মাসউদুল কাদির : আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচন শুরু হবে এবছরের ২৩ ডিসেম্বর। নির্বাচন কমিশন এ ঘোষণাটাই দিয়েছেন। কীভাবে ভাবছেন তরুণ রাজনীতিক লেখক ও সমাজবিশ্লেষকগণ। এ নিয়েই আজকের প্রতিবেদন। পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন তরুণদের অনেকে। নিচে পাঠকদের উদ্দেশ উপস্থাপন করা হলো।
চরমোনাই পীর সাহেব তো এই তফসিল ঘোষণাকে দুর্ভাগ্যজনক বলেছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কী বর্তমান তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচনে যাবে বলে মনে করেন? এমন প্রশ্ন করা হলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য ও মাসিক আল কারীমের সম্পাদক মুফতী দেলাওয়ার হোসাইন সাকী পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমরা তফসিল ঘোষণাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি! নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবনাগুলো কে উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশন তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে আমরা চক্রান্তের আবাস পাচ্ছি! নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দেয়ার সময় এখনো আসেনি, আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। নিবাচন কমিশন এবং সরকারের আচরণের উপর ডিপেন্ড করবে নির্বাচনে অংশ নেব কিনা। ৩০০ আসনে ইসলামী আন্দোলনের নির্বাচন পরিকল্পনা মাফিক কার্যক্রম চলমান থাকবে। আমরা প্রস্তুতিতে কোন প্রকার ঘাটতি রাখবো না ইনশাল্লাহ।
আপনাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বার বার তিনশো আসনে প্রার্থী দেয়ার কথা বলে থাকেন। যেখানে অন্য ইসলামী দলগুলোর প্রার্থী থাকবে সেখানেও আপনারা প্রার্থী দেবেন কেন? জানতে চাওয়া হলে মুফতী দেলাওয়ার হোসাইন সাকী পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আজ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ছাড়া অন্যান্য ইসলামী দলগুলো হয়তো ২০ দল, নয়তো আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। দুয়েকটি জোটের বাইরে থাকলেও গণবিচ্ছিন্ন ব্যানার সর্বস্ব। তাই ৩০০ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ইনশাল্লাহ। এখানে আদর্শ ও নীতি মুখ্য। তাই নো আওয়ামীলীগ নো বিএনপি ইসলাম ইজ দ্যা বেস্ট-এর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। যেহেতু চোখের বাইরে শক্তি ও কোন ব্যানার নাই, সেহেতু অন্য ইসলামী সংগঠন আমাদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারবে না।
বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরামের সভাপতি ও আলেম সাংবাদিক ও সমাজ বিশ্লেষক জহির উদ্দিন বাবরকে ’আপনি কী মনে করেন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে?’ এমন প্রশ্ন করা হলে পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না সেটা সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু হবে। অতীতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই আমরা কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ ও রংপুর সিটি নির্বাচনে সেটা দেখেছি। এই তিন সিটির নির্বাচন নিয়ে কেউ বড় কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি। বিরোধীদলগুলোর সঙ্গে সংলাপে প্রধানমন্ত্রী সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন। আমার বিশ্বাস, শেখ হাসিনা চাইলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তবে নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। সংবিধান তাদের যে ক্ষমতা দিয়েছে তা প্রয়োগ করতে হবে। জাতি উৎসবমুখর একটি ভোটের আশায় মুখিয়ে আছে। আশা করি সরকার ও নির্বাচন কমিশন জাতিকে আশাহত করবে না।
অনেকেই বলছেন, যেকোনো অবস্থায় বিএনপি নির্বাচনে আসবে। নির্বাচনে এলে বিএনপির অগ্রগতি ও সাফল্যকে কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জহির উদ্দিন বাবর পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। দলটির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠক করে নির্বাচনে আসার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি মনে করি, এটা তাদের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করে দলটি যে ভুল করেছে তার পুনরাবৃত্তি আর করবে না। রাজপথের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল বিএনপি সেটা আওয়ামী লীগও স্বীকার করে। বিএনপি নির্বাচনে এলে সারাদেশে ভোট জমে উঠবে সেটা বলা যায় নিশ্চিতভাবে। ভোট না করে আন্দোলনের পথে হেঁটে বিএনপি খুব একটা সুবিধা করতে পারবে বলে মনে হয় না। কারণ প্রায় ১২ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি এখন অনেকটা বিপর্যস্ত। নির্বাচনে এলে বিএনপি সরকার গঠন করুক আর বিরোধী দলেই থাকুক ফিরে দাঁড়াতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলাম সাহিত্য ও গবেষণা সম্পাদক, রাজধানী বাড্ডার মসজিদে মদীনার খতীব মুফতি ফয়জুল্লাহ আমানকে আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতিহাসের এক যুগ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেছে। সার্বিক বিচারে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রগতি ধরে রাখতে হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই। আমি মনে করি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক গ্রহণযোগ্য ও সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এই তফসিলের ভিত্তিতে অসম্ভব নয়। তবে সবাইকে সহযোগিতার মানসিকতা রাখতে হবে।
সংবিধান অনুযায়ী যদি যথাসময়ে নির্বাচন হয় আর নির্বাচনে অনেকে যদি না-ও আসে, তাহলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র প্রদান হবে, তাঁর রাষ্ট্র পরিচালনা করার ক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশনা জানতে চাওয়া হলে মুফতি ফয়জুল্লাহ আমান পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শরীয়তের ফায়সালা এই ক্ষেত্রে খুবই স্পষ্ট। দেশের সংবিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালনার জন্যে শরিয়তের বিধান অনুসারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়বদ্ধ। যতদিন সংবিধান বদলানো না হয় ততদিন এটা সবার জন্যে মান্য করা একান্ত আবশ্যক। কাজেই শরিয়তের দৃষ্টিতে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন যথাসময়ে নির্বাচন পরিচালনা করতে বাধ্য।
মাসিক কাবার পথের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক, লেখক ও সমাজবিশ্লেষক মাওলানা রায়হান মুহাম্মাদ ইবরাহীমকে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উৎসবের নির্বাচন এখন উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকল বিরোধীমতকে উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণা সে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আপনি একজন লেখক ও সমাজ বিশ্লেষক হিসেবে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো আলামত দেখছেন? এ পরামর্শ কী জানতে চাইলে মাওলানা রায়হান মুহাম্মাদ ইবরাহীম পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশের জনগণ বস্তুবাদী রাজনীতিকদের এখন আর বিশ্বাস করে না। এই অবিশ্বাস থেকেই তারা একসময় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করেছিল। আর দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, তার প্রমাণ তো এ সরকারের অধীনে হওয়া প্রায় সবকটি নির্বাচনই। কাজেই সরকারবিরোধী কোনো পক্ষেরই যে নির্বাচনে আস্থা নেই, সে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো আলামত আমি দেখতে পাচ্ছি না।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অংশগ্রহণেচ্ছু বিরোধী দলগুলোর দাবি-দাওয়া কিছুটা হলেও আমলে নিতে হবে। একটা আশাব্যঞ্জক সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।
গ্রন্থনা সহযোগিতা : আদিল মাহমুদ