ঈদুল আযহা : বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি

ঈদুল আযহা : বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক : পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে রাজধানীতে; কিছুটা বাড়তি দামেই সেই টিকেট দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কিনেছে মানুষ। বাস মালিকরা রোববার থেকে ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরুর ঘোষণা দিলেও নিরাপদ সড়কের দাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে দুই দিন পিছিয়ে তা শুরু হয়  মঙ্গলবার সকালে। সকালে গাবতলী, কল্যাণপুর ও টেকনিক্যাল মোড়ে বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে টিকেটপ্রত্যাশীদের ভিড় দেখা যায়। পরিবহন সংস্থাগুলো ১৬ থেকে ২১ অগাস্টের অগ্রিম টিকেট বিক্রি করলেও ২০ তারিখের টিকেটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে কাউন্টার ব্যবস্থাপকরা জানান। আগামী ২২ আগস্ট ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ধরে এবার ২১ থেকে ২৩ অগাস্ট ঈদের ছুটি ঠিক করেছে সরকার। তবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এই ছুটিতে একদিন হেরফের হতে পারে। ঢাকা থেকে যারা গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যান, তাদের একটি বড় অংশ ঈদের ছুটি শুরুর আগে শেষ কর্মদিবসের অফিস করে রাজধানী ছাড়েন। এ কারণেই ২০ তারিখের টিকেটের চাহিদা বেশি বলে কাউন্টার ব্যবস্থাপকরা জানান।

শ্যামলী পরিবহনের কল্যাণপুর কাউন্টারের মাস্টার কিশোর কুমার রায় জানান, গাইবান্ধা রুটে ২০ অগাস্টের সকালের দিকের কিছু টিকেট থাকলেও বিকালের সব বাসের টিকেট সকাল ১০টার মধ্যেই শেষ। বিভিন্ন কাউন্টারে এলাকা ভাগ করে দেওয়ায় টিকেট নিয়ে অত বেশি ঝামেলা হচ্ছে না। সকালের দিকে কয়েক ঘণ্টা ভিড় বেশি ছিল; পরে কমে আসছে। বিভিন্ন কাউন্টার ঘুরে দেখা যায়, অগ্রিম টিকেটের দাম স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কিছুটা বেশি রাখা হলেও ওই দামেই তা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা। ঈদের সময় রাস্তার অবস্থা কেমন থাকে- তা নিয়েও শঙ্কার কথা বললেন অনেকে।

সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শ্যামলীর কল্যাণপুর কাউন্টারে অপেক্ষা করে সোয়া ১০টার দিকে নওগাঁর চারটি টিকেট পান সেকান্দার আলী। মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এই কর্মচারী তার চাহিদা অনুযায়ী ২০ অগাস্টের টিকেটই পেয়েছেন, তবে সেজন্য অন্য সময়ের চেয়ে ১০০ টাকা বেশি গুণতে হয়েছে তাকে। সেকান্দার বলেন,একটু বেশি ভাড়া হলেও টিকেট পেয়েছি, এটাই অনেক বড় ব্যাপার। অপেক্ষা করতে হয়েছে দেড় ঘণ্টার মত। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে ঈদ করতে যাব। শ্যামলী পরিবহনের কল্যাণপুর বড় কাউন্টার থেকে নওগাঁ, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর; শ্যামলী হল কাউন্টার থেকে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও বালিয়াডাঙ্গী; আসাদ গেইট কাউন্টার থেকে সৈয়দপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, ভুড়ুঙ্গামারী এবং মোহনা পাম্প কাউন্টার থেকে পাবনার অগ্রিম টিকেট দেওয়া হচ্ছে।

উত্তরবঙ্গের প্রায় সব কটি জেলার নন-এসির বাসের অগ্রিম টিকেট গাবতলীর নিজস্ব ডিপোতে বিক্রি করছে হানিফ এন্টারপ্রাইজ; এসি বাসের অগ্রিম টিকেট দেওয়া হচ্ছে কল্যাণপুর কাউন্টার থেকে। হানিফ এন্টারপ্রাইজের গাবতলী ডিপোতে সকাল ৬টা থেকে অপেক্ষা করে সাড়ে ৯টায় টিকেট পান দিনাজপুরের যাত্রী তানভীর হোসেন। ১৯ তারিখের টিকেটে অন্য সময়ের চেয়ে ৭০ টাকা বেশি দিতে হয়েছে বলে জানান তিনি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্টার আইটির এই কর্মী বলেন,ভাড়া একটু বেশি নিচ্ছে। তবে ঈদের সময়তোৃ লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়, এটা বিরক্তিকর। জয়পুরহাটের যাত্রী মোহাম্মদ মিলনের ভাগ্য তানভীরের চেয়ে কিছুটা ভালো। সকাল ৮টায় এসে সাড়ে ৯টায় তিনি ২১ তারিখের তিনটি টিকেট পেয়েছেন।

মিলন বলেন, সবার সঙ্গে বাড়িতে ঈদ করতে যাব। আরও দুই বন্ধুসহ দিনাজপুর যাচ্ছি এবার। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট পেতে দেরি হওয়ায় বিভিন্ন অভিযোগ করলেন ঠাকুরগাঁওয়ের যাত্রী শাহীন আলম। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, আগাচ্ছে না। মহিলাদের লাইনে লোক নাই। কেউ কেউ তাদের দিয়ে টিকেট কাটাচ্ছে। একজন মহিলাকে দেখলাম, তিনবার টিকেট কিনে নিয়ে গেল। কল্যাণপুরে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কর্মী একেএম রইসুল আলম সবুজ বলেন, তারা ১৬ থেকে ২১ আগস্টের অগ্রিম টিকেট দিচ্ছেন। বিআরটিএ যে ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেটাই আমরা এখন নিচ্ছি। অন্য সময় প্রতিযোগিতা থাকে, ফিরতি ট্রিপেও যাত্রী পাওয়া যায়, তাই দাম কিছুটা কম রাখা হয়। এখন নির্ধারিত হাতে ভাড়া নিচ্ছি বলে পাবলিকের কাছে বেশি মনে হচ্ছে। ঈদযাত্রার সময় মহাসড়কের পরিস্থিতি কেমন থাকবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ পায় সবুজের কথায়। তিনি বলেন, সাধারণত কোরবানির সময়ে গরুর হাট ও পশুবাহী যানবাহনের কারণে রাস্তায় যানজট থাকে। এবারও তেমন আশঙ্কা আছে। তবে প্রশাসন উদ্যোগ নিলে সেটা সামাল দিতে পারব।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *