আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদকে আল্লাহ অঞ্জলি ভরে দান করেছেন: মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন

আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদকে আল্লাহ অঞ্জলি ভরে দান করেছেন: মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন

আজ রবিবার ( ২২ অক্টোবর ) ‘ইকরা বাংলাদেশ স্কুল’ গোপালগঞ্জ শাখার বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের মধ্যমনি হিসেবে যোগদান করেন ‘ইকরা বাংলাদেশ স্কুল’ কেন্দ্রীয় শাখার প্রিন্সিপাল, জানেশীনে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, হযরত মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন। অনুষ্ঠানে তিনি সংক্ষিপ্ত সময়ে সারগর্ভ বক্তব্য রাখেন। তাঁর বক্তব্যটির চুম্বকাংশ পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম–এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—

বান্দা হিসেবে আল্লাহ তাআলা আমাদের থেকে চান যে, আমরা সবসময় আল্লাহর যিকিরে-ফিকিরে থাকি, আমাদের সকল দুঃখ-কষ্ট, অস্থিরতা ও পেরেশানির কথা যেনো একমাত্র আল্লাহর কাছেই আমরা ব্যক্ত করি। মোটকথা, আমাদের ‘দিলের সাথী’ আমরা যেনো একমাত্র আল্লাহকেই বানাই।

সেই সাথে, আমাদের ‘আমলের সাথী’ যেনো বানাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে৷ আমাদের চলা-ফেরা, উঠা-বসা, বিবাহ-শাদি, সন্তান লালনপালন, সমাজে চলাফেরা, ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, এ সবকিছু আমি করবো হুজুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ‘সুন্নত’ অনুযায়ী।

হযরত ফিদায়ে মিল্লাত সায়্যিদ আসআদ মাদানী (রহ.) বলতেন, “সওচ আওর ইকদাম কারতে ওয়াকত উসওয়ায়ে হাসানাহ কো সামনে রাখনা জরুরী হ্যাঁয়।” অর্থাৎ, সমস্ত চিন্তাভাবনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সীরাতকে যেন সামনে রাখি ।

 “সওচ আওর ইকদাম কারতে ওয়াকত উসওয়ায়ে হাসানাহ কো সামনে রাখনা জরুরী হ্যাঁয়।” – সমস্ত চিন্তাভাবনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সীরাতকে যেন সামনে রাখি

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের সাথে যেমন আচরণ করেছেন, শিশুদের সাথে যেমন আচরণ করেছেন, ঘরের অভ্যন্তরে তাঁর আচরণ যেমন ছিলো, এ সবকিছু আমরা আমাদের আমাদের জীবনে অনুসরণ করে চলবো।

হুজুরে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটা কথা বলতেন, “তোমাদের মধ্যে সবচে’ উত্তম সে ব্যক্তি, পরিবারের কাছে সবচেয়ে যে উত্তম।” বিবি-বাচ্চা, বাবা-মা সবার সাথে যে যত ভালো আচরণ করবে, সে হলো ততো ভালো। আমাদের অনেকের আচরণ সমাজে-বাইরের লোকদের সাথে অনেক ভালো, কিন্তু ঘরে গিয়ে বিবির সাথে আচরণ ঠিক থাকে না। এটা কিন্তু ভালো মানুষের পরিচয় হলো না।

তৃতীয় যে কাজটি আমাদের করতে হবে, আমাদের ‘চলার সাথী’ বানাতে হবে সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-কে। তাঁরা যেভাবে চলেছেন, যেভাবে শরীয়তের পাবন্দি করেছেন, যেভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করেছেন; মোটকথা, “মা আনা আলাইহি ওয়া আসহাবিহী”–এর উপর আমাদেরকে চলতে হবে। তাহলে আমরা বাতিল শক্তির ক্ষতি থেকে, ফিতনা-ফাসাদ থেকে, শিরক-বিদ’আত থেকে বেঁচে থাকতে পারবো৷

আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ (দা.বা.)-কে তাঁর জিন্দেগীতে আল্লাহ তাআলা অঞ্জলী ভরে দান করেছেন। এমন কোনো বিষয় নেই যেখানে আল্লাহ তাআলা তাঁকে সফলতা দান করেননি

