‘একরোখা’ মোদি কি এবার জোটের চাপে বিনয়ী হবেন?

‘একরোখা’ মোদি কি এবার জোটের চাপে বিনয়ী হবেন?

ভারতের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জোট সরকারের বিষয়টি নতুন নয়। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশটিতে এক ডজন দল নিয়েও বৃহত্তম জোট সরকার গঠনের একাধিক নজির রয়েছে।

১৯৮৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ছয়টি লোকসভা নির্বাচনে কোনও দলই এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে প্রতিবারই জোট সরকার গঠন করতে হয়েছে।

এর মধ্যে কয়েকটি জোটে বিশেষ বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। যেমন ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে অন্তত আটটি সরকার গঠিত হয়। কিন্তু এর বেশিরভাগই দ্রুত ভেঙে যায়।

কিন্তু ভারতের কিছু উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সংস্কার এবং সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধির হার কংগ্রেস ও ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) উভয়ের নেতৃত্বে গঠিত জোট সরকারের আমলেই এসেছে।

২০১৪ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সাবেক ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স তথা ইউপিএ জোটকে উৎখাত করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। এরপর ২০১৯ সালে আগের চেয়ে আসন বাড়িয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গড়ে দলটি।

অর্থাৎ, গত এক দশকে আর জোট সরকার পায়নি ভারত। ১০ বছর পর ২০২৪-এ এসে আবারও জোট সরকার পেল দেশটি। এবারের লোকসভা নির্বাচনে কোনও দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।

বিরোধী জোটের পুনরুর্থানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে বিজেপিও। তবে সবচেয়ে বেশি আসন (২৪০টি) নিয়ে সবচেয়ে বড় দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে দলটি।

ফলে এবার সরকার গড়তে সমমনা একাধিক দল নিয়ে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স তথা এনডিএ জোটের শরিকদের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে বিজেপিকে। সেই জোটের নেতা হিসেবে রোববার (৯ জুন) তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিলেন বিজেপির নরেন্দ্র মোদি।

শপথগ্রহণের আগে মন্ত্রিসভার সব সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদি। সেই বৈঠকে নতুন সদস্যদের বেশ কিছু নির্দেশনাও দেন তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নির্দেশনা ছিল এমন, ‘সব সময় বিনয়ের সঙ্গে কাজ করবেন। কারণ, সাধারণ মানুষ বিনয়ীদেরই পছন্দ করেন ও ভালোবাসেন। স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে কখনও আপস করবেন না। আমাদের কাছ মানুষের অনেক আশা। সেই আশা প্রত্যেককেই পূরণ করতে হবে।’

প্রশ্ন হচ্ছে, যেই মোদি গুজরাট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সবসময় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দেশ শাসন করেছেন এবং এক দশক ধরে রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছেন, সেই তিনি কি জোট সরকার চালাতে পারবেন?

সরকার ও প্রশাসন পরিচালনায় তিনি কি তার আধিপত্যবাদী মনোভাব ত্যাগ করতে পারবেন এবং ভিন্ন ভিন্ন আঞ্চলিক মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে পথ চলতে পারবেন? দল ও বন্ধুপ্রতীম গণমাধ্যম তাকে ‘ধর্মীয় নেতা’র মতো ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তুলেছে, সেখান থেকে বের হয়ে আরও সংবেদনশীল এবং আরও বিনয়ী হয়ে উঠতে পারবেন?

অনেকে বিশ্বাস করেন যে, মোদির পক্ষে জোট সরকারকে ভালোভাবে এগিয়ে নেয়ার সম্ভাবনা কম। মোদি জোটের যে দুটি শরিকের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল তারা হলো দুটি আঞ্চলিক দল। এর একটি জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) এবং অপরটি তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি)।

দল দুটির সম্মিলিতভাবে লোকসভায় ২৮টি আসন রয়েছে। এ দুটি দলের নেতাই (নীতীশ কুমার ও এন চন্দ্রবাবু নাইডু) প্রবীণ ও চৌকস। বিজেপির সঙ্গে তাদের আগেও বনিবনা হয়নি।

পূর্বেও তারা বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সরকারগুলোতে কাজ করেছেন এবং তারপর ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে বিশেষ করে মোদির কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে মতপার্থক্যের কারণে পদত্যাগ করেন।
সংক্ষেপে অনুদীত

Related Articles