আল আমীন মুহাম্মাদ ● সারাবিশ্বের ক্যাথলিক খৃষ্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস কিছুদিন আগে বাংলাদেশে সফর করে গেছেন। এ বিষয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানা মহলে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলেছে বেশ কয়েকদিন যাবৎ। এর আগে তিনি মিয়ানমার সফর শেষে ঢাকায় পা রাখেন। যদিও মিয়ানমার সফরটি ছিল নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে কিন্তু সেখানে তিনি রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ পর্যন্ত করেননি। এর কারণে বিশ্ব মানবতাবাদী সংস্থাগুলো পোপের শান্তিনীতিতে প্রশ্ন তুলেছে।
একটা পরিসংখ্যান জেনে নেওয়া যাক। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৭৩০ কোটি মানুষের বসবাস। তন্মধ্যে ২৩০ কোটি লোক খৃষ্টান ধর্মালম্বী। এদের মধ্যে তিনটা ভাগ রয়েছে। রোমান ক্যাথলিক, প্রোটেস্ট্যান্ট আর অর্থোডক্স । প্রথম দলের সংখ্যা ১৩০ কোটি। ৬৭ কোটি ৫০ লক্ষ হলো প্রোটেস্ট্যান্ট আর অর্থোডক্সদের সংখ্যা ৩ কোটি ৩৭ লক্ষ (বাকি বিচ্ছিন্নভাবে অন্যরা)। তাঁরা যদিও কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে কিন্তু যখন তাঁদের ধর্মীয় সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে কোন আঘাত আসে তখন তাঁরা মতপথের দ্বন্দ্ব ভুলে সেই আঘাত মোকাবেলা করার জন্য একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে খৃষ্টানদের মাঝে যদিও ব্যাপক অনৈক্য দেখা দিয়েছিল কিন্তু পরে তাঁরা এই অবস্থা সামাল দিয়ে বেশ শক্তপোক্তভাবেই ঐক্যবদ্ধ হয়। সে ঐক্য আজ পর্যন্ত বিরাজমান।
এবার মুসলিম ধর্মালম্বীদের দিকে চোখ ফিরানো যাক। খৃস্টানদের পরেই জনসংখ্যার দিক দিয়ে মুসলিমরা দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বে বর্তমানে মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ১৮০ কোটি। তাঁদের মাঝেও বেশ কয়েকটা প্রাথমিক ভাগ রয়েছে। সুন্নি, শিয়া, আহমদিয়া এবং সুফিবাদী নামে তাঁরা পরিচিত। এদের মধ্য থেকে শাখাগত আরো অনেক শ্রেণি রয়েছে। খৃস্টানদের মাঝে সুসংঘবদ্ধ যেমন ঐক্য রয়েছে তেমনটা মুসলিমদের মাঝে কিঞ্চিৎ পরিমাণেও নেই। একদল অপর দলের দোষ চর্চা, মন্দ বলতে সচরাচর পছন্দ করে। এমনকি কেউ কেউ ত মনে করে, দোষ চর্চা করাটাও পুণ্যের কাজ। এখন যদি বিধর্মীদের কর্তৃক ইসলাম ধর্মের উপর কোন আঘাত আসে তাহলে সেই আঘাত মোকাবেলা করবে তো দূরের কথা এই স্পর্শকাতর বিষয়ে পর্যন্ত তাঁরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আর এই বিভাজনে নেতৃত্ব দেন নামধারী ইসলামী ধর্মযাজকরা।
উপরোল্লিখিত উভয় ধর্মের সমীকরণ মিলালে দেখা যায়, তাদের তুলনায় ঐক্যের দিক দিয়ে আমরা মুসলিমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। অথচ প্রিয় নবী বলে গিয়েছেন উম্মতের ঐকমত্যের কথা। আমার সবচেয়ে বেশী কষ্ট লাগে, বাংলাদেশের সম্মানিত আলেমদের দিকে তাকালে। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের মত নিয়ে স্থির হয়ে বসে আছেন। অন্যের মত পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারছেন না। একে অপরকে মুহূর্তেই নাস্তিক, মুরতাদ ফাতওয়া দিয়ে দিচ্ছেন। এর কারণে অন্য শ্রেণির মাঝে সম্প্রতি বজায় রাখবে তো দূরের কথা নিজেরা নিজেদের মতে ও কোন্দলের ধাঁধাঁয় পড়ে আছে যা মোটেই কাম্য নয়।
মুসলিম শ্রেণির প্রায় প্রত্যেকেই মানে, আল্লাহ এক, নবী সত্য। নামাজ রোজাও সবাই করে। হয়ত অনেকে দাবি করবেন, তাঁদের আকিদায় সমস্যা আছে। আমি বলব, আরে ভাই আকিদার পাল্লা মাপার অধিকার তোমাকে কে দিয়েছে?! মরার পর মহান আল্লাহ দেখবেন কার আকিদা কতটুকু সত্য (হ্যাঁ, তাদের আকিদা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হতে পারে তবে তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ নয়)। এখন যে ঐক্যের কারণে মুসলিমদের অবস্থা ধ্বংসের পথে যাচ্ছে। এটা দেখবে কে? বিশ্বে বিধর্মীদের হাতে মুসলিমরা মার খাচ্ছে এই দুঃখ কে করবে? আমরা কি পারি না সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইসলামের শান্তির বাণী বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে দিতে? আমরা কি পারি না প্রিয় নবীর আদর্শকে বিজয়ী করতে? প্রশ্নগুলো সবার বিবেকে ছুড়ে দিলাম। দয়া করে ঠা-া মাথায় চিন্তা করে দেখবেন।
মাসিক পাথেয়, ডিসেম্বর ২০১৭