আজ আমরা এখানে যে প্রতিষ্ঠানের সভায় সমবেত হয়েছি, এই ‘ইকরা বাংলাদেশ স্কুল’–এর প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ (দা.বা.)-কে তাঁর জিন্দেগীতে আল্লাহ তাআলা অঞ্জলী ভরে দান করেছেন। এমন কোনো বিষয় নেই যেখানে আল্লাহ তাআলা তাঁকে সফলতা দান করেননি। তিনি যখন ছাত্র ছিলেন তখন সবচে’ ভালো ছাত্র ছিলেন, যখন পড়িয়েছেন তখন সবচে’ ভালো পড়িয়েছেন, যখন পীর ও মুর্শিদের কাছে বায়আত হলেন, তখন তিনি সবচেয়ে উত্তম মুরীদ ছিলেন। খুব অল্প সময়েই তিনি ফিদায়ে মিল্লাত (রহ.)-এর নিকট হতে ইযাজত ও খেলাফত লাভ করেছেন। মোটকথা, তিনি যেদিকেই গিয়েছেন আল্লাহ তাআলা তাঁকে সাফল্য দান করেছেন।

কিন্তু এই সফলতা অর্জন করতে গিয়ে নিশ্চয় তাঁর এমন কিছু গুণ হাসিল করতে হয়েছে, যার দরুণ আল্লাহ তাআলা তাঁকে এসব দান করেছেন। সেই গুণগুলো কী?

প্রথমত হচ্ছে, তাকওয়া ও পরহেযগারী। তাঁর উস্তাদ ও যারা তাঁকে ছোটবেলা থেকে দেখেছেন, তাঁরা বলেছেন, তাকওয়া ও পরেহযগারীর ক্ষেত্রে তাঁর কোনো তুলনা নেই। রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী চলতে তিনি জীবনভর আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন, এখনো করে যাচ্ছেন।

দ্বিতীয়ত হলো, তাঁর তাওয়াযু ও বিনয়। তাঁর মতো বিনয়ী, উত্তম আখলাকের অধিকারী, তরবিয়তওয়ালা আলেম আমরা তো দেখিই নাই, মুরব্বিরা বলেছেন, তাঁরাও দেখেন নাই।

তৃতীয় বিষয় হলো, তাঁর ধৈর্য্য ও সহনশীলতা। তাঁর মতো ধৈর্য্য ও সহনশীলতার পরিচয় অন্য কেউ দিতে পেরেছেন কিনা তা আমার জানা নেই। সমস্ত বিপদ-আপদের সময়, পেরেশানির সময় তিনি আল্লাহ তাআলার উপর তাওয়াক্কুল করেছেন এবং ‘সবর ও তাহাম্মুল’ (ধৈর্য্য ও সহনশীলতা)-র সাথে থেকেছেন।

চতুর্থ বিষয় হলো, তাঁর ইখলাছ। তিনি এপর্যন্ত যত কাজ করেছেন সবকিছু আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলকে সামনে রেখেই করেছেন। ইখলাছ থেকে বিন্দুমাত্র তিনি সরেননি।

যেহেতু এই প্রতিষ্ঠান আপনারা তাঁর নামে করেছেন, তাঁর এসমস্ত গুণাবলী আপনাদেরকেও ধারণ করতে হবে। বিভিন্ন সমস্যা ও বিপদ-আপদ আসতে পারে, সেগুলোকে ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করতে হবে। কোনো সময়ই ধৈর্য্যহারা হওয়া যাবে না। এমনও হতে পারে, আপনি একটা বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন কিন্তু এক সপ্তাহ পরেই আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নুসরাত ও সাহায্য আসার ফয়সালা হয়েছে, অথচ আপনি শুরুতেই ধৈর্য্যহারা হয়ে গেলেন। তাহলে আল্লাহ তালার নুসরত থেকে আপনি বঞ্চিত হলেন।

সুতরাং সব সময় আল্লাহ তাআলার ফযল ও করমের অপেক্ষায় থাকতে হবে, ধৈর্য্য ও সবরের সাথে থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই গুণগুলি অর্জন করার তৌফিক দান করুন।

আল্লাহ তাআলা এই প্রতিষ্ঠানকে কবুল করুন। এর উত্তরোত্তর সাফল্য দান করুন। এবং এর দায়িত্বশীলদের মাঝে মুহাব্বাত বৃদ্ধি করুন। আমীন।

 

আরো পড়ুনঃ ইসরায়েল যা করছে নিঃসন্দেহে তা শতাব্দীর জঘন্যতম জেনোসাইড: বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *