ইসলামী সমাজে অমুসলিম সম্প্রদায় || পর্ব-১

ইসলামী সমাজে অমুসলিম সম্প্রদায় || পর্ব-১

  • আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ

পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, বিভিন্ন রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংখ্যালঘুদের অবস্থান সবসময়ই সংশ্লিষ্ট জাতির জন্য একটি জটিলতা নিয়ে দেখা দিয়েছে। কোন রাষ্ট্র ব্যবস্থাই এ থেকে মুক্তি পায়নি। কোন রাষ্ট্রীয় সীমায় শুধু এক ধর্মবিশ্বাসী ও একই দৃষ্টিভঙ্গির লোক বাস করবে তা কখনই হয় না। আস্তিক ও নাস্তিক, তাওহীদবাদী ও মুশরিক, সৎ-অসৎ ইত্যাদি বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির লোকের আবাস এ পৃথিবী ও এর রাষ্ট্রগুলো।

যেদিন থেকে মানুষ সামাজিক গণ্ডির নিয়ন্ত্রণে বসবাস করতে শিখল, তখন থেকেই সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়। সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘুদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক তখন হতেই কখনো দ্বান্দ্বিক আর কখনো বা সহ অবস্থান এর খাতে বইতে থাকে।

বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও পারিপার্শ্বিক কারণে কোন কোন সময় হয়ত কোন জাতি বা গোষ্ঠী প্রবল হয়ে উঠেছে। আর তখন তাদের অধীনে একান্ত কৃপার পাত্র হয়ে বসবাস করতে বাধ্য হয়েছে অন্য এক জনগোষ্ঠী। আবার কখনো ঐ অধীনস্ত গোষ্ঠীই নানাবিধ অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উৎকর্ষে শক্তিমান হয়ে উঠেছে এবং নিজেদের পূর্বতন পরাধীনতার ঝাল মেটাতে গিয়ে পূর্বের ক্ষমতাসীন জাতিকে বিভিন্নভাবে উৎপীড়ন করেছে- শোধ নিয়েছে।

সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু, বিজীত ও বিজয়ীর এই যে টানাপোড়েন, মানব ইতিহাস এতে বারবার বিপর্যস্ত হয়েছে জর্জরিত হয়েছে।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্বেকার যুগের প্রাচীন সমাজ সভ্যতাগুলোর কেন্দ্র মিসর, ব্যবিলন, গ্রীস, রোম, পারস্য ইত্যাদি সবগুলো সাম্রাজ্যেই সংখ্যালঘুদের অবস্থা একই ধরনের করুণা উদ্রেককারী ও হৃদয় বিদারক ছিল।

সংখ্যালঘুরা প্রায় সব কালেই অবহেলিত ও নির্যাতিত। অধিকাংশ প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থাই এদের চরমভাবে অবজ্ঞা করে এসেছে। অতীত ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায় দাস প্রথার জন্ম এ থেকেই হয়েছিল। দাস হিসেবেই এদেরকে বেঁচে থাকতে হত। তাদের কোনরূপ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক আযাদী ছিলনা কোনরূপ মালিকানা অধিকার ছিলনা। সংখ্যাগুরু ও ক্ষমতাসীনদের কৃপার উপর নির্ভর করেই তাদেরকে বসবাস করতে হত।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্বেকার যুগের প্রাচীন সমাজ সভ্যতাগুলোর কেন্দ্র মিসর, ব্যবিলন, গ্রীস, রোম, পারস্য ইত্যাদি সবগুলো সাম্রাজ্যেই সংখ্যালঘুদের অবস্থা একই ধরনের করুণা উদ্রেককারী ও হৃদয় বিদারক ছিল।

মিসর

মিসরের সংখ্যাগুরু কিবতীরা সংখ্যালঘু বনী ইসরাইলের প্রতি অত্যন্ত অপমানজনক আচরণ করত। বাধ্যতামূলকভাবে এদেরকে বেকার খাটানো হত। দৈত্যকায় পিরামিড এবং প্রাচীন শহরগুলো আজো তাদের নির্যাতনের সাক্ষী হয়ে আছে। সামাজিক ব্যাপারে অদ্ভুতদের মতই তাদেরকে মনে করা হত। সংখ্যাগুরু কিবতীদের খিদমত ও মনোরঞ্জণই তাদের জীবনের মূখ্য কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেকালের বনী ইসরাইলের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তৌরাতে বলা হয়েছে: মিসরীয়রা জবরদস্তিমূলকভাবে বনী ইসরাইলের থেকে কাজ নেয়। অবর্ণনীয় মেহনত করিয়ে, ইট বানানোর কাজে লাগিয়ে এবং নিজেদের কৃষিক্ষেত্রে সবরকম কাজ করিয়ে তারা তাদের জীবন অত্যন্ত তিক্ত ও দূর্বিসহ করে তোলে। সমস্ত খাটুনি তাদের বেগার খাটতে হত। -তৌরাত: নির্গমন, ১ম অধ্যায়।

