এবছর মুসলিম বিশ্বের যেসব মনিষীদেরকে হারালাম

এবছর মুসলিম বিশ্বের যেসব মনিষীদেরকে হারালাম

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি বলেছেন, ওলামায়ে কেরাম সমস্ত নবীদের ওয়ারিশ। আর এই মর্মেই ওলামায়ে কেরাম তাদের জীবনে একাংশে নবী ও রাসূলদের জীবনের মানহাজকে নিজেদের ব্যক্তি জীবনে ধারণ করেন এবং পরবর্তী একাংশে সেই ধারণ এবং আকাবিরে আসলাফ থেকে নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত ওয়ারিশে নবী হিসেবে উম্মতের প্রতি যে হক বা দায়িত্ব রয়েছে তা অবলীলায় পূর্ণ করার প্রচেষ্টা করেন। এসব যুগশ্রেষ্ঠ মহারথির পদাচারণায় মুখরিত আমাদের এ অঙ্গন। কালের ঘূর্ণমান জীবন রেখায় আয়ুকাল ক্ষয় হয় মানুষের। মৃত্যুর মিছিলে হারিয়েছি আমরা অনেক আকাবির। ২০২৩ সালেও এ সংখ্যা কম নয়। দিন দিন যেন মুরুব্বি শূণ্য হচ্ছি।

বিশ্বব্যাপী ওলামায়ে কেরামের ইন্তেকাল যেমন আমাদের বিষণ্ন করেছে তেমনি আরো বেশি বিষণ্ন করেছে আমাদের দেশীয় দেশবরেণ্য ওলামায়ে হযরতদের ইন্তেকাল। তাদের শূণ্যতা কখনোই পূরণ হবার নয়। চলুন জেনে নেই আন্তর্জাতিক ও দেশবরেণ্য ওলামাদের থেকে কাদের আমরা হারালাম—

বাংলাদেশ

  • প্রবীণ মুহাদ্দিস মাওলানা মুহাম্মদ রফীক আহমদ

২০২৩ সালের শুরুতেই ইন্তেকাল করেন চট্টগ্রামের পটিয়া মাদরাসার (আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়া) প্রবীণ মুহাদ্দিস মাওলানা মুহাম্মদ রফীক আহমদ। ১৪ জানুয়ারি (শনিবার) ইন্তেকাল করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৮৩ বছর। মাওলানা মুহাম্মদ রফীক আহমদের বাবা ছিলেন উপমহাদেশের খ্যাতিমান আলেম পটিয়া মাদরাসার সাবেক শাইখুল হাদিস আল্লামা আল-ইমাম আহমদ (রহ.)। ১৯৭৪ সালে নানুপুর ওবাইদিয়া মাদারাসায় দাওরায়ে হাদিস শুরু করা হলে তিনি তাতে মুহাদ্দিস হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে তিনি পটিয়া মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। পটিয়া মাদরাসায় তিনি হাদিস ও তাফসির বিষয়ক পাঠদানের পাশাপাশি ছাত্রাবাস তত্তাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ সময় তিনি এই মাদরাসার তাফসির বিভাগের প্রধান ছিলেন। হাদিস, ফিকাহ, তাফসিরসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি অনেক ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনা করেন। তার কিছু রচনা ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে ব্যাপক সমাদৃত।

  • আরজাবাদ মাদরাসার প্রবীণ শিক্ষক হাফেজ আব্দুল হামিদ

পটিয়া মাদরাসার প্রবীণ মুহাদ্দিস মাওলানা মুহাম্মদ রফীক আহমদের ইন্তেকালের একদিন পর ১৫ জানুয়ারি (রোববার) ইন্তেকাল করেন রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মাদরাসার হিফজ বিভাগের প্রবীণ উস্তাদ হাফেজ আব্দুল হামিদ। ১৯৮৯ সালে বাঁশবাড়িয়া ঝনঝনিয়া ইসলামিয়া মাদরাসায় ইবতিদাইয়্যাহ জামাতে ভর্তি হন। সেখানে ২ বছর পড়ে ১৯৯০ সালে চট্টগ্রামের হামিউস সুন্নাহ মেখল মাদরাসায় ভর্তি হন। নাহবেমীর পর্যন্ত পড়ার পর পারিবারিক সমস্যার কারণে তিনি শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি টানেন। ১৯৯৮ সালে ঢাকার কাজীপাড়ায় বাইতুস সালাম হাফিজিয়া মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ৩ বছর সেখানে শিক্ষকতার পর ২০০১ সালে মোহাম্মদপুর জামিয়া রাহমানিয়ায় নিয়োগ পান। ২০০৪ সাল পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। এরপর ২০০৫ সাল থেকে নিয়ে মৃত্যু অবধি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মাদরাসায় অত্যন্ত সুনামের সাথে হেফজ বিভাগের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে গেছেন।

  • শিলালিপি গবেষক ও ভাষাবিদ মাওলানা মুহাম্মদ নুরুদ্দিন ফতেহ্পুরী

আরজাবাদ মাদরাসার প্রবীণ শিক্ষক হাফেজ আব্দুল হামিদের ইন্তেকালের দুইদিন পরে ১৭ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) ইন্তেকাল করেন শিলালিপি গবেষক ও ভাষাবিদ মাওলানা মুহাম্মদ নুরুদ্দিন ফতেহ্পুরী। মাওলানা ফতেহ্পুরী ছিলেন শিলালিপি গবেষক, আরবি-ফারসি-উর্দু ভাষার পণ্ডিত এবং ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ গ্রণয়ন কমিটির অন্যতম সম্পাদক। মাওলানা নুরুদ্দিন ফতেহ্পুরী গত শতকের আশির দশকে বিভিন্ন স্থানের অপ্রকাশিত শিলালিপির পাঠ উদ্ধার করতে আরম্ভ করেন। ২০১০ সাল থেকে তিনি ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটির শিলালিপি বিষয়ক প্রকাশিতব্য গ্রন্থের অন্যতম সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। কর্মজীবনে তিনি বড় কাটরা মাদরাসা ও খাজে দেওয়ান লেন মহিলা মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ঢাকার বড় ভাট মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

  • কুমিল্লার দয়াপুর মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা সালেম

শিলালিপি গবেষক ও ভাষাবিদ মাওলানা মুহাম্মদ নুরুদ্দিন ফতেহ্পুরীর ইন্তেকালের এক সপ্তাহ পর জানুয়ারিতেই ইন্তেকাল করেন কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী দয়াপুর মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মুহাম্মদ সালেম। মাওলানা মুহাম্মদ সালেম জামিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম মাওলানা বজলুর রহমান রহ. এর বড় ছেলে। হাদিস পড়িয়েছেন ফরিদাবাদ জামিয়ায়। একাধারে তিনি ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পপতি, সমাজসেবক, মুহাদ্দিস ও সংগঠক। নিজ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বহু মসজিদ, মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন।

  • বেফাকের সিনিয়র কর্মকর্তা মাওলানা আব্দুস সামাদ

২০২৩ সালের জানুয়ারিতেই ইন্তেকাল করেন ৬ জন আলেম। ফেব্রুয়ারির শুরুতে ইন্তেকাল করেন কওমি মাদরাসাগুলোর জাতীয় শিক্ষাবোর্ড বেফাকের তালিম তরবিয়াত বিভাগের সহকারী পরিচালক মাওলানা আব্দুস সামাদ। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন তিনি।

  • আল মারকাজুল ইসলামীর (এএমআই) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুফতি শহিদুল ইসলাম

চলতি বছর জানুয়ারি শেষ দিকে ইন্তেকাল করেন আল মারকাজুল ইসলামীর (এএমআই) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুফতি শহিদুল ইসলাম। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ডায়াবেটিস, প্রেসারসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগেছেন। তার জানাজায় ইমামতি করেন ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাসের ইমাম শায়খ আলী ওমর আল আব্বাসি।

  • মাধবপুর খরকি মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা হারুনুর রশিদ

সিলেট হবিগঞ্জের মাধবপুর ইসলামিয়া কাসেমুল উলুম খরকি মাদরাসার মুহতামিম, প্রবীণ আলেমে দ্বীন আল্লামা হারুনুর রশিদ ইন্তেকাল করেন ২১ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার)। আল্লামা হারুনুর রশিদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাদিয়াতুল কোরআনের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল ওয়াহাব ভূইয়া রহ. এর বড় জামাতা এবং আল্লামা ইউসুফ বান্নুরি রহ. এর শাগরেদ। তিনি ইসলামিয়া কাসেমুল উলুম খরকি মাদরাসার প্রায় ৫ যুগের সফলতম মুহতামিম ছিলেন।

  • হাটহাজারী মাদরাসার প্রবীণ শিক্ষক মাওলানা মুমতাজুল করিম ‘বাবা হুজুর’

বিগত কয়েক বছরে হাটহাজারী মাদরাসার প্রবীণ শিক্ষক মাওলানা মুমতাজুল করিম ‘বাবা হুজুর’-এর ইন্তেকাল নিয়ে গুজব ছড়ালেও ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ (সোমবার) মহান রবের ডাকে সাড়া দেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি দীর্ঘ ৩৯ বছর (১৯৮৪-২০২৩) প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেছেন। পাকিস্তানের বিখ্যাত মাদরাসা জামিয়া আশরাফিয়া লাহোর থেকে তাফসির ও আদব (আরবি সাহিত্য) বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ওই বছরই (১৯৬৫) বরিশালের ঐতিহ্যবাহী চরমোনাই মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে যোগ দেন এবং মুসলিম শরিফের দরস দেওয়া শুরু করেন। পরবর্তীতে ঢাকা আশরাফুল উলুম বড়কাটারা মাদরাসায় সাত বছর মুহাদ্দিস হিসেবে খেদমত করে চট্টগ্রামের পটিয়া মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে নিয়োগ পান। পটিয়া মাদরাসায় তিনি টানা সাত বছর সুনামের সঙ্গে হাদিসের দরস দেন। ১৯৮৪ সালে দেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে নিয়োগ পান। হাটহাজারী মাদরাসায় অত্যন্ত সুনাম-সুখ্যাতির সঙ্গে হাদিসের দরস দেন।

  • বেফাকের প্রধান প্রশিক্ষক মাওলানা শিব্বির আহমদ

হাটহাজারী মাদরাসার প্রবীণ শিক্ষক মাওলানা মুমতাজুল করিম ‘বাবা হুজুর’-এর ইন্তেকালের দুই দিন পরে ২৯ মার্চ (বুধবার) ইন্তেকাল করেন কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের প্রধান প্রশিক্ষক ও নোয়াখালীর প্রবীণ আলেম মাওলানা শিব্বির আহমদ ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। আল্লামা শিব্বির আহমদ নোয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম চরমুটুয়া মাদ্রাসার সদরুল মুদাররিস ছিলেন। এদেশে শিক্ষক প্রশিক্ষণকে তরান্বিত করতে আল্লামা শিব্বির আহমদের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।

  • হাটহাজারী মাদারাসার প্রধান মুফতি নূর আহমদ

২০২৩ সালের ২৭ মার্চ উম্মুল মাদারিস খ্যাত হাটহাজারী মাদরাসার প্রবীণ শিক্ষক মাওলানা মুমতাজুল করিম ‘বাবা হুজুর’-এর ইন্তেকালের পর একইমাসে ইন্তেকাল করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান মুফতি ও প্রবীণ মুহাদ্দিস আল্লামা নূর আহমদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। মুফতি নূর আহমদ দীর্ঘকাল ধরে হাটহাজারী মাদরাসার আবাসন বিষয়ক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষাবিভাগীয় প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তিনি ছিলেন আল্লামা মুফতি ফয়জুল্লাহ (রহ.)-এর বিশেষ ছাত্র ও সর্বশেষ খলিফা। হাটহাজারী মাদরাসার সাবেক পরিচালক আল্লামা শাহ হামেদ (রহ.)-এর বড় জামাতা ছিলেন তিনি।

  • জিরি মাদরাসার প্রবীণ মুহাদ্দিস মাওলানা আহমদ উল্লাহ কাসেমী

উম্মুল মাদারিস খ্যাত হাটহাজারী মাদরাসার প্রধান মুফতি ও প্রবীণ মুহাদ্দিস আল্লামা নূর আহমদের ইন্তেকালের দিনই বিদায় নেন চট্টগ্রামের আরেক ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আলজামিয়াতুল ইসলামিয়া আরাবিয়া জিরির (জিরি মাদরাসা) প্রবীণ মুহাদ্দিস ও বহু শীর্ষ আলেমের শিক্ষক মাওলানা শাহ আহমদ উল্লাহ কাসেমী। মাওলানা আহমদ উল্লাহ কাসেমী একজন সুদক্ষ শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দেশের শীর্ষ আলেম আল্লামা শাহ তৈয়ব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, আল্লামা আবদুস সালাম চাটগামী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ও জামিয়া জিরির বর্তমান শাইখুল হাদিস মুসা সন্দীপী-সহ বহু আলেম তার ছাত্র।

  • বেফাকের সাবেক মহাপরিচালক মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী

২০২৩ সালের শুরুর দিকে বেফাকের দুই দায়িত্বশীলের ইন্তেকালের পর মহান রবের ডাকে সাড়া দেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক মহাপরিচালক মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী। তার ইন্তেকাল হয় রমজান মাসে। নারায়ণগঞ্জে একটি ইফতার মাহফিলে। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। মৃত্যুর আগে তিনি খেলাফত মজলিসের আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন মাদ্রাসায় শায়খুল হাদিস ও মুহাদ্দিস পদে হাদিসের দরস দিতেন। এর পাশাপাশি মৌলভীবাজার সরকারি কলেজেও অধ্যাপনা করেন। তার বাবা মাওলানা আবদুন নূর শায়খে ইন্ধেশ্বরী ছিলেন প্রখ্যাত আলেম। কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন।

  • মাওলানা নুরুদ্দীন লাহোরী

শাইখুল হিন্দ ও মাওলানা ইয়াকুব নানুতুবী রহ.এর শাগরিদ, আল্লামা রাসূল খান হাজারাভী (রহ.)-এর ছাত্র মাওলানা নুরুদ্দীন লাহোরী ইন্তেকাল করেন। মাওলানা নুরুদ্দীন লাহোরী দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত পীড়ায় ভুগছিলেন। সোমবার (১৭ এপ্রিল) রাত ১টায় ৮০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করে মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। মৃত্যুর আগে তিনি চার ছেলে, তিন মেয়ে, আত্মীয়-স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

  • আল্লামা ফরিদপুরী রহ.-এর সর্বশেষ খলিফা মাওলানা আশরাফ আলী

ফরিদপুরের অন্যতম প্রবীণ আলেম ও আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.-এর সর্বশেষ খলিফা মাওলানা আশরাফ আলী ইন্তেকাল করেন (২১ এপ্রিল, ২৯ রমজান)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল অন্তত ১১০ বছর। মাওলানা আশরাফ আলী এলাকায় ‘বড় হুজুর’ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া আজিজিয়া বাহিরদিয়ার (বাহিরদিয়া মাদরাসা) সাবেক মুহতামিম এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জামিয়া ইসলামিয়া আসলিয়া বাহিরদিয়ার (ছোট বাহিরদিয়া মাদরাসা) প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। পারিবারিকভাবে ধর্মীয় আধ্যাত্মিকতায় তাদের বেশ সুনাম ছিল এলাকাজুড়ে।

  • ফরিদপুরের নিজামুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা জহুরুল হক

ফরিদপুরের অন্যতম প্রবীণ আলেম ও আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.-এর সর্বশেষ খলিফা মাওলানা আশরাফ আলীর ইন্তেকালের পরেই মাসেই ১০ মে (বুধবার) ইন্তেকাল করেন জেলাটি আরেক প্রসিদ্ধ আলেম মুফাসসিরে কোরআন আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া নিজামুল উলুম পুরুরা মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা জহুরুল হক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া নিজামুল উলুম পুরুরা মাদরাসার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মৃত্যুর সময় তার আনুমানিক বয়স ৯৫।

  • হাইয়াতুল উলয়ার সদস্য ও সিলেটের প্রবীণ আলেম মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী

১৭ মে (বৃহস্পতিবার) ইন্তেকাল করেন সিলেটের প্রবীণ আলেম, জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম, শায়খুল হাদিস ও প্রধান মুফতি মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী। দেশের অন্যতম প্রবীণ এই আলেম সম্মিলিত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড আল হাইয়াতুল উলয়ার সদস্য ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটির সদস্য, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সিলেট জেলার সভাপতি, সিলেটের প্রাচীন শিক্ষাবোর্ড আযাদ দ্বীনী এদারার সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, খাদিমুল কুরআন পরিষদের সভাপতি, সিলেট জেলা উলামা কমিটির চেয়ারম্যান, সিলেট জেলা ফতোয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

  • হাটহাজারীর মহাপরিচালক আল্লামা ইয়াহইয়া

২ জুন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা শাহ মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া রহ. ইন্তেকাল করেন। আল্লামা শাহ মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া রহ. বহু গুণে গুণান্বিত ছিলেন। তিনি একজন হক্কানী, তাকওয়াবান ও পরহেযগার আলেম ছিলেন। তাঁকে হারিয়ে দেশের কওমী অঙ্গনে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা পূরণ হবার নয়।

  • মুফতি ফজলুল হক

১৬ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের সর্বজনমান্য প্রবীণ আলেম আল্লামা মুফতি ফজলুল হক (রহ.)-এর ইন্তেকাল করেন। মুফতি ফজলুল হক একজন প্রাজ্ঞ মুফতি ও বিজ্ঞ আলেমেদ্বীন ছিলেন। ইলমী ও বিনয়াবনত সদাচরণ ও কথাবার্তায় তিনি সবাইকে খুব সহজেই মুগ্ধ করতে পারতেন।

  • মাওলান এতহেরামুল হক থানভী

বছরের শুরুর দিকেই ইন্তেকাল করেন হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবি রহ.-এর নাতি পাকিস্তানের প্রসিদ্ধ আলেম মাওলান এতহেরামুল হক থানবী। তার ইন্তেকাল হয় ৮ জানুয়ারি (রোববার)। মাওলানা এহতেরামুল হক থানভি মাওলানা এহতেশামুল থানভির বড় ছেলে। মাওলানা ইহতিশামুল হক থানভি হাকিমুল উম্মত খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ.-এর ভাতিজা ও ছাত্র ছিলেন। তিনি জামিয়া এহতিশামিয়্যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। কিছু দিনের জন্য পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং পিটিআই করাচির সাথে যুক্ত ছিলেন।

  • প্রফেসর হামিদুর রহমান

মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর ও ভারতের হারদুঈ হযরত এর খলীফা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক প্রফেসর হামিদুর রহমান (৮৫) ২রা নভেম্বর ইন্তেকাল করেন। ১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে কর্মজীবন শুরু করেন সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনে। পরে যোগ দেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে । যে কারণে তাঁকে প্রফেসর হযরত নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। তিনি হাফেজ্জী হুজুর এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। এর পাঁচ বছর পর তিনি খেলাফত লাভ করেন। হাফেজ্জী হুজুর এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা হারদুঈ হযরত খ্যাত মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।

