেন। আর আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ নিজেও একজন বুযুর্গ মানুষ। আল্লাহর ওলী তিনি। আল্লাহ অবশ্যই তার এ মেহনতকে কবুল করবেন। তার ব্যতিক্রমধর্মী এ পথযাত্রাকে কবুল করবেন। ইনশাআল্লাহ।
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের প্রত্যেকটা কাজই তো এমন ইউনিক হয়। প্রতিটা কাজই জাতী ও ধর্মের জন্য কল্যাণকর হয় বলেই আমরা দেখেছি। কিন্তু কেমন যেন প্রতিটা কাজেই একদল লোক তার সমালোচনায় নেমে যান। তারা জলঘোলা করতে বেশ পটু। তেমনি ঐতিহাসিক এ পথযাত্রা নিয়েও সমালোচনা হয়নি এমন না। এইসব লোকদের ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?
মাওলানা শামসুদ্দীন ত্বহা : এটা আসলে নতুন কিছু নয়। আমরা আমাদের আকাবীরদের জীবনী পড়লে এমনই দেখতে পাই। তারা প্রত্যেকেই তাদের কাজের জন্য সমালোচিত হয়েছেন। অথচ, তাদের কোনও কাজই নিজেদের জন্য ছিলোনা। দেশ, জাতী ও ইসলামের জন্যই তারা সবসময় কাজ করে গেছেন। আসলে,মূলকথা হল তাদের চিন্তার পরিধি ব্যাপক ও অতলস্পর্শী। সাধারণেরা তো এ বিষয়টা তেমন অনুভবই করতে পারে না কখনো। আবার যারা ভালো বোঝেন কিন্তু সমালোচনা করছেন তাদের বিষয়টি হল তারা হুজুরকে প্রতিটা কাজেই দূর থেকে বিশ্লেষণ করছে। আমি মনে করি যদি তারা কাছে আসে, তার সঙ্গে কথা বলে,তার ভাবনা সম্পর্কে কিছুটাও ধারণা নিতে পারে তাহলে এমন সমালোচনা তারা করতে পারবে না। আর সামগ্রিকভাবে সবকিছুতেই যারা সমালোচনা করে তারা তাদের জ্ঞানের দৈন অবস্থার কারণেই এমন করে বলে বলব। সুতরাং যার যখন বুঝে আসবে, সে তখন মূল্যায়ন করবেই। মানুষ দুই কারণেই সমালোচনা করে। এক. না বুঝে সমালোচনা করে, দুই. বুঝে সমালোচনা করে। আমার মনে হয় অধিকাংশই হযরতের কাজ না বুঝে সমালোচনা করে।
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : এই পথযাত্রার আগেই আগেই কওমী সনদের স্বীকৃতি হল। এরপরেই ঐতিহাসিক এ পথযাত্রা। আল্লামা মাসঊদ দা.বা. তো এই স্বীকৃতির রূপকার। কথা হচ্ছে, এ পথযাত্রাটি ছিল ‘আলেম জনতার ঐক্যের’। কিন্তু দেখা গেছে হুজুর প্রায় সব জায়গাতেই সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন স্বীকৃতিতে তার অসামান্য অবদানের জন্য। এই বিষয়টি নিয়ে অনেকে বলছে নির্বাচনের আগে এটি একটি সরকারি পদক্ষেপ। এই বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
মাওলানা শামসুদ্দীন ত্বহা : আমি বলবো এটি একটি অমূলক কথা। প্রথম কথা হল স্বীকৃতির সঙ্গে এ পথযাত্রার ওইভাবে কোনও সমস্যা নেই। তবে হ্যাঁ! হুজুর প্রসঙ্গক্রমে স্বীকৃতির কথা এলে প্রধানমন্ত্রীর শুকরিয়া জ্ঞাপন করেছেন। আরে এটা নিয়ে কথার কী আছে! অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শুকরিয়া পাবার যোগ্য। যারা এ বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করছে, নির্বাচনের আগে সরকারের পক্ষের কথা বলে প্রচার করছে। তাদের ব্যাপারে বলব, তারা হুজুরের প্রতি বিদ্বেষবশতই এমনটা করছে। হুজুরকে ছোট করার জন্যই কেউ বুঝে আবার কেউ না বুঝে এমনটা করছে।
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : পথযাত্রার এ পর্ব তো হলো। দ্বিতীয় পর্ব হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে, কিন্তু এ নিয়ে তেমন কিছু জানা যায়নি এখনো। আপনি কী মনে করেন, দ্বিতীয় পর্ব হোক। মানুষের আগ্রহ কেমন দেখলেন এ নিয়ে?
মাওলানা শামসুদ্দীন ত্বহা : অবশ্যই আমি নিজে অনেক আগ্রহী। ইনশাআল্লাহ এ পর্বেও আমি অংশগ্রহণ করব। অন্যদেরকেও এখানে অংশগ্রহণ করতে সচেষ্ট হব। ইতোমধ্যে পথযাত্রায় অংশগ্রহণকারী কিছু লোকের সঙ্গে আমি কথাবার্তা বলে দেখেছি তারা দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে বেশ আগ্রহী এবং সেখানে অংশগ্রহণে উৎসুক হয়ে আছে।
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আপনাকে ধন্যবাদ
মাওলানা শামসুদ্দীন ত্বহা : আপনাকেও ধন্যবাদ