এমনকি সবসময়ের জন্য তাদেরকে সংখ্যালঘু ও দুর্বল বানিয়ে রাখার হীন ইচ্ছায় তাদের যুবশক্তি ধ্বংস করে দিত। জন্ম মাত্রই ছেলে সন্তানদেরকে মেরে ফেলা হত। এ সম্পর্কে আল্লাহ্পাক কুরআন কারীমে বলেন, “তারা (ফেরাউনরা) তাদের ছেলেদেরকে জবাই করে ফেলত, আর মেয়েদেরকে (খিদমতের জন্য) ছেড়ে দিত।

ব্যবিলন

ব্যবিলনীয় যুগে সংখ্যালঘুদের অবস্থা আরও হীন ছিল। ব্যবিলনীয় সম্রাট বনু কদনযরের সংখ্যালঘু বনী ইসরাইলদেরকে নজরবন্দী করে রাখা হত। সেই সময়ে সামাজিক বা ধর্মীয় কোনরূপ আযাদীই তাদের ছিল না। ষাট ফিট লম্বা স্বর্ণের দেবমূর্তি বানিয়ে তাদের পূজা করতে বাধ্য করা হত। যারা এমন করতে অস্বীকার করত তাদেরকে আগুনে জ্বালিয়ে ফেলা হত।

গ্রীস

গ্রীস সমাজ-ব্যবস্থায়ও তাদের অবস্থা তেমন কোন ভাল ছিল না। প্রখ্যাত গ্রীক দার্শনিক এরিস্টেটল রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার নিরাপত্তার জন্য দাস প্রথাকে আবশ্যক বলে ঘোষণা করেন। আর বিজীত সংখ্যালঘুদের থেকে এদেরকে যোগাড় করা হত। তাদের দ্বারা কঠোর প্ররিশ্রমের ও নিকৃষ্ট ধরনের কাজ করানো হত। অধিকার বলতে কোন কিছুই তাদের ছিল না।

রোম

এ ব্যাপারে রোমও তার পূর্বসূরীদের পথেই চলেছে। ক্ষমতাসীন রোম সম্রাট খৃস্টান ধর্ম গ্রহণ করলে অখৃস্টান সংখ্যালঘুদের অবস্থা অত্যন্ত দূর্বিসহ হয়ে ওঠে। সকল অখৃস্টান বাসিন্দাকে জোর করে খৃস্টান বনানোর জন্য রাজকীয় ফরমান জারী করা হয়। তাদের উপর অবর্ণনীয় জুলুম করা হয়। তাদের সকল প্রকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে ফেলা হয়। এ জুলুম থেকে বাঁচার জন্য অনেকে তখন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। বর্ণনায় পাওয়া যায় একজন রোমান সামন্ত শুধু এ কারণেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন যে জবরদস্তিমূলক খৃস্টান হওয়ার অপমান তার সহ্য হয়নি।

পারস্য

সংখ্যাগুরু পার্সীরা সংখালঘু খৃস্টানদের অবস্থা অত্যন্ত কষ্টকর করে তোলে। ইরানী সম্রাটের প্রতিদ্বন্দ্বী রোমের সম্রাট যেহেতু খৃস্টান ছিলেন, তাই পারস্যেও খৃস্টানদেরকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হত। ফলে তারা জুলুম ও শোষণের বিশেষ লক্ষ্য হিসাবে পরিগণিত হয়ে যায়।

ধর্ম-নিরপেক্ষতাবাদ ও সংখ্যালঘু

আজকাল অনেকেই বলে বেড়াচ্ছেন সংখ্যালঘুদেরকে সংখ্যাগুরুদের এ উৎপীড়ন থেকে যদি চিরদিনের জন্য মুক্তি দিতে হয়, তবে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনাকে সেকুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ করতে হবে। তাঁরা মনে করেন আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যের দরুনই সংখ্যাগুরুরা সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার উৎপীড়ন করে আসছে। তাই ধর্মকে একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে চিহ্নিত করে, রাষ্ট্র যদি সেকুলার বা ধর্মীয় অনুশাসনের আওতাভূক্ত হয়, তবে কোন রাষ্ট্রীয় সীমার সংখ্যাগুরুরা রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যের অভাবহেতু সংখ্যালঘুদের উপর কোনরূপ শোষণ চালাতে পারবে না। আমাদের দেশেও একদল লোক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকেই সংখ্যালঘুদের সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম পথ বলে অন্ধ প্রচার করে চলেছেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, এ অর্থেই তাঁরা রাষ্ট্রকে কুরআন ও সুন্নাহর আওতামুক্ত করার কথাও বলে থাকেন এবং তাঁরা ইসলামকেও অন্যান্য ধর্ম ব্যবস্থাগুলোরই সমপর্যায়ের বলে মনে করেন। সত্যি কি তাই? ধর্মনিরপেক্ষ শাসন ব্যবস্থা সত্যি কি সংখ্যালঘুদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার কোন বাস্তব ভিত্তিক ন্যায়ানুগ পদক্ষেপ নিতে পেরেছে? বর্ণ, ভাষা ও যুক্তিহীন অন্ধ সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত ছোঁবল হতে বেঁচে থাকার কার্যকরী কোন নিশ্চয়তা তাদেরকে দিতে পেরেছে?

এ প্রশ্নের জবাব পেতে হলে, বর্তমান বিশ্বের ধর্মনিরপেক্ষ দেশগুলোর বাস্তব কর্মধারার কিছুটা পর্যালোচনা আমাদেরকে করতে হবে। তাই সংক্ষেপে আমরা এদিকে কিছুটা ইঙ্গিত করে যেতে চাই।

“আজকের পৃথিবীতে গণতান্ত্রিক আমেরিকা, বৃটেন এবং ভারত- এ তিনটি অন্যতম বৃহৎ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। আমরা যদি এ দেশগুলোর বাস্তব অবস্থা
পর্যালোচনা করি, তবে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করি যে, প্রাচীন মিসরীয় ও ব্যবিলনীয় সাম্রাজ্য হতেও আজ সেখানকার সংখ্যালঘুদের অবস্থা হীনতর। শাসনতন্ত্রে যতই বুলি কপচান হোক না কেন, আমরা সকলেই জানি, কার্যত সেখানকার সংখ্যালঘুরা সংখ্যগুরুদের কৃপার উপর নির্ভর করেই জীবনযাপন ও মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য হচ্ছে। আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ান ও নিগ্রো, বৃটেনের ক্যাথলিক ও বহিরাগতরা এবং ভারতের মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুরা ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত হয়ে আজ অত্যন্ত শংকার মধ্যে দিন গুজরান করে চলছে।

সেখানকার সেকুলার শাসন ব্যবস্থা শ্বেতাঙ্গদের অত্যাচার হতে নিগ্রোদেরকে, স্কীনহেডদের উৎপীড়ন হতে বহিরাগতদেরকে, প্রোটেস্ট্যানদের নিপীড়ন হতে ক্যাথলিকদেরকে এবং ভারতের যুক্তিহীন অন্ধ সাম্প্রদায়িকতাবাদী সংখ্যাগুরু হিন্দুদের জুলুম হতে সংখ্যালঘু মুসলমানদেরকে ও অন্যান্য সম্প্রদায়কে বাঁচাতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে তাদের জান মাল, ইজ্জত আবরুর আজ কোন নিরাপত্তা নেই। সংখ্যাগুরুরা যখন ইচ্ছা নির্যাতন করে চলেছে। কিন্তু শাসন ব্যবস্থা এর মোকাবিলায় ফাঁকা বুলির বাইরে আর কিছু করতে পারছে না। আর আমরা জানি, আইনের বিধান যদি বাস্তবভাবে কার্যকর করা না যায়, তবে এর কোন মূল্যই থাকতে পারে না।

আমেরিকার সংখ্যাগুরু শ্বেতাঙ্গদের হীন মানসিকতা আমাদের কারো অজানা নেই। আদিবাসী রেড ইন্ডয়ানদের মানুষ বলেই স্বীকৃতি দিতে চায় না তারা। সামাজিক দিক দেয়ে নিগ্রোরা আজো সেখানে চরম শোষিত ও লাঞ্ছিত হয়ে চলছে। একই ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও শুধু গায়ের রং কালো বলে শ্বেতাঙ্গদের অনেক গীর্জায় যাওয়ার অধিকার নিগ্রোদের নেই। আমেরিকার ভূমিপুত্র রেড ইন্ডিয়ানদেরকে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। বিংশ শতাব্দীতে মুক্ত সভ্যতার যুগেও সামাজিক নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে মার্টিন লুথার কিং-এর মত শান্তিবাদী নেতাকেও গুলির মুখে জান দিতে হয়েছে।

বৃটেনের বহিরাগতরা আজ সেখানে অত্যন্ত অস্বস্তিকর জীবন অতিবাহিত করতে বাধ্য হচ্ছে। বৃটেনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বহিরাগতদের অবদান কম নয়। তবুও নিজেদের জান ও মালের নিরাপত্তার প্রশ্নে তারা আজ বড় অসহায় এবং উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। স্কিনহেডদের দৌরাত্ম্য ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এক ধর্মোবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও সংখ্যালঘু ক্যাথলিকরা সংখ্যাগুরু প্রোটেস্ট্যানদের অত্যাচার হতে নিজেদের জান-মাল নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারছে না। বেলফ্যাস্টে যে নির্মম রক্তক্ষয়ী দাংগা সংঘটিত হয়েছিল, মানব ইতিহাসে তা অত্যন্ত কলংকজনক। এতে অনেক মানুষ মারা পড়ে, হাজারো লোক গৃহহীন হয়ে পড়ে।

বর্ণবৈষম্যবাদী মানসিকতা উত্তরোত্তর সংখ্যাগুরুদের মধ্যে বেড়ে চলছে। অতীতে সাধরণ নির্বাচনেও (১৯৭০) এর প্রতিফলন বিশেষ লক্ষ্যণীয়। এ সম্পর্কে পর্যালোচনা করতে গিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকের ভাষ্যকার লিখেন, ‘বর্ণ- বৈষম্যবাদী টোরী নেতা মিস্টার ইনেক পাওয়েল আগের চেয়েও বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন। টোরী দলের নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে কমপক্ষে ত্রিশজন পাওয়েলবাদী আছেন বলে কারো কারো ধারণা। স্কিনহেডদের দস্যুতা সাধারণভাবে বৃটেনবাসী অনুয়েত চলছে কি না, তাই, তবে গোটা বৃটেনই সাস্থার বিপাকে কদমছাট হতে চলছে কি না, তাই সন্দেহ। সাধারন মানুষ বিকাশীদের উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা খুঁজে দেখে না। বিদেশী মাত্রকেই তারা বিয়ে বাড়িতে রবাহুতের দৃষ্টিতে দেখে। বৃটেনে তাই বর্ণবিদ্বেষের অন্তঃসলিলা স্রোতধারারই জয় হচ্ছে।’ -৬ই আষাঢ়, ১৩৩৭ বাংলা।

এমনকি এক ধর্মোবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও সংখ্যালঘু ক্যাথলিকরা সংখ্যাগুরু প্রোটেস্ট্যানদের অত্যাচার হতে নিজেদের জান-মাল নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারছে না। বেলফ্যাস্টে যে নির্মম রক্তক্ষয়ী দাংগা সংঘটিত হয়েছিল, মানব ইতিহাসে তা অত্যন্ত কলংকজনক। এতে অনেক মানুষ মারা পড়ে, হাজারো লোক গৃহহীন হয়ে পড়ে।

সেকুলার ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে গর্ববোধকারী ভারতের অবস্থা আরো দুঃখজনক। সংখ্যালঘুদের উপর নির্মম অত্যাচার চালানো ভারতের আদিম ঐতিহ্য। মানবতাবাদী বৌদ্ধদেরকে যেভাবে ভারত ছাড়া করা হয়েছে ইতিহাসে সে এক অত্যন্ত কলংকজনক অধ্যায়। মানবতা আজ সেখানে পদদলিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছে, ইতিহাসে এর নজির অল্প পাওয়া যায়। সংখ্যাগুরু সেখানকার সংখ্যালঘুদের অস্তিত্বই স্বীকার করে নিতে পারছে না। জঘন্য হিংস্রতা নিয়ে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ইজ্জত-আবরু, জান-মাল চরমভাবে নিষ্পেষিত করে চলেছে। নিজেদের অধীকারের নিশ্চয়তা না পেয়ে সংখ্যালঘু খৃস্টান নাগাদেরকে শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিতে হয়েছে।

বিগত ষাট-সত্তোর বছরের মধ্যে ভারতে যে কয়টি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছে, এর কোন হিসেব নেই। মানবতার ইতিহাসে আর কোথাও এর নযীর নেই। সাম্প্রতিককালেও আহমদাবাদ, এলাহাবাদ, বোম্বাই, গুজরাট, আসাম প্রভৃতি স্থানে ব্যাপকভাবে হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে; হাজার হাজার লোক গৃহহীন হয়েছে, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, হিংস্র উল্লাস নিয়ে লাখো মা-বোনের ইজ্জত ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে।

ভারত সরকার দাঙ্গাকারীদের সামনে যেন অসহায়। মারাত্মক উস্কানীর মুখেও সরকার এর প্রতিরোধে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। অধিকন্তু নিরপেক্ষতার মুখোশ পরে পক্ষপাতিত্বের চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছে। সরকারী পুলিশ বাহিনী সংখ্যাগুরুদেরকে লুটতরাজে সক্রিয় সাহায্য করে চলেছে। এই তো সেদিন (৮ই মে, ১৯৭৭) ভারতের জলগাঁও এলাকায় পুলিশের রক্ষাণাধীনে কিছু সংখ্যক উম্মত্ত যুবক এক মুসলমান বিধবার ঘরে বোমা মেরে দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে পুড়িয়ে মারে। – দৈনিক আজাদ, ১০ই আষাঢ়, ১৩৭৭।

“দাঙ্গা আজ ভারতের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। নাজীদের চেয়েও ভয়াবহরূপে সেখানে আজ সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার চলছে। তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানাদি পোড়ানো হচ্ছে। জবরদস্তি করে ধর্মান্তরিত করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় সেকুলার সরকার তাদের জান-মাল, ইজ্জদ-আবরুর নিরাপত্তা বিধানে ক্রমাগত অবহেলা করে চলছেন।

এখন আমাদের প্রশ্ন হল, সত্যই যদি সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ সংখ্যালঘুদের সার্বিক কল্যাণ ও তাদের নিরাপত্তার জামানত দিতে পারত তবে আজ আমেরিকার শ্বেতাঙ্গদের, বৃটেনে স্কীনহেড ও প্রোটেস্ট্যানদের এবং ভারতের সংখ্যাগুরু হিন্দুদের সাম্প্রদায়িকতা দুষ্ট মানসিকতার পরিবর্তন সাধন করতে পারছে না কেন? অসেকুলারিস্ট রাষ্ট্র হতেও অধিকতর চরম অস্বস্থির মধ্যে কেন আজ সেখানে তাদেরকে দিন কাটাতে হচ্ছে? সেকুলারিজমের কাছে এর কি কোন জবাব আছে?

নীতির কথায় মানুষকে সাময়িক খুশী করতে পারা যায় সত্য। কিন্তু এর বাস্তবতা-বর্জিত পরিবেশে মানুষের চলে না।

আমাদের এতক্ষণের আলোচনা সংক্ষিপ্ত হলেও এ কথা পরিষ্কার হয়ে উঠেছে যে, প্রাচীনকালের রাজতন্ত্রবাদ ও আজকের গণতান্ত্রিক সেকুলারিজম কোনটাই সংখ্যালঘুদের সার্বিক কল্যাণ এবং তাদের ন্যূনতম মানবিক অধিকারের কার্যকরী কোন নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকার কোন নিরাপত্তা এখনো তারা পায়নি।

পক্ষান্তরে ইসলাম মানবজাতির সার্বিক কল্যাণের জন্য এসেছে। আল্লাহ্পাকের সকল সৃষ্ট জীব তাঁর একান্ত আপন জন। ইসলাম বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা করেছে: ‘সকল সৃষ্ট জীবই আল্লাহ্ বৃহত্তর পরিবার।’ তাই অন্যায়ভাবে একটি সামান্য পিঁপড়ার উপর জুলুমকে ইসলাম বরদাশত করেনি। ইসলাম সকলপ্রকার যুলুমকে অত্যন্ত ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখছে। শক্তিমানের জুলুমকে শক্তিহীনের উপর, সংখ্যাগুরুর জুলুমকে সংখ্যালঘুর উপর কোন ক্রমেই ইসলাম সহ্য করেনি ইসলাম সকল স্তরে ন্যায়কে কায়েম করতে চায়। যালিম যদি মুসলমান হয়, আর মযলুম কাফিরও হয়, তবু ইসলাম সবসময়ই মযলুমকেই সমর্থন দিয়েছে। জাগতিক ন্যায়ের দৃষ্টিতে এর কাছে সকলেই সমান।

অবশ্য যে সব অমুসলিম সহ-অবস্থানে বিশ্বাস করে না, অধিকন্তু জবরদস্তি মূলকভাবে চরমত অন্যায়কে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে ইসলাম চরমপন্থা অবলম্বন করেছে-পৃথীবির এ বিষ ফোঁড়াকে অপারেশন করেছে। তবে যারা সহ অবস্থানে বিশ্বাসী এবং ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় কল্যাণের আওতায় বসবাস করতে চায়, তাদের সঙ্গে ইসলাম নেহায়েত হৃদ্যতাপূর্ণ ব্যবহার ও নযীরবিহীন উদারতা প্রদর্শন করেছে -তাদের জান-মাল, ইজ্জত- আবরু সব কিছুরই বলিষ্ঠ নিরাপত্তা দান করেছে।

ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা একটি আদর্শবাদী সমাজ ব্যবস্থা হওয়া সত্ত্বেও অমুসলিম নাগরিকদের যে সমস্ত মানবিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক অধিকার দিয়েছে, পৃথিবীর আর কোথাও এরূপ অধিকার দেয়া সম্ভবপর হতে পারে না।

ইসলাম সংখ্যালঘুদের জান-মাল ইজ্জত-আবরুকে আল্লাহ্ ও রাসূলের পরম আমানত বলেই মনে করে এবং প্রতিটি সংখ্যাগুরুর মন-মগজে কার্যকরীভাবে এ মানসিকতা প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস পায়। আল্লাহ্ ও রাসূলের জিম্মাতেই তারা সংখ্যালঘুদেরকে গ্রহণ করে। তারা যানে এ জিম্মা অন্যায়ভাবে যারা ভঙ্গ করবে, তাদেরকে আল্লাহ্ ও রাসূলের সামনে কঠিন জবাবদিহীর সম্মুখিন হতে হবে। ওয়াদা খিলাফীকে তারা জঘণ্যতম প্রতারণা বলেই বিশ্বাস করে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:

‘মুনাফিক তথা যালিম প্রবঞ্চক তারা, যারা ওয়াদা খিলাফ করে এবং আমানতের খিয়ানত করে।’ -মিশকাত। ফলে ইসলামী সমাজে সংখ্যালঘুদের উপর কখনই অবিচার হতে পারে না। ইসলামের চৌদ্দশ’ বছরের ইতিহাসে দেখা গেছে, সংখ্যালঘুরা হয়ত বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, শত্রু পক্ষকে সাহায্য করেছে, কিন্তু তবুও সংখ্যাগুরু মুসলমানরা তাদের প্রতি কখনো অবিচার করেনি।

হযরত উমর (রা.), উমর ইবন্ আব্দুল আযীয (রহ.), গাজী সালাহউদ্দীন প্রমুখের ইতিহাস আজো এর জ্বলন্ত সাক্ষ্য বহন করে।

মূল বক্তব্য বিষয়ের অবতারণার পূর্বে এখানে আমাদেরকে কয়েকটি বিষয় বুঝে নিতে হবে। এগুলো এ ব্যাপারে ইসলামের মূল উদ্দেশ্য ও আবেদন সম্পর্কে সম্যক অবগতি লাভ করার কাজে সহায়ক হবে।

ক. সংখ্যালঘুদেরকে ইসলাম যে সমস্ত অধিকার দিয়েছে, এগুলোকে বর্তমানে কুটনৈতিক চালের উপর ধারণা করা ঠিক হবে না। কেননা শুধু বাক্যের অলংকার বাড়ানোর জন্য আজকালকার শাসনতন্ত্রে অনেক কথাই লেখা থাকে, বাস্তবে সেগুলোর কোন খুঁজ পাওয়া যায় না। পক্ষান্তরে ইসলামে দেয়া সমস্ত অধিকার (বিবরণ পরে পেশ করা হচ্ছে) আল্লাহ্ ও রাসূল কর্তৃক প্রদত্ত অন্যান্য ধর্মীয় কর্তব্যেরই মর্যাদা রাখে। তাই শরীয়তের অন্যান্য আহকাম ও ফরায়েযের সংরক্ষণ ও প্রতিপালন যেভাবে রাষ্ট্রের উপর এক দায়িত্ব, তেমনি সংখ্যালঘুদের সম্পর্কীয় অধিকারগুলোকেও সর্বতোভাবে সংরক্ষিত রাখা ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য অবশ্য করণীয় দায়িত্ব। যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়া বিনা কারণে কেউ যদি এগুলোর অবমাননা করে, তবে তাকে যে শুধু দুনিয়াতেই জবাবদিহী করতে হবে, তা-ই নয়, অধিকন্তু আল্লাহপাকের সামনেও তাকে অভিযুক্ত হয়ে দাড়াতে হবে এবং নবী-ই-কারীম আলাইহিস সালাম মযলুম সংখ্যালঘুদের পক্ষ হয়ে তার বিরুদ্ধে আভিযোগ আনবেন। খ. এ সমস্ত অধিকার শুধু মুসলমান এবং ইসলামী রাষ্ট্রের তরফ হতেই দেয়া হয় না। বরং আল্লাহ্ ও রাসূলের জামানতের উপর দেয়া হয়ে থাকে। তাই জেনে শুনে কারণ ছাড়া সেগুলোর প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করা আল্লাহ ও রাসূলের জামানতের খিয়ানত এবং গাদ্দারীরই নামান্তর হবে।