বিশ্ব

  • শায়খ আবদুল্লাহ বিন উমর বানামাহ

সৌদি আরবের বিশিষ্ট ইসলামী দায়ী শায়খ আবদুল্লাহ বিন উমর বানামাহ ইন্তেকাল করেন ২৭ জানুয়ারি (শুক্রবার)। শায়খ আবদুল্লাহ বানামাহ সৌদি আরবের বিভিন্ন মসজিদ ও প্রোগ্রামে ইসলাম বিষয়ক আলোচনা করতেন। ৩০ বছর আগে দুর্ঘটনায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েও সব প্রতিবন্ধকতাকে ডিঙিয়ে ধৈর্য ও অবিচলতার প্রতীক ছিলেন তিনি। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ধর্মীয় আলোচনার মাধ্যমে জায়গা করে নেন সবার মনে।

  • ড. ইবরাহিম মুহাম্মদ আবদুল্লহ আল-খাওলি

মিশরের কায়রোতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক ও প্রবীণ আলেম ড. ইবরাহিম মুহাম্মদ আবদুল্লহ আল-খাওলি ইন্তেকাল করেন ৮ এপ্রিল (শনিবার)। ৯৩ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ড. সালামাহ দাউদ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় আজ একজন বরেণ্য আলেমকে হারিয়েছে। ইসলামী জ্ঞানের জগতে তিনি ছিলেন অনন্য ব্যক্তিত্ব। তাঁর হাতে গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজন্ম। তাঁর গভীর পাণ্ডিত্ব এ যুগে সত্যিই বিরল। রোজা অবস্থায় তিনি মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেলেন।’ ড. ইবরাহিম আল-খাওলি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তাকে আল-আজহারের প্রভাবশালী আলেমদের অন্যতম মনে করা হতো।

  • মাওলানা রাবে হাসানি নদভী

ভারতের প্রখ্যাত আলেম, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ডের প্রধান, ঐতিহ্যবাহী ইসলামী বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার মহাপরিচালক মাওলানা রাবে হাসানি নদভী ইন্তেকাল করেন ১৩ এপ্রিল, ২১ রমজান (বৃহস্পতিবার)। মাওলানা রাবে হাসানি নদভী প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদদের একজন। তিনি সামাজিক জীবনে ইসলামী অনুসাশনের বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। তিনি বলতেন, বর্তমানে মানুষ নামাজ রোজার মধ্যেই ইসলামকে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে, এবং ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে ইসলামকে উপেক্ষা করে চলে। তিনি বিয়েতে যৌতুকের ঘোর বিরোধী ছিলেন। এর বিপরীতে বাবার সম্পদে মেয়েদের অধিকার নিশ্চিতের প্রতি জোর দিতেন। ১৯৯৩ সালে তিনি দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান। ২০০২ সালের জুন মাসে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সাবেক সভাপতি কাজী মুজাহিদুল ইসলাম কাসমির মৃত্যুর পর তিনি সর্বসম্মতিক্রমে এর প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে ভারতীয় মুসলিমদের জন্য ইসলামি শরিয়া আইন সংরক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়ার লক্ষ্যে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড গঠিত হয়।

  • জনপ্রিয় কারী শায়খ আব্দুল্লাহ কামিল

মাত্র ৩৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন মিশরের জনপ্রিয় কারী শায়খ আব্দুল্লাহ কামিল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে নামাজে ইমামতি করার সময় ইন্তেকাল করেন তিনি। তিনি জন্মগতভাবেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছিলেন। ছোটবেলায় ব্রেইল পদ্ধতিতে পুরো কোরআন হিফজ করেন। এরপর ২০০৫ সালে আল-ফাইউম বিশ্ববিদ্যালয়ের দারুল উলুম কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ২০১৫ সালে তিনি আল-ফজর চ্যানেলে সম্প্রচারিত কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। মরহুম শায়খ আবদুল্লাহ চলতি বছরের রমজানে ২৪ বার পবিত্র কোরআন খতম করেছেন। গত বছর তিনি ২৮ বার খতম করেছিলেন।’

  • শায়েখ ইমাম মুহাম্মদ খলিল

মসজিদে নববীর সাবেক ইমাম শায়েখ কারি মুহাম্মদ খলিল ইন্তেকাল করেন ৮ মে (সোমবার)। শায়েখ কারি মুহাম্মদ খলিল ইসলামের প্রথম মসজিদ মসজিদে কুবার ইমাম হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন এক সময়। তিনি মসজিদে নববীতে তারাবি নামাজের ইমামের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। শায়খ মুহাম্মদ খলিল সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। তিনি ও তার ভাই মাহমুদসহ তার পরিবার থেকে দুজন মসজিদে নববীর ইমাম হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করছেন। তার ভাইও গত বছর ইন্তেকাল করেছেন। শায়েখ কারি মুহাম্মদ খলিল তার সুললিত তেলাওয়াতের কারণে শ্রোতাদের কাছে ব্যাপক সমাদৃত ছিলেন। শায়েখ কারি মুহাম্মদ খলিল ১৯৪০ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

  • শায়খ মুহাম্মদ আত-তাহির আয়াত আলজাত

শায়খ মুহাম্মদ আত-তাহির আয়াত আলজাত ১৯১৭ সালে আলজেরিয়ার বেজাইয়া প্রদেশের তামাকরাহ এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার দাদা শায়খ ইয়াহইয়া আইদালির তত্ত্বাবধানে পবিত্র কোরআন হিফজ সম্পন্ন করেন। এরপর সাইয়িদি আহমদ বিন ইয়াহইয়াহ উমালুর কাছে প্রাথমিক পড়াশোনা করেন। কনস্টানটিনোপলের কাছে বালাহমালাবির খানকা ও শায়খ ইবনে বাদিসের উচ্চতর আরবি ভাষা ও সাহিত্য, ফিকাহ, তাফসিরসহ গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে পড়েন। ইসলামের প্রচার-প্রসার, মালেকি ফিকাহের চর্চা ও বিস্তারের পাশাপাশি তিনি আমৃত্যু জাতীয় ফতোয়া কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৪ জুন (বুধবার) ১০৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন তিনি।

  • নকশবন্দি শায়খ আবদুল বাকি আল-হুসাইনি

তুরস্কের নকশবন্দি তরিকার শায়খ আবদুল বাকি আল-হুসাইনি ইন্তেকাল করেন ১৫ জুলাই (বুধবার) তিনি ছিলেন নকশবন্দি মানজিল তরিকার প্রবীণ শায়খ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর জানাজার ভিডিও ভাইরাল হয়। তাতে বিস্তীর্ণ স্থানজুড়ে বিপুল পরিমাণ মানুষকে জানাজার নামাজে অংশ নিতে দেখা যায়। শায়খ মুহাম্মদ রাশিদ আওরালের মাধ্যমে নকশবন্দি মানজিল জামাত প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের আদিয়ামান মানজিল গ্রামের দিকে সম্পৃক্ত করে এর নামকরণ করা হয়।

  • ইসলামী অর্থনীতিবিদ ড. আলি আল-সালুস

ইসলামী অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ শায়খ ড. আলি আল-সালুস ইন্তেকাল করেন ৮৯ বছর বয়সে। তিনি আরববিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ফিন্যান্স ও অর্থনীতি বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। সর্বশেষ তিনি দীর্ঘ ৪৩ বছর কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ফিকাহ ও উসুল বিষয়ক শিক্ষক ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন শায়খ মুস্তফা জায়েদ, শায়খ মুহাম্মদ আবু জাহরা, শায়খ মুস্তফা জায়েদ, শায়খ আলি হাসবুল্লাহ, শায়খ মুহাম্মদ আল-মাদানি ও শায়খ উমর আল-দাসুকি। ড. আলি আল-সালুস ইসলামী ফিকাহ, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ে বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন।

  • হাজী গুলজার আজমী

জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের আইনি সহায়তা কমিটির (লিগ্যাল এইড টিম) প্রধান জনাব হাজী গুলজার আজমী ইন্তেকাল করেন ২০ আগস্ট (শনিবার)। হাজী গুলজার আজমী জীবদ্দশায় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের লিগ্যাল টিমের প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। এসময় তিনি বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতারকৃত নিরপরাধ মুসলমানদের কারাদণ্ডের কবল থেকে উদ্ধার করেছেন।

  • শায়খ মুস্তফা আল-সাইরাফি

সিরিয়ার প্রসিদ্ধ আলেম ও দায়ী শায়খ মুস্তফা আল-সাইরাফি ইন্তেকাল করেন ২৬ আগস্ট (শনিবার)। সর্বশেষ তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভোগার পর তিনি কাতারের দোহায় মারা যান। তিনি ছিলেন সিরিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী আলেম। ইসলাম বিষয়ক আকর্ষণীয় বক্তব্য দিতেন তিনি। তিনি বিভিন্ন মসজিদে ইমাম ও ইসলাম প্রচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

  • গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ তাজুদ্দিন হামিদ আল-হিলালি

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ তাজুদ্দিন হামিদ আল-হিলালি মিসরে ইন্তেকাল করেন ৫ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার)। এর আগের দিন তিনি মক্কায় পবিত্র ওমরাহ পালন করে নিজ বাড়িতে ফেরেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের বিখ্যাত লাকেমবা মসজিদের ইমাম হিসেবে দীর্ঘ ৩১ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন।অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ ড. রাতিব জুনাইদ মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন। ১৯৮২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত লাকেমবা মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। এদিকে ১৯৬৯ সাল থেকে শায়খ জায়দান শারীরিক অসুস্থতার কারণে অস্ট্রেলিয়ার গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারছিলেন না। অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন অব ইসলামিক কাউন্সিল ১৯৮৮ সালে শায়খ আল-হিলালিকে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের গ্র্যান্ড মুফতি নিযুক্ত করে। মুসলিম কমিউনিটির সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ২০০৫ সালে শায়খ আল-হিলালিকে বর্ষসেরা মুসলিম ব্যক্তিত্ব হিসেবে ‘অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডস’ দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে তিনি লাকেমবা মসজিদের ইমামতি থেকে অব্যাহতি নেন।

  • মাওলানা সাইয়েদ শাহেদ আল-হাসানি

ভারতের প্রাচীনতম ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাজাহেরুল উলুম, সাহারানপুরের মহাপরিচালক মাওলানা সাইয়েদ শাহেদ আল-হাসানি ইন্তেকাল করেন ৬ অক্টোবর (শুক্রবার)। তিনি ছিলেন শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া কান্ধলভি (রহ.)-এর নাতি ও মাওলানা ইনামুল হাসান (রহ.)-এর জামাতা। মাজাহেরুল উলুম মাদরাসায় তিনি প্রথম শ্রেণি থেকে দাওয়ারায়ে হাদিস পর্যন্ত পড়াশোনা করেন এবং ১৯৭০ সালে সেখানে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৯৩ সাল থেকে তিনি মাদারাসাটির ‘আমিন আম’ (মহাপরিচালক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন অনন্য যোগ্যতার অধিকারী নিভৃতচারী একজন আলেম। মাজাহেরুল উলুম মাদরাসার উন্নতি ও অগ্রগতি এবং দ্বিনি ইলম বিস্তারে গ্রন্থ রচনা ও গবেষণায় তিনি সারা জীবন অতিবাহিত করেন। ভারতের বৃহত্তম মুসলিম সংস্থা অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড ও জমিয়ত উলামা হিন্দের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি।

তথ্যসংগ্রহ: পাথেয়সহ কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *