পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ভারতে চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন জানেশীনে ফিদায়ে মিল্লাত, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি, সায়্যিদ মাওলানা মাহমুদ মাদানী।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) নয়া দিল্লিতে শুরু হওয়া জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের ইজলাসে মুনতাজিমা( গভর্নিং বডি কাউন্সিল)- এর বার্ষিক সভায় তিনি এই প্রস্তাব পেশ করেন।
জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের প্রায় ১৫০০ সদস্য ও নেতৃবৃন্দ এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের (একাংশের) সভাপতি মাওলানা মাহমুদ আসআদ মাদানী।
সভায় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি তার ভাষণে বলেন, আমাদের লড়াই হবে বিদ্বেষের বিরুদ্ধে। আমাদের লড়াই শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পক্ষে। ভারত থেকে আমরা ইসলামোফোবিয়ার অস্তিত্বকে চিরতরে মুছে ফেলতে চাই। আমাদের এ লড়াই কেবল ইসলামকে রক্ষা করার জন্য নয়, বরং এ লড়াই দেশের সম্মান সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্যও।—এ সময় ইসলামোফোবিয়াকে রুখতে পৃথক আইন প্রণয়নেরও আহ্বান জানান জানেশীনে ফিদায়ে মিল্লাত।
দুশমনদের বিরুদ্ধে একযোগ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাওলানা মাদানী বলেন, বর্তমানে অনেকেই আমাদের দেশকে দুর্বল করার হীন চেষ্টা চালাচ্ছে। ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করার পায়তারায় লিপ্ত আছে। আমরা দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করবো। মুসলিম হিসেবে ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত। আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে সামনে এগিয়ে যাবো। দেশের শান্তি এবং উন্নতি সাধনই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।
মাওলানা মাদানী আরও বলেন, আমাদের কঠিন সময় অতিক্রম করতে হবে, কিন্তু আমাদের বিশ্বাস আছে যে আল্লাহ আমাদের সহায়ক। আমরা সকল ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত।
দেশের দায়িত্বশীলদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যদি দেশের ভেতরের দলগত বিদ্বেষের ব্যাপারে কথা বলতে হয় তবে আমি বলবো, সরকার পাল্টালে অবস্থা পাল্টাবে না। মানুষ ঠিক হলেই অবস্থা পাল্টাবে। যখন দায়িত্বশীলরাই খুবই সামান্য সুবিধার জন্য একটি গোষ্ঠিকে বিভিন্নভাবে কটাক্ষ করে কথা বলে, তখন আর কী-ই বা হওয়ার আছে? অবস্থা কীভাবে পরিবর্তন হবে?
ভারতে থাকার ব্যাপারে আকাবীরদের সিদ্ধান্তই সঠিক ছিলো মন্তব্য করে মাহমুদ মাদানী বলেন, একটি বিষয়ে আমি তরুণদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা চলছে যে, এ দেশে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়া আমাদের আকাবীরদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো। আমি এটা প্রমাণ করবো যে, কেন আমাদের এদেশে থাকার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিলো এবং কেন আমাদের এখানেই থাকা উচিত। এটা আমাদের দেশ। এ ছেড়ে আমরা কোথাও যাবো না।
প্রতিকুল অবস্থায় মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিকুল অবস্থা তো আসবেই। এখনও আছে, আগামীতেও আসবে। খুব বেশি খুশি হওয়ার দরকার নেই। যদি আমরা মুসলমান হই তবে প্রত্যেক যামানায় আমাদের পরীক্ষা হবে। কখনো খুব সহজ পরীক্ষা হবে, কখনো পরীক্ষা অনেক কঠিন হবে।
মানুষের সামনে মুসলমানদেরকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এই অপপ্রচারকে রুখতে হবে। তার জন্য সমাজের সব শ্রেণির মানুষের কাছে ইসলামের সত্যিকারের বার্তা পৌঁছাতে হবে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা এই দায়িত্ব পালন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সমাজে একতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। শান্তি ও ভালোবাসার সঙ্গে জীবনযাপন করতে হবে।
এই আধ্যাত্মিক রাহবার বলেন, মুসলমানদের নিয়ে দেশের ভেতরের অপশক্তিরা অপপ্রচার চালাচ্ছে। মানুষের সামনে মুসলমানদেরকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এই অপপ্রচারকে রুখতে হবে। তার জন্য সমাজের সব শ্রেণির মানুষের কাছে ইসলামের সত্যিকারের বার্তা পৌঁছাতে হবে। সমাজে একতা এবং ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে হবে।
এদিকে সভার প্রথম অধিবেশনে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করা হয়। সেসবের মধ্যে ছিলো—ভারতীয় মুসলমানদের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠদের চরম ঘৃণা ও বিদ্বেষ, ভারতে ইসলামোফোবিয়ার আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি, ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যা, বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংকট, ইসলামী মাদ্রাসার বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা, স্কুলে মুসলিম শিশুদের উপর অ-ইসলামী ও হিন্দু সংস্কৃতি চাপানোর চেষ্টার মতো বিষয়সহ চলমান ইস্যুগুলো উঠে আসে। এসব সংকট কীভাবে মোকাবেলা করা যায় সে ব্যাপারেও আলোকপাত করেন বক্তাগণ।
সভায় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের উপ-সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ সালমান বিজনুরী ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি ইসরাইলি সরকারের অত্যাচারের তীব্র নিন্দা জানান। মুফতি সায়্যিদ মুহাম্মদ সালমান মনসুরপুরী শিশুদের আকীদা রক্ষায় ধর্মীয় মক্তবের গুরুত্ব তুলে ধরেন।