ঊর্ধ্বমুখী চাল বাজার
নজরদারি বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখুন
চাল নিত্যপণ্য। বাঙালি চাল না খেয়ে থাকতে পারে না। চাল রান্নার গন্ধেও বাঙালি বাঁচতে পারে। এই চাল বন্যা বা যে কোনো কারণে বেড়ে গেলে এই বাঙালিরই টেনশনের কোনো অন্ত থাকে না। আমাদের লালসবুজের এই দেশ নাদীমাতৃক। বন্যা, বান-তুফান আর ঝড়বৃষ্টি নিয়েই আমাদের বসবাস। প্রাকৃতিক কারণে যদিও নিজেদের আরও বেশি ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছি বার বার। এ থেকে আমাদের পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বার করতে না পারলে দেশের মানুষকে টেনশনমুক্ত রাখা কঠিন।
বিশেষত করোনা ভাইরাস, বন্যায় মানুষের ত্রাহী ত্রাহী অবস্থা। এ মুহূর্তে নিত্যপণ্যের দাম নাগালের ভেতরে রাখতে পারলে দেশের মানুষ একটু বাঁচে। আমরা জানি, বোরোর ভালো ফলনের পর খাদ্যশস্যের প্রধান উপকরণ চালের দাম কমবার কথা। কিন্তু মানুষের ভাবনা আর মজুদদারের ভাবনায় রয়েছে দারুণ ফারাক। বাজারে কারসাজি করা মোটামুটি তাদের মজ্জাগত স্বভাবে পরিণত হয়েছে। তারা যে ব্যবস্থা কায়েম করেছে, তাকে বলা যায় ‘ফড়িয়াতন্ত্র’। ফড়িয়াতন্ত্র সুযোগ পেলেই জেঁকে বসে মানুষের মাথার উপর। রাষ্ট্রীয় নজরদারি তাই খুব জরুরি। এ কারণেই বোরোর মৌসুম শেষ হওয়ার পর ধান-চালের আকাল না থাকা সত্ত্বেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। এখনই লাগাম টানতে হবে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) বলছে, দেশে চালের অভাব নেই। নভেম্বর শেষে চাহিদা মিটিয়েও সাড়ে ৫৫ লাখ মেট্রিক টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। তবে ব্যবসায়ীদের যুক্তিটা অন্য রকম। তাঁরা বলছেন, ঈদ উপলক্ষে বেশ কয়েক দিন পরিবহন ও পাইকারি বাজার বন্ধ ছিল। বন্যার সুযোগ নিয়ে কৃষক ও আড়তদার পর্যায়েও ধান মজুদ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এসব কারণেই চালের দাম বাড়ছে। চালকল মালিকরাও বলছেন, বেশি দামের আশায় কৃষক ও আড়তদাররা ধান মজুদ করে রেখেছেন। বন্যার কারণে অনেক হাটে ধান কম আসছে। এ জন্য ধানের দাম বাড়ছে আর এর প্রভাব পড়েছে চালের দামে। চালকল মালিকরা বলছেন, মিল পর্যায়ে ঈদের সপ্তাহখানেক আগে ৫০ কেজির চালের বস্তার দাম ছিল দুই হাজার ৪৭৫ টাকা, ঈদের সময় হয় দুই হাজার ৫০০ টাকা। ঈদের পর দুই হাজার ৫২৫ টাকায় উঠেছে। দাম আরো দু-এক সপ্তাহ বাড়বে।
কার্যত বাজারে সরকারের যথাযথ মনোযোগ আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। করোনা সংক্রমণ, বন্যা প্রভৃতি মিলিয়ে চরম বিপন্নতার সময় পার করছে বাংলাদেশ। আমরা মনে করি, এই সময়ে আড়তদার ও চালকল মালিকদের যেমন যৌক্তিক আচরণ করা উচিত, তেমনি সরকারকেও বাজারে সক্রিয় থাকতে নতুনভাবে মাঠে নামা উচিত।