একযোগে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরা

একযোগে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করে ঘোষিত “প্রত্যয় স্কিম” বাতিল না হওয়ায় আগামীকাল সোমবার (১ জুলাই) থেকে একযোগে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন ৩৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

রবিবার (৩০ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলাভবন ফটকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া।

এর আগে একই দাবিতে সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাাওয়ার ঘোষণা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

এ সময় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা মোট তিনটি দাবি জানান। এগুলো হলো প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি শুধু প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন বাতিল।

লিখিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, পেনশন সংক্রান্ত “বৈষম্যমূলক” প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন তিন মাসেরও অধিক সময় ধরে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে। ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিবৃতি প্রদান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, প্রতীকী কর্মবিরতি, স্মারকলিপি প্রদান এবং অবস্থান কর্মসূচির মতো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়।

তিনি বলেন, “এ সময়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গত ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালিত হয় এবং আজ ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে।”

নিজামুল হক ভূঁইয়া আরও বলেন, “আমরা আশা করি সরকার অনতিবিলম্বে এই যৌক্তিক দাবি মেনে নেবে, যাতে আমরা ক্লাসে ফিরে যেতে পারি। অন্যথায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ১ জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করছি। এতদিনেও কেন আমাদের আলোচনার জন্য ডাকা হয়নি। আমাদের যে প্রত্যয় স্কিম অফার করা হয়েছে, তা চরম অপরিপক্ব হাতের কাজ। তারা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করছে।”

তিনি বলেন, “যারা প্রত্যয় স্কিমের প্রবর্তক, তাদের শিক্ষকদের সামনে নিয়ে আসা হোক। আমরা আমাদের যুক্তি দেব। তারা তাদের যুক্তি দেবে। দেশে এত দুর্নীতি হয়েছে, সেসব কি শিক্ষকরা করেছেন? তাহলে কেন আমাদের সুবিধা বাতিল করা হলো?”

সোমবার থেকে ঢাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধসোমবার থেকে ঢাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ
ফেডারেশনের সভাপতি আরও বলেন, “আমরা নিজেদের জন্য এই আন্দোলন করছি না। বরং আগামী প্রজন্মের জন্য এবং আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য এই আন্দোলন করছি।”

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোতাহের হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মমিন উদ্দিনসহ সমিতির সদস্যরা।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের দাবি হলো তিনটি। এগুলো হলো প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি শুধু প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন বাতিল। দাবি আদায়ে আজ পূর্ণদিবস কর্মবিরতির পাশাপাশি অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশও করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।

গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই এর বিরুদ্ধে সরব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। কিছু কর্মসূচি পালনের পর ৪ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা৷ এরপরও দাবির বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না দেখে ৪ জুন ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গত সপ্তাহে টানা তিন দিন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। প্রত্যয় স্কিমের বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটেও শিক্ষকনেতারা জোরালো বক্তব্য দেন৷

এত দিন কর্মবিরতি পালিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরীক্ষাগুলো এর আওতার বাইরে ছিল। কিন্তু কাল থেকে যে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হচ্ছে, সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষাসহ দাপ্তরিক সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন শিক্ষকেরা।

সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন

Related Articles