ইমামদের প্রশিক্ষণ শেষে সনদ বিতরণ করলেন সাবেক জার্মান প্রেসিডেন্ট

ইমামদের প্রশিক্ষণ শেষে সনদ বিতরণ করলেন সাবেক জার্মান প্রেসিডেন্ট

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: জার্মান সরকারের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো দেশটির ইমামদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্পন্ন হয়েছে। গত শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ওসনাব্রুক সিটির ডয়েচল্যান্ডের ইসলামিক কলেজে দুই বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ শেষে ২৪ জন ইমামকে আনুষ্ঠানিকভাবে সনদ দেওয়া হয়। এ সময় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করেন জার্মানির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ইসলামিক কলেজের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ক্রিশ্চিয়ান উলফ।

জার্মানভিত্তিক মুসলিম সংগঠন দ্য সেন্ট্রাল কাউন্সিল অব মুসলিমের চেয়ারম্যান আয়মান মাজিক বলেন, ‘ইমাম প্রশিক্ষণ কর্মসূচি জার্মানির মুসলিমদের জন্য একটি স্মরণীয় ঘটনা।

উন্নয়নমূলক এই কর্মসূচি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এবারই প্রথম ইমামদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পুরোপুরি জার্মান ভাষায় পরিচালিত হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে কলেজ থেকে তাঁদের ইমাম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবেও কাজ করতে পারেন।

সাবেক জার্মান প্রেসিডেন্ট ও ইসলামিক কলেজের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ক্রিশ্চিয়ান উলফ বলেন, ‘প্রথমবারের মতো জার্মানির ইমাম প্রার্থীরা জার্মান ভাষায় তাঁদের ব্যাবহারিক প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন। এটি জার্মান মুসলিমদের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। এ ধরনের প্রশিক্ষণ আগে কখনো হয়নি; অথচ দেশের লাখ লাখ মুসলিমের বিবেচনায় তা আরো আগে হওয়া উচিত ছিল।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর মাধ্যমে ইসলামিক কলেজ শান্তি বিনির্মাণ ও একত্রীকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

কলেজটি একটি স্বীকৃত প্রশিক্ষণকেন্দ্র এবং বিভিন্ন দেশের দিকনির্দেশনায় এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা প্রথম দিকে কর্মসংস্থান খুঁজে পেতে কিছুটা সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। তবে সরকার তাঁদের জন্য ধর্ম প্রচারক এবং ইসলামী কল্যাণমূলক ক্ষেত্র তৈরির মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে।’
ইসলামিক কলেজের পরিচালক বুলেন্ট উকার বলেন, ‘এটি জার্মানির একমাত্র বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান যেখানে স্বতন্ত্রভাবে ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। শিগগিরই ইমাম প্রশিক্ষণ কর্মসূচি জার্মানির মূলধারার প্রশিক্ষণে পরিণত হবে।

আর প্রশিক্ষিত ইমামদের চাকরির ক্ষেত্রও আরো বিস্তৃত হবে।’
ইউনিভার্সিটি অব এরলাঞ্জেন-নুরেমবার্গ এর ইসলাম ধর্মবিষয়ক শিক্ষক তারেক বাদাবিয়া বলেন, ‘কমিউনিটিতে ধর্মীয় ব্যক্তিদের চাহিদা অনেক বেশি। ইমামরা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন। ফলে অনেকে তাদের ইমাম অর্থাৎ সমাজের প্রধান ব্যক্তিকে দীর্ঘ সময় প্রশিক্ষণের জন্য ছেড়ে দেওয়া কঠিন মনে করে। তবে ইসলামিক কলেজের প্রতি সবার আগ্রহ ও আস্থা তৈরি হচ্ছে। তাই স্নাতকদের শুধুমাত্র একাডেমিকভাবে প্রশিক্ষিত করা উচিত নয়। বরং সামাজিকভাবে তাদের কাজ করার সুযোগ দেওয়া উচিত। আর প্রশিক্ষিত ইমামদের মধ্যেও সরকারের স্বীকৃতি ও মূল্যায়নের কারণে কৃতজ্ঞবোধ তৈরি হয়েছে।’

চার বছর আগে জার্মানির বাইরে থেকে আসা ইমামদের সংখ্যা কমাতে নিজস্ব উদ্যোগে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করে জার্মান সরকার। এরপর ২০১৯ সালে ওসনাব্রুক শহরের ডয়েচল্যান্ডে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ইসলামিক কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২১ সালের গ্রীষ্মে ইমাম প্রশিক্ষণের প্রথম ব্যাচের কার্যক্রম শুরু হয়। কলেজটি জার্মান ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সহযোগিতামূলক কার্যক্রম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান লক্ষ্য হলো, জার্মান ভাষায় দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি ইসলামী ধর্মগুরু ও আধ্যাত্মিক গাইডদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। এরই মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীতে মুসলিম চ্যাপ্লেন নিয়োগের বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

ইসলামী ধর্মতত্ত্বে স্নাতক ডিগ্রি বা সমতুল্য ডিপ্লোমা থাকলে এই প্রগ্রামে আবেদন করা যাবে। এর প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় কোরআন তিলাওয়াত, প্রচার-প্রসারের রীতি ও কৌশল, উপাসনার অনুশীলনসহ রাজনীতিবিষয়ক শিক্ষা দেওয়া হয়। জার্মানিতে বর্তমানে ৫৫ লাখের বেশি মুসলিম বসবাস করে, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬ শতাংশ। তাই মুসলিম জনগোষ্ঠী দেশটির সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সূত্র : ডয়চে ভেলে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *