এমপিও’র দাবিতে অনড় শিক্ষকরা

এমপিও’র দাবিতে অনড় শিক্ষকরা

পাথেয় রিপোর্ট : বৃষ্টি উপেক্ষা করে এমপিওভুক্তির দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীত পাশে রাস্তায় লাগাতার অবস্থান করছেন নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারী ফেডারেশন। তাদের একটাই দাবি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। এমপিও না নিয়ে তারা ঘরে ফিরে যাবেন না।

আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর আগে গত ১০ জুন কর্মসূচি পালনকালে পুলিশ বাধা দেয়। সংগঠনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে সেসময় পুলিশ গ্রেফতার করে এবং তিন ঘণ্টা পর ছেড়ে দেয়। রাস্তায় অবস্থানরত শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য নানারকম ভয়ভীতি দেখানো করা হয়।
ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, ‘প্রতিদিনই পুলিশের বাধার মুখে আমরা লাগাতার অবস্থান করে যাচ্ছি। ঈদের দিন সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে  ঈদের নামাজ আদায় করে আমরা মিছিল করেছি। নামাজের মোনাজাতে শিক্ষকদের কান্নার রোল পড়ে যায়। তারপরও এখনও  মন্ত্রণালয়ের কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলতে আসেননি।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা শপথ নিয়েছেন যে, এমপিও’র জন্য অর্থ বরাদ্দ না হলে রাজপথেই আত্মাহুতি দিতে পিছপা হবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ আট বছর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্তির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা ১৫-২০ বছর যাবৎ বিনা বেতনে চাকরি করছেন। অনেকের আবার চাকরি আছে আর ৫-১০ বছর। এ কারণে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আর অপেক্ষায় না রেখে, সরকারের বর্তমান মেয়াদে এই সমস্যার সমাধান আমরা প্রত্যাশা করি। বাজেটে বরাদ্দ যথেষ্ট না হলেও আমরা কম বেতন নিতে রাজি আছি। পর্যায়ক্রমে কয়েক বছরে বেতন সম্পূর্ণ করা হলে, তাতেও আমাদের আপত্তি নেই। আমরা আশা করি, এই সরকারের আমলেই এমপিওভুক্তির কাজ সম্পন্ন হবে। এমপিওভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না থাকলে আমাদের বাঁচা-মরার মানবিক আবেদন নিয়েই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান করবো।’
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিনয় ভূষণ রায় বলেন, ‘আমাদের আরও  শিক্ষক এখানে এসে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। আমরা দ্রুত এমপিওভুক্তির দাবি জানাই। আমাদের শিক্ষকরা এখানে দিনরাত অবস্থান করবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি আদায় না হবে, আমরা ঘরে ফিরে যাবো না।’ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টানা আট  দিন অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর গত রবিবার বিকালে   লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান বিনয় ভূষণ রায়।
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা নেই। আমাদের জন্য বাজেটে কোনও বরাদ্দ রাখা হয়নি। এতে আমরা হতাশ।’

বিনয় ভূষণ রায় বলেন,‘এরই ম‌ধ্যে আমরা জানতে পেরেছি, শিক্ষামন্ত্রী আগের বারের মতোই বলেছেন, বাজেটে টাকা না থাকলেও পর্যায়ক্রমে এমপিওভুক্ত করা হবে। কিন্তু আমরা তার এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি। সুনির্দিষ্ট কোনও গেজেট প্রকাশ করা না হলে আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’
রংপুরের বদরগঞ্জের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক লাবলু মণ্ডল। এমপিওভুক্তির দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছেন তিনি। ঈদে বাড়ি যাননি। লাবলু জানান, ১৫ বছর ধরে কোনও বেতন পান না তিনি। টিউশনি করে, জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করে দিন জাপন করছেন তিনি। কিন্তু এভাবে কতদিন করতে পারবেন বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
উল্লেখ্য,এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার কর্মসূচি পালন করেন। নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ডাকে তখন টানা অবস্থান ও অনশনের একপর্যায়ে এ বছরের ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান সেখানে গিয়ে আন্দোলনকারীদের  আশ্বাস দেন। এরপর শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, সেখানে নতুন এমপিওভুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি। এবারের বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের জন্য ৫৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে খাতওয়ারি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ। বাজেট বরাদ্দে প্রাথমিক বিদ্যালয়, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামো নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

___________

patheo24/105

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *