ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ ● আসমানী ধর্মের অনুসারী বলে পরিচিত আহলে কিতাব ইয়াহুদ ও নাসারাদের নৈতিক ও ধর্মীয় বিকৃতি ছিল আরো ভয়াবহ। তওরাত ও ইঞ্জিলের ধারকবাহক বলে নিজেদের পরিচিতি দিলেও এরা নিজের হাতে এই আসমানী কিতাবসমূহের মারাত্মকভাবে পরিবর্তন পরিবর্ধন করে। ফলে এর তাওহীদী একত্মবাদের মূল রূপটিই হারিয়ে যায়। জাগতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থে তারা ধর্মের ব্যবহার করা শুরু করে।
তাওরাত ও ইঞ্জিলের মূল প্রাণ ও জীবনবোধের স্থলে নানা রঙে নানাভাবে তারা পৌত্তলিকতার অনুপ্রবেশ ঘটায়। নিজের প্রবৃত্তির চাহিদা অনুসারে হালাল হারামের ব্যখ্যা দেয়। ইচ্ছা অনুসারে হারামকে হালাল আবার কোথাও বা হালালকে হারাম বলতে থাকে। সব আসমানী ধর্মে অবৈধ লেনদেন সুদকে তারা কেবল হালাল ও বৈধই করেনি অধিকন্তু সমাজে এর প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দেয়। সবলের বেলায় এক আইন আর দুর্বলের ক্ষেত্রে অন্য আইন প্রয়োগ করে। ইনসাফ ও ন্যায় ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে ফেলে। গোটা ধর্ম ও নৈতিকতাকেই তারা খেল তামাশার বস্তুতে রূপান্তরিত করে।
ইয়াহুদী ধর্ম হিয়ে পড়ে কতগুলো নিষ্প্রাণ রীতি ও কিংবদন্তীর সমষ্টি। মূর্তিপুজার প্রতি ছিল এরা আকৃষ্ট। তাই আল্লাহর মহান কুদরত দর্শনের পরও, ফেরআউনের ধ্বংসলীলা প্রত্যক্ষ করার পরও, এরা গোবৎস পূজা শুরু করে। পরে ব্যবিলনের নির্বাসন ও কয়দী জীবনযাপনের সময় স্থানীয়দের প্রভাবে বহু শিরকী ও পৌত্তলিকতার ধারণা তাদের মাঝে অনুপ্রবেশ করে।
ইয়াহুদীদের অন্যতম ধর্মগ্রন্থ তালমূদ থেকেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তালমূদে তো আল্লাহর প্রতি ধৃষ্টতা, কটূবাক্য, ধর্মীয় মূলনীতি ও সত্যের প্রতি মশকরার এমন সব নিদর্শন রয়েছে যা দ্বারা খ্রিষ্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দির ইয়াহুদী সমাজের চেতনা ও উপলব্ধির অধঃপতন এবং নৈতিক ও ধর্মীয় রুচি বিকৃতির পরিমাপ করা যায়।
খ্রিষ্ট ধর্মতো শুরু থেকেই বিকৃতি, মনগড়া ব্যখ্যা বিশ্লেষণ এবং রোমকদের প্রভাবে পৌত্তলিকতার শিকারে পরিণত হয়ে পড়েছিল। এমনকি ক্রমে পৌত্তলিকতার সবকিছুই খ্রিষ্ট ধর্মের নামে চালু হয়ে পড়ে। এক আল্লাহ তিনটি মৌলিক বস্তুর সংমিশ্রণ। চতুর্থ শতাব্দির শেষ দিকে খ্রিষ্টান বিশ্বের চিন্তা ও মননে এই বিশ্লেষণের অনুপ্রবেশ ঘটে। এমনকি সূর্য দেবতার প্রাচীন উৎসব যীশু খ্রিষ্টের জন্মদিনের উৎসব হিসেবে পরিণত হয়।
এরা বিভিন্ন ফেরকায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। যীশুর পবিত্র সত্তা কি ঐশ্বরিক না পার্থিব এ নিয়ে বিতর্ককে ঘিরে শিক্ষায়তন, গির্জা, এমনকি পরিবারে পরিবারে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। একে অপরকে অবিশ্বাসী বলে অভিহিত করতে মত্ত হয়ে ওঠে, যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তাদের দেখে মনে হয় এরা বুঝি দুটো ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় জাতি গোষ্ঠীর মানুষ।
ইংরেজ লেখক মিংসেল লিখেন, গির্জার পাদ্রীরা ধর্মকে শতধা বিভক্ত করে ফেলেছিল। এদের প্রতিহিংসা বিদ্বেষের দরুণ প্রেম, প্রীতি সদ্ভাব সততা সব উধাও হয়ে গিয়েছিল। আসল ধর্ম ছেড়ে স্বীয় মতবাদ নিয়ে সর্বদা কলহে লিপ্ত থাকতো এরা।
তিনি আরো লিখেন, পশ্চিমাংশের কেন্দ্রীয় গির্জার বিশপের পদ নিয়ে ওমীসাস এবং আবসিসীনা এই দুই ধর্মগুরুর যুদ্ধে ওমীসাস জয়ী হলে আবসিসীনামের ১৩৭ জন শিষ্যকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়।
প্রধান পুরোহিত সেন্টপল প্রতিদ্বন্দ্বী খ্রিষ্টান ধর্মযাজক কি অরেষ্টমকে রাস্তায় পেয়ে পাঁচশত পাদ্রীর দল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং পাথর মেরে তাকে রক্তাক্ত করে ফেলে। ৬৫০০০ হাজারের মতো লোক পাদ্রীদের পাদ্রীদের পরষ্পরের দ্বন্দ্বের বলি হিসেবে নির্বাসিত হতে বাধ্য হয়।
জনৈক ঐতিহাসিক গবেষকের ভাষায় ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যে সব নবী-রাসূলের প্রতি এই সব ধর্মের সম্পৃক্ততার কথা বলা হয় তারা যদি এদের অবস্থা দেখতেন তবে তারা তাদের রেখে যাওয়া ধর্মকে চিনতে পারতেন না এবং এই সব ধর্মের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতেও প্রস্তুত হতেন না।
হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ লিখিত জীবনীগ্রন্থ ’খোদার পরে শ্রেষ্ঠ যিনি’ এর একটি অংশ