গ. এ সমস্ত অধিকার ন্যূনপক্ষের অধিকার। আল্লাহ ও তার রাসূলের তরফ হতে যেহেতু এসব দেয়া হয়েছে, তাই এর চেয়ে নিচে যাওয়ার অধিকার কোন ইসলামী রাষ্ট্রের নেই। সমকালীন পরিবেশ অনুযায়ী ইসলামী মূলনীতির উপর লক্ষ্য রেখে এর চেয়ে উদের্ধ্ব যাওয়া যাবে, কিন্তু এতে কোন কমতি করা যাবে

না।

ঘ. ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রেক্ষিতে সংখ্যালঘুরা দুই শ্রেণীর। এক. যারা সুন্ধিচুক্তির মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রের আওতাভুক্ত হয়েছেন। এদেরকে ইসলামী পরিভাষায় আহলে সুলাহ বলা হয়ে থাকে। এদের সঙ্গে সন্ধির শর্তানুসারে ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। দুই. যারা যুদ্ধের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। উভয় শ্রেণীর বিস্তৃত আলোচনা করতে হলে ব্যাপক পরিধির প্রয়োজন। তাই বক্ষমান নিবন্ধের ক্ষুদ্র পরিসরের প্রতি খেয়াল রেখে এখানে এমনকতগুলো বিষয়েরই আলোচনা আমরা করছি যা উভয় শ্রেণীর বেলায়ই প্রযোজ্য।

এ ভূমিকার পর এখন আমরা ইসলামী সমাজে অমুসলিমদের অধিকার সম্পর্কীয় ইসলামী ধারাগুলো পর্যায়ক্রমে সংক্ষেপে আলোচনা করতে চাই। আশা করি, এতে ইসলামের ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালাগুলো তাদের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য নিয়ে ভেসে উঠবে।

জান ও মালের নিরাপত্তা

ইসলামের রাষ্ট্রীয় সীমানায় বসবাসকারী আনুগত্যশীল প্রতিটি সংখ্যালঘুর জান ও মালের নিরাপত্তা বিধান করা ইসলামী সরকারের ও প্রতিটি মুসলমানের ধর্মীয় কর্তব্য। প্রত্যেকই এর জিম্মাদার। ইসলাম দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছে, ‘নিশ্চয়ই তাদের রক্ত আমাদের (একজন মুসলমানের) রক্তের মত। তাদের মাল আমাদের মালের মত।’ অর্থাৎ ইসলামী রাষ্ট্রে একজন মুসলমানের জান-মাল যেমনভাবে নিরাপদ, ঠিক তেমনিভাবে একজন সংখ্যালঘুরও জান- মাল নিরাপদ থাকবে।

নজরানবাসীদের সঙ্গে নবী-ই-কারীম আলাইহিস সালাম যে চুক্তি করেছিলেন, তাতে অত্যন্ত পরিষ্কার করে তিনি বলেছিলেন, ‘এদের জন্য আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের জামানত দেয়া হচ্ছে তাদের জানের, তাদের মালের, তাদের সম্পত্তির, তাদের উপস্থিত ও অনুপস্থিত এবং অধীনস্ত সকলের জন্য। -কিতাবুল আমওয়াল।
তিনি আরো ফরমান, ‘যে ব্যক্তি কোন সংখ্যালঘুকে হত্যা করবে, সে বেহেশতের সন্ধানও পাবে না: যদিও বেহেশতের সুবাশ চল্লিশ বছরের দূরের রাস্তা হতে পাওয়া যায়।’-বুখারী।

হযরত আলী রা. রেওয়ায়েত করেন, ‘নবী-ই-করীম আলাইহিস সালাম বলেছেন, সংখ্যালঘুদের চুক্তিবদ্ধ থাকা অবস্থায় কখনও হত্যা করা যাবে না। মিশকাত শরীফ।

আইনের দৃষ্টিতে একজন সংখ্যালঘুর জান ও মাল এবং একজন মুসলমানের জান ও মালের মধ্যে কোন তারতম্য নেই। ইমাম রাবী, নখয়ী, আবু হানীফা প্রমুখ ইমাম বলেন, ‘একজন সংখালঘুর হত্যাকারী মুসলমান হলেও তাকে হত্যা করা হবে। একবার হযরত আলী রা. কাছে কোন এক সংখ্যালঘুর হত্যাকারী মুসলমানকে ধরে আনা হয়। অনুসন্ধানের পর অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি এ মুসলমানটিকে হত্যার আদেশ দিয়ে দেন। পরে নিহত ব্যক্তির ভাই এসে বলে, ‘আমি ভাইয়ের রক্তের দাবি মাফ করে দিলাম।’ হয়রত আলী রা. বলেন, ‘হয়ত তোমাকে কেউ ভয় দেখিয়েছে কিংবা ধমকি দিয়েছে, তাই এ কথা বলছ।’ সে বলল, ‘আমীরুল মু’মিনীন! ব্যাপার আসলে তা নয়। ভাইকে তো আর পাব না, তারা (হত্যাকারী) আমাকে এর বদলা দিয়্যত বা রক্তপণ দিতে চাইলে আমি তা কবুল করে নেব।’ তখন হযরত আলী রা. বললেন, ‘যা ইচ্ছা করার ইখতিয়ার আছে। নইলে যাদের জিম্মা আমরা নিয়েছি, তাদের রক্ত আমাদের রক্তের মতই এবং তাদের দিয়্যত (রক্তপণ) আমাদের দিয়্যতের মতই।’ যায়লয়ী, তাবরানী।

এমনি অন্য এক ব্যাপারে হযরত উমর রা. হত্যাকারীকে সংখ্যালঘুদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন আর বলে দিয়েছিলেন, ‘তোমাদের ইচ্ছা হলে মাফও করতে পার, ইচ্ছা হলে হত্যাও করতে পার।’ -যায়লয়ী।

আবু আব্দুল্লাহ্ বা আবু আবদুর রহমান বলেন, ‘একবার হযরত সা’দ রা.’এর সঙ্গে সফরে ছিলাম। রাস্তায় আমাদের রাত কাটাতে হল। সেখানে কাছেই এক যিম্মীর বাড়ী ছিল। মালিককে আমরা তালাশ করে পেলাম না। তখন সা’দ রা. আমাদেরকে বললেন, ‘দেখ, ঈমানের সঙ্গে যদি আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করার আশা রাখ, তবে খবরদার, এর কোন কিছুতেই হাত লাগিও না।’ সুতরাং আমরা দেয়ালের ছায়ায় সমস্তটা রাত ক্ষুধার্থ অবস্থায় কাটিয়ে দিয়েছি।’ -কিতাবুল আমওয়াল।

একাবর হযরত উমরের রা. কাছে একজন যিম্মী এসে অভিযোগ করল যে, তার বাগানের আঙুর মুসলমান সিপাহীরা নিয়ে গেছে। হযরত উমর রা. নিজে তখন সত্যাসত্য যাচাই করার জন্য অগ্রসর হলেন। দেখলেন, একজন মুসলমান সিপাহী ঘারে করে আঙুর নিয়ে তাঁর দিকে আসছে। হযরত উমর রা. বললেন, ‘তুমিও!’ তিনি বললেন ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে এমনটি হয়ে গেছে।’ তখন হযরত উমর (রা.) সমস্ত আঙুরের দাম পরিশোধ করার জন্য সকলকে নির্দেশ দিয়ে দিলেন। -কিতাবুল আমওয়াল।

এমনি আর এক ঘটনায় তিনি এক সংখ্যালঘুকে বায়তুলমাল হতে দশ হাজার দিরহাম ক্ষতিপূরণ দিয়েছিলেন। -কিতাবুল খারাজ।

এমন কি যদি কেউ সংখ্যালঘুদের জান ও মালে আক্রমণ করে, তবে ইসলামী সরকার ও মুসলিম নাগরিকগণ তাদের হিফাযতের জন্য প্রয়োজন হলে যুদ্ধও করবে। হযরত উমর রা. ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের জামানতের ওসীয়ত করে যাচ্ছি যে, তাদের সঙ্গে কৃত ওয়াদা পালন করা হবে এবং তাদের হিফাযতের জন্য (প্রয়োজন হলে) হাতিয়ারও ব্যবহার করা হবে।’ -বুখারী।

চলবে…

Related Articles