পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া জানান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন। আজ ওবায়দুল কাদের শিক্ষকদের সময় দিয়েছেন বলেও জানান এই শিক্ষক নেতা। তবে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলবে।
শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের ফলে তিন দিন থেকেই কার্যত অচল হয়ে আছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করে কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান নেন। অন্যদিকে ‘কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। ফলে শিক্ষার্থীরা বিভাগ, হল, ইনস্টিটিউট ও প্রশাসনিক ভবনের কোথাও কোনো ধরনের সেবা পাচ্ছে না। প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে অনেক শিক্ষার্থী সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন।
নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, ‘আপনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে একটু কথা বলুন।’ আমি তার কাছে আমাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরলাম। তিনি বললেন, ‘আপনারা আরো দুই-তিন জন শিক্ষকসহ সন্ধ্যায় আসুন।’ আমি বললাম, ‘আমার ফেডারেশন আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আছে।’ তিনি বললেন, ‘ঠিক আছে।’ তবে বেশি লোকজন না নিয়ে যেতে অনুরোধ করেছেন, যাতে কথা বলতে সুবিধা হয়। এখন আমরা নিজেরা বসে সিদ্ধান্ত নেব।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মঙ্গলবার শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনকে ‘অযৌক্তিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, ‘যারা প্রত্যয় স্কিম করেছেন, তারা হয়তো মন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছেন। তিনি তার জায়গা থেকে কথা বলেছেন। আমরা যখন তাকে বোঝাতে পারব, তখন হয়তো তিনি আমাদের সঙ্গে একমত হবেন। তার বক্তব্যটি আমরা গ্রহণ করিনি।’
আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে এই শিক্ষক নেতা গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, আমরা এখনো আলোচনার সময় নির্ধারণ করিনি। আমরা আশাবাদী কাল (বৃহস্পতিবার) সকালে আলোচনায় বসতে পারব। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও আমাদের আলোচনা বসার কথা রয়েছে।
এদিকে সকালে অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, আমরা তিন দফা দাবি জানিয়েছি। প্রত্যয় স্কিম বাতিল করতে হবে, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন করতে হবে। দাবিগুলো যদি মেনে নেওয়া না হয় তাহলে আমরা লাগাতার কর্মবিরতি চালিয়ে যাব।
এদিকে বুধবার সকালে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এ সময় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর পদত্যাগ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মকে কূপমণ্ডূকতা বলেও আখ্যা দেন তারা।
কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক এবং ঢাবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল মোতালেব বলেন, আমরা বৈষম্যমূলক প্রত্যয় স্কিম চাই না। এ সময় দাবি না মানা পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির মনের জোর কমে গেছে, তাদের মুখের জোর বেড়ে গেছে। মানুষের শক্তি যত কমে মুখের বিষ ততই উগ্র হয়ে যায়। এখন তারা কোটা আন্দোলন এবং শিক্ষক আন্দোলনের ওপর ভর করেছে। কিন্তু পরের কাঁধে ভর দিয়ে আন্দোলন করে জয়ী হওয়া যায় না। গতকাল বুধবার বিকেলে আওয়ামী লীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাভারের হেমায়েতপুর বাসষ্ট্যান্ডে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি।