এনআইডির দায়িত্ব এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের

এনআইডির দায়িত্ব এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা সেবা বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে। বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) “জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিল, ২০২৩” সংসদে পাস হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিলটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাইবাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে কণ্ঠ বিলটি পাস হয়।

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, এনআইডি নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা সেবা বিভাগের অধীনে হবে।

জন্মের পরপরই যে কোনো নাগরিকের জন্ম সনদ বা একটি অনন্য নম্বর পাওয়ার অধিকার থাকবে, যা অপরিবর্তিত থাকবে।

নির্বাচন কমিশন ১৮ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের নিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করবে।

বিলে অপরাধ ও শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, “কোনো নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির লক্ষ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা তথ্য দিলে বা তথ্য গোপন করলে তিনি এ আইনের অধীন অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন। এ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।”

এছাড়া “কোনো নাগরিক জ্ঞাতসারে একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র নিলে তিনি এ আইনের অধীন অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং এ অপরাধের জন্য এক বছর, অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।”

বিলে তথ্য-উপাত্ত বিকৃত বা বিনষ্ট সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে বলা হয়েছে, “সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মচারী অথবা এ আইন দ্বারা বা এর অধীন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনরত কোনো ব্যক্তি ইচ্ছা করে নিবন্ধকের কাছে সংরক্ষিত জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কোনো তথ্য-উপাত্ত বিকৃত বা বিনষ্ট করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং এ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।”

কোনো ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করলে বা জাল পরিচয়পত্র বহন করলে একই শাস্তি পাবেন।

কোনো ব্যক্তি যদি জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতিতে সহায়তা করেন বা এই জাতীয় পরিচয়পত্র বহনে প্ররোচিত করেন। তবে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন। তিনি অনধিক সাত বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোনো ব্যক্তি যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া অন্য কোনো নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র ধারণ করলে বা বহন করলে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে গণ্য হবে। তাকে অনধিক এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা ২০,০০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট যে কোনো কর্মচারী বা জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন প্রক্রিয়া পরিচালনা, জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রস্তুতি, বিতরণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত এই আইনের অধীনে বা তার অধীনে যে কোন দায়িত্ব পালন করছেন, যুক্তিসঙ্গত কারণে।

এছাড়া দায়িত্বে অবহেলা তার অযোগ্যতা ও অসদাচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে।

বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলীয় সদস্যরা অভিযোগ করেন সরকারের এই সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে। কারণ পুলিশ এখনও জনবান্ধব হতে পারেনি। পুলিশের সমালোচনা করতে গিয়ে বিরোধী দলীয় সদস্যরা সম্প্রতি পরকীয়া প্রেমের জের ধরে পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতে ছাত্রলীগ নেতাদের নির্যাতন এবং আদালত চত্ত্বরে আইনজীবীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনাও উল্লেখ করেন।

এসব সমালোচনার জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‌“প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় যেই অপরাধ করুক শাস্তি কিন্তু পেতে হয়। আপনারা যে পুলিশ অফিসারের কথা বলেছেন তিনিও আইনের ঊর্ধ্বে নয়। ইমিডিয়েট ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন তার শাস্তির ব্যবস্থাটা… যেহেতু মামলা হয়নি। এখনও কেউ মামলা করেনি। আমাদের তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী তার শাস্তির ব্যবস্থা অবশ্যই হবে।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরাম সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, “এনআইডি নিয়ে মানুষের অনেক ভোগান্তি রয়েছে। এটা নিয়ে মানুষের অনেক সমস্যা আছে। এটা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে গেলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে। কারণ এখনও পুলিশ প্রকৃতপক্ষে জনগণের বন্ধু হতে পারেনি।”

জন্মের পর নাগরিকত্ব পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়ে মুকাব্বির বলেন, “জন্ম নিবন্ধন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করে না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এটি করেছে।”

“তাহলে কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করা যায়। এ জন্য জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ বেশ কিছু কর্তৃপক্ষকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় আনতে হবে।”

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, “ইসির কাছে থাকা নাগরিকের তথ্য যাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। কিন্তু ইসির সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি। ভোটার তালিকা করার স্বাধীনতা ইসির রয়েছে। নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল হবে। এর আগে এই আইনটি কার্যকর হলে ভোটার তালিকা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন।”

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিএনপিপন্থি আইনজীবী ও পুলিশের সংঘর্ষের কথা তুলে ধরে জাতীয় পার্টির সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “আইনজীবীদের পেটাতে দেখা গেছে। তাদের অপরাধ জানা যায়নি। তারা সরকারবিরোধী হতে পারেন। আইনজীবীদের গায়ে হাত তোলার বিষয়ে সরকারের সতর্ক থাকা উচিত।”

তিনি বলেন, “পুলিশকে ওই কৌশলটা থেকে বের করতে হবে। কীভাবে চাপ না দিয়েও পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়, পরিস্থিতি শান্ত করা যায়।”

আইনজীবীর গায়ে হাত তোলা গর্হিত কাজ এমন মন্তব্য করে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “পুলিশকে একসময় আইনজীবীর মাধ্যমে ন্যায়বিচার চাইতে হবে, তাই তাদের সম্মান জানানো উচিত।”

ছাত্রলীগ নেতাদের ওপর নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “ঢাকায় যেসব পুলিশ কর্মকর্তার পদায়ন করা হয় তাদের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেওয়া হয়। অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে যারা অনুগত তাদের ঢাকায় পদায়ন করা হয়। তারপরেও এমন কর্মকর্তা ঢাকায় কীভাবে আসে? হিন্দি সিনেমার মতো কোনো এক কর্মকর্তা তার অবৈধ প্রেমের কারণে ছাত্রলীগের নেতাদের থানা পুলিশের কন্ট্রোল রুমে নিয়ে সাত-আটজনে মিলে অমানুষিকভাবে নির্যাতন করে। এটা সিনেমাকে হার মানিয়েছে। এটা অত্যন্ত জঘন্য ঘটনা।”

“পুলিশের হেফাজতে নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিককে নির্যাতন করে, তাও সরকার দলের সহযোগী সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নির্যাতন করে তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলার অবস্থাটা কি? আমি জানি না কেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি মামলা করে নাই। শুধু তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিলে সুবিচার হবে না। সুবিচার হবে তখন যখন ক্ষতিগ্রস্তরা মামলা করে। ফৌজদারি আইনের আওতায় এনে বিচার করে সাজার ব্যবস্থা করেন। এ ধরণের উচ্ছৃঙ্খল পুলিশ অফিসার রাষ্ট্রের বেতন নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করবে- এটা অন্তত বন্ধ করেন।”

পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য একজন “নিবন্ধক” থাকবেন। সরকার তাকে নিয়োগ দেবে। নিবন্ধক ও নিবন্ধকের কার্যালয়ের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে শুরু না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান পদ্ধতিতে নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে পারবে। সরকার গেজেট জারি করে যে তারিখ নির্ধারণ করবে সে তারিখ থেকে এই আইন কার্যকর